বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগাম বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হাওর এলাকায় কৃষি ঋণের সুদের হার অর্ধেক এবং ঋণ আদায় আপাতত বন্ধ রাখার ঘোষণা দিলেও, স্থানীয় সংস্থাগুলো বলছে যে কৃষকরা মহাজনদের কাজ থেকে উচ্চসুদে ঋণ নেন, তাদের কি হবে? বাংলাদেশে এবারের আগাম বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোর একটি সুনামগঞ্জ পরিদর্শন করে ত্রাণ বিতরণের সময় দেয়া বক্তৃতায় হাওরের অধিবাসীদের আশ্বস্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন সংকট মোকাবেলায় যতদিন প্রয়োজন ততদিনই খাদ্য সহায়তা দেবে সরকার। পাশাপাশি ব্যাংক ও এনজিও থেকে নেয়া ঋণের বিষয়েও কথা বলেছেন তিনি। তিনি বলেন, “যারা ব্যাংকের ঋণ নিয়েছেন তাদের সুদের হার অর্ধেকে নামিয়ে দিচ্ছ। আদায়টাও স্থগিত করছি। আপনাদের কাছে কোন ঋণ আদায় করা হবেনা। তবে অনেক এনজিও ঋণ দিয়েছে। তারা সুদের জন্য চাপ দিচ্ছে। মানুষের দুর্যোগ যখন হয় তখন এই চাপ না দেয়াই ভালো। কিন্তু কত কৃষক ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমানো বা স্থগিত রাখায় সরাসরি উপকৃত হবে তার সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তর মেলেনি জেলা প্রশাসনের কাছে। জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম বলছেন ইতোমধ্যেই চাল বিতরণসহ অনেক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রীর এনজিও ঋণের বিষয়েও কথা বলেছেন। এতে করে কৃষকদের বড় উপকার হবে বলে মনে করেন তিনি।

ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে চাষাবাদ করেছেন এমন একজন কৃষক মামুনুর রহমান বলছেন ব্যাংক ঋণের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা কার্যকর হলে সেটি তাদের জন্য স্বস্তির বিষয় হবে। তবে এ নিয়ে ভিন্নমতও রয়েছে। যেমনটি বলছিলেন ধান চাষের জন্য মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নেয়া কৃষক মিল্লাত হোসেন। তিনি বলেন, “আমরা যখন গৃহস্থি করি তখন ব্যাংক ঋণ পাইনা। মহাজনের কাছ থেকে টাকা নেই। প্রতি মনে ৫০০ টাকা দরে এনে দু মন ধান দিতে হয়। গতবারও ফসল পাইনি, এবারও নাই। গতবার গরু বিক্রি করে শোধ করেছিলাম, এবার গরুও নাই হাওর অঞ্চল নিয়ে কাজ করে এমন সংস্থাগুলো বলছে ব্যাংক বা এনজিও ঋণের সুদ কমানোর সিদ্ধান্ত ভালো, তবে এ সুবিধার আওতার বাইরেই থাকবেন মিল্লাত হোসেনের মতো বেশিরভাগ কৃষক। বেসরকারি সংগঠন পরিবেশ ও হাওড় উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাশ্মীর রেজা বলছেন কৃষকদের বাঁচাতে হলে দাদন বা মহাজনের কাছ থেকে উচ্চ সুদে নেয়া ঋণ পরিশোধে সহায়তা করতে হবে।

তিনি বলেন, ” হাওরাঞ্চলে ব্যাংক থেকে এনজিও ঋণ বেশি। তার চেয়েও বেশি হলো মহাজনের কাছ থেকে নেয়া যেটিকে দাদন বলা হয়। এ দাদনের সংখ্যাই বেশি। শুধু ঋণের সুদ মওকুপ করলে কিছু লোক উপকৃত হবে তবে বড় অংশই বাইরে থেকে যাবে”। জেলা প্রশাসনের হিসেব অনুযায়ী শুধু সুনামগঞ্জেই প্রায় তিন লাখ কৃষক পরিবার এবারের এই বন্যায় নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যাদের মধ্যে বেশিরভাগই মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছেন যা ফসল দিয়ে শোধ করবার কথা। আবার সেটি এবার শোধ না করলে আগামী বছরে ঋণও জুটবেনা তাদের। এমন পরিস্থিতিতে খাদ্য সহায়তা বা বিনামূল্যে সার বীজ দেয়ার ঘোষণায় তারা কতটা লাভবান হোন, সেটিই এখন দেখার বিষয়।বিবিসি

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn