নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের হাওর অঞ্চলকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করার দাবি জানিয়ে বিএনপি বলেছে, উজানের ঢল ও ভারি বর্ষনে হাওর অঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সরকার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এমনকি কোনো মন্ত্রীও ওই এলাকায় যাননি। সেখানে দ্রুত ত্রাণ সহায়তা দেয়ার দাবি জানিয়েছে বিএনপি। আজ সকালে মঙ্গলবার সকালে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আরমগীর বলেন, বাংলাদেশে খুবই নীরবে এক বিশাল এবং ভয়ঙ্কর দুর্যোগ ঘটে গেছে এপ্রিল মাসের শুরুতে। বিস্তৃত হাওর অঞ্চলের বিশেষ সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, নেত্রকোনার হাওর অঞ্চলের সাড়ে তিন লাখ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, সেখানকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকগোষ্ঠী খুবই মানবেতর জীবন যাপন করছেন। কিন্তু সরকারের লোক দেখানো সহায়তা অপ্রতুল। আসলে বর্তমান সরকার জনগণের দ্বারা নির্বাচিত না হওয়ায় জনগণের কাছে তাদের দায়বদ্ধতা নেই। মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি এ ব্যাপারে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সেখানে পাশে দাঁড়ানোর কথা বলা হয়। সেই নির্দেশ মোতাবেক আমি নেত্রকোনা ও সুনামগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে সাধ্যমতো সহায়তা করেছি। স্থানীয় নেতৃবৃন্দকে পাশে দাঁড়ানোর কথা বলেছি।

তিনি বলেন, হাওর অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা জানিয়েছেন ফসল নষ্ট হওয়ায় তারা মানবেতর জীবন যাপন করছেন।বিএনপি মহাসচিব অবিলম্বে ক্ষতিগ্রস্ত হাওর অঞ্চলের পুরনো কৃষি ঋণ মওকুফ, বিনামূল্যে সার, বীজ বিতরণ সহ কয়েকটি দাবি জানান।অবিলম্বে ক্ষতিগ্রস্ত হাওর অঞ্চলের পুরনো কৃষি ঋণ মওকুফ, বিনামূল্যে সার ও বীজ বিতরণ সহ কয়েকটি দাবি জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ আলমগীর, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সাখাওয়াত হোসেন জীবন,ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, চৌধুরী আবদুল্লাহ আল ফারুক, এটিএম আবদুল বারী ড্যানি, ছাত্রদলের সহসভাপতি নাজমুল হাসান প্রমুখ। নেত্রকোনো জেলা বিএনপির সভাপতি আশরাফ উদ্দিন খান, সাধারণ সম্পাদক ডা. আনোয়ারুল হন, সাংগঠনিক মনিরুজ্জামান ‍দুদু, প্রচার সম্পাদক সেলিম আহমেদ সহ নেত্রকোনা জেলা বিএনপির নেতারা।

প্রেস ব্রিফিং:-মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মহাসচিব-বিএনপি

সুপ্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ, আস্সালামু আলাইকুম।
আমাদের আমন্ত্রণে এই প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত হওয়ার জন্য সকলকে ধন্যবাদ। আপনারা জানেন, এপ্রিল মাসের ৪/৫ তারিখ থেকে উজান থেকে নেমে আসা পানির ঢল, অকাল, অতিবৃষ্টি এবং বিভিন্ন বাঁধ সংস্কার না করার ফলে ভেঙ্গে যাওয়ায় নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ জেলার বিভিন্ন হাওড় এলাকার লক্ষ লক্ষ হেক্টর জমির ফসল বিনষ্ট হয়।
*সাধারণত বৈশাখ মাসের মাঝামাঝি সময়ে হাওড় এলাকায় বন্যা হলেও এ বছর নির্দিষ্ট সময়ের আগে হাওড় এলাকায় বন্যা হওয়ায় কৃষকরা তাদের বছরের একমাত্র ফসল হারিয়ে এখন দিশেহারা।

*এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সিলেট জেলার সাড়ে তিন লক্ষ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণভাবে বিনষ্ট হয়েছে। যাতে প্রায় ১০ লক্ষ টন চাল উৎপাদন হতো। এসব জেলায় লক্ষ লক্ষ পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে চরম মানবিক বিপর্যয়ের সম্মুখিন হচ্ছে।

*হাওড় এলাকায় বন্যায় ফসল বিনষ্টের সংবাদে উদ্বিগ্ন হয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের পাশে দাঁড়াবার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। পরবর্তীতে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায়ও হাওড় অঞ্চলের দুর্দাশাগ্রস্থ মানুষের পাশে দাঁড়াবার জন্য দলের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি দল প্রেরণের সিদ্ধান্ত হয়।

*বিএনপি চেয়ারপার্সনের নির্দেশে আমি দলীয় নেতৃবৃন্দকে সাথে নিয়ে গত ১৫ এপ্রিল, ২ বৈশাখ, রোজ শনিবার নেত্রকোনা জেলার হাওড় অঞ্চল পরিদর্শন করি। নেত্রকোনার ক্ষতিগ্রস্থ হাওড় অঞ্চল পরিদর্শনে যাওয়ার সময় সুনামগঞ্জ জেলার ধরমপাশা উপজেলার বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্থ কয়েকটি হাওড়ের কিছুঅংশও পরিদর্শন করি।

*নেত্রকোণা জেলার মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুড়ি, কলমাকান্দা, মদনসহ বিভিন্ন উপজেলার বিস্তির্ণ এলাকায় হাওড় অঞ্চলে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়।

*পরিদর্শনকালে আমি নেত্রকোণার মোহনগঞ্জ থেকে স্পিডবোট যোগে উপজেলার বিস্তির্ণ হাওড় এলাকার গাগলাজুড় বাজার, লিপ্সা বাজার, বোয়ালীবাজার, খালিয়াজুড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়ন বাজারে নেমে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের সাথে কথাবলি। তারা আমাকে জানিয়েছেন তাদের সম্পূর্ণ ফসল বিনষ্ট হওয়ায় তারা অর্ধহারে-অনাহারে অত্যন্ত মানবেতর অবস্থায় দিন যাপন করেছেন। সরকারী ত্রাণ তৎপরতা লোক দেখানো এবং অপ্রতুল। তারা কিভাবে খেয়ে পড়ে বাঁচবে। কিভাবে ঋণ পরিশোধ করবে, তা ভেবে অত্যন্ত মানবেতর দিন কাটছে। স্প্রিটবোট যোগে বিভিন্ন গ্রামের পাশ দিয়ে হাওড় এলাকায় যাওয়ার সময় সেখান থেকে হাজার হাজার নারী-পুরুষ-শিশুর আহাজারিতে পরিবেশ ভারী হযে ওঠে। আমরা আমাদের সাধ্যমত ত্রাণ সামগ্রী দিয়েছি।

* সাধারণত ব্যাংক ও বিভিন্ন এনজিও সহ মহাজনী ঋণ নিয়ে হাওড় অঞ্চলের কৃষকরা তাদের ফসল উৎপাদন করে। এবার ফসল সম্পূর্ণ বিনষ্ট হওয়ায় ঋণের চাপে এবং পরিবার পরিজনের অনিশ্চিত ভবিষ্যতে দুঃচিন্তায় যেন তাদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে। নেত্রকোণায় এপর্যন্ত একজন আত্মহত্যা এবং হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে একজনের মৃত্যুর খবরও পাওয়া গেছে।

* সরকারী ত্রাণ তৎপরতা একেবারেই অপ্রতুল এবং লোক দেখানো। খোলা বাজারে চাল ও আটা বিক্রির কথা বলা হলেও তা দৃশ্যমান নয় এবং এনিয়ে চরম দুর্নীতি হচ্ছে বলে শোনা গেছে। বর্তমান সরকার জনগণ দ্বারা নির্বাচিত নয় বলেই জনগণের প্রতি এদের কোন দায়বদ্ধতা নেই। আর সে কারণেই তারা হাওড় অঞ্চলের জনগণের দুর্দশায় নির্বিকার।

* ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাকে অবিলম্বে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি।

* প্রশাসনের উদ্যোগে দলমত নির্বিশেষে সকলকে নিয়ে কমিটি গঠনের মাধ্যমে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থদের নির্ভুল এবং দলীয় প্রভাবমুক্ত তালিকা করে আগামী ফসল না উঠা পর্যন্ত ত্রাণ তৎপরতা চালানোর দাবি করছি।

* পুরাতন কৃষি ঋণ মত্তকুফ করার দাবি জানাচ্ছি।

* আগামী ফসলের জন্য সুদবিহীন নতুন কৃষি ঋণ দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।

* আগামী ফসল উৎপাদনের জন্য কৃষকদের মাঝে বিনামুল্যে সার,বীজ, কিটনাশক, তেল সহ কৃষি উপকরণ দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।

* এলাকায় ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধগুলো আগামী ফাল্গুন মাসের আগেই পুনঃনির্মাণ/সংস্কার করতে হবে। সেখানে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নিতে হবে। এখানে উল্লেখ্য যে, ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকারের আমলেই প্রথম সরকারী ভাবে হাওড় অঞ্চলে ফসল রক্ষার জন্য বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এর পর থেকেই প্রতি বছর ফাল্গুন মাসের আগেই বাঁধগুলো সরকারী খরচে সংস্কার করা হতো। কিন্তু এবছর বাঁধগুলো দুর্নীতি ও লুটপাটের কারণে যথাযথভাবে সংস্কার না হওয়ায় উজানের পানির ঢলে দুর্বল বাঁধগুলো ভেঙে গিয়ে ফসল নষ্ট করে।

* একইভাবে আগামী বোরো ফসল উঠার আগেই এলাকার নদীসমুহের যথাযথ ড্রেজিং করার দাবি জানাচ্ছি।

* ভারত থেকে আগত বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ৫৪টি অভিন্ন নদীসমুহে পানি প্রবাহের ন্যায্য চুক্তি করতে হবে। উজানে বাঁধ দিয়ে ভারত এসব নদীর পানি নিয়ন্ত্রণ করছে। যার ফলে বর্ষা মৌসুমে পানি ছেড়ে দেয়ায় বাংলাদেশের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। অন্যদিকে শুষ্ক মৌসুমে পানি আটকিয়ে দিচ্ছে।

নিঃশর্ত মুক্তির দাবী করছি:
বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান জনাব ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাইদুর রহমান বাচ্চু, নাটোর জেলা বিএনপি নেতা বাবলু চেয়ারম্যান, আজিজুর রহমান মেম্বার এবং নওশাদ আলী মাষ্টার সহ আটককৃত বিএনপি নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবী।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলায় জাতীয়তাবাদী যুবদল ও ছাত্রদলের কর্মী সভায় পুলিশ বিনা উস্কানীতে হামলা চালায়। পুলিশের লাঠিচার্জে যুবদলের সদস্য সচিব শরিফুল ইসলাম স্বপন, যুগ্ম আহবায়ক মনির হোসেন বাক্কু, রবিঊল হোসেন ও ছাত্রদল নেতা মাসুদুর রহমান দিপু, গোলাম মোস্তফা সহ ৩০ জনের অধিক নেতাকর্মী গুরুত্বর আহত হয়। এছাড়া নেতাকর্মীদের বহনকৃত মাইক্রোবাস, বাস, পিকআপ পুলিশ আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এ হামলার নিন্দা জানাচ্ছি। সারাদেশে নতুন করে সরকার নেতাকর্মী সমর্থকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিচ্ছে, গ্রেফতার করছে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn