হাওর এলাকার শিক্ষার্থীদের লেখা পড়া হুমখির মুখে
এম এ রাজ্জাক,তাহিরপুর ::
তাহিরপুর উপজেলার হাওর এলাকার বোরো ফসল অসময়ে পানিতে তলিয়ে যাওয়ার ফলে হুমখির মুখে পড়েছে হাওর এলাকার শিক্ষার্থীদের লেখা পড়া। প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা কোন রকমে লেখাপড়া চালিয়ে গেলেও মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের লেখা পড়া মারাত্মক হুমকিতে পড়েছে। এ উপজেলার হাওরগুলোতে বারবার ফসল হানির পর দুই বেলা দুই মুঠো খাবার জুটানো যেখানে অসম্ভব, সেখানে অভিভাবকরা কিভাবে জোগান দেবেন ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা যেমন নানা উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন তেমনি শিক্ষার্থীরাও বাবা – মায়ের এ দূরাবস্থা দেখে তাদের জীবনের ভবিষ্যৎ অন্ধকার দেখছেন। হাওর তলিয়ে যাওয়ার পর পরই স্থানীয় সাংসদ সদস্য ঘোষনা দিয়েছিলেন হাওর এলাকার বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের খরচ তিনি ব্যাক্তিগত তহবিল থেকে বহন করবেন। কিন্ত গত ৭ মাস যাওয়ার পরও এখন পর্যন্ত তাহিরপুর উপজেলার কোন বিদ্যালয়ে সংসদ সদস্য শিক্ষা খাতে খরচ বহন না করায় বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও অভিবাকরা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
তাহিরপুর শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা য়ায়, তাহিরপুর উপজেলায় ১৩১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এতে শিক্ষার্থী সংখ্যা রয়েছে ৩৭ হাজারের বেশি। ২৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা রয়েছে। এখানে শিক্ষার্থী সংখ্যা রয়েছে প্রায় ১২ হাজার। এ উপজেলায় জয়নাল আবেদীন ও বাদাঘাট ডিগ্রি কলেজ নামে দুটি মহাবিদ্যালয় রয়েছে। তাতে শিক্ষার্থী রয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩ শত। প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে সরকারিভাবে বিনামূল্যে বই বিতরণ করা হলেও শিক্ষা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র জোগান দিতে পারছেন না অভিভাবকরা। চলতি বছরে অকাল বন্যায় উপজেলার ২৩টি ছোট – বড় হাওরের ফসল পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকরা পড়েন মহা বিপাকে। এ উপজেলাটি কৃষক নির্ভর হওয়ায় কৃষক পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস হল বোরো ফসল। বোর ফসল কেন্দ্র করেই চলে হাওর এলাকার কৃষকদের জীবন জীবিকা। বর্তমানে কৃষক পরিবারের ঘরে পর্যাপ্ত পরিমান কোন খাদ্য নেই। খাদ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে সব কৃষক পরিবারই এখন দিশেহারা। সরকারের বিভিন্ন সহায়তা ক্ষতিগ্রস্থ মানুষ কিছুটা পেলেও তা প্রয়োজনীয় তুলনায় অনেক কম। ফলে দিন দিন এর প্রভাব পড়ছে কৃষক পরিবারের শিক্ষার্থীদের উপর।
উপজেলা মানুষের দাবি শুধু খাদ্য সহায়তা নয়, শিক্ষা সহায়তার ব্যপারেও সরকারকে এগিয়ে আসা প্রয়োজন। এই মহুত্বে হাওরে শিক্ষা সহায়তা না পেলে হাওরপাড়ের স্কুল – কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের লেখা পড়া হুমকির মুখে পড়বে। ইতিমধ্যে শিক্ষা ক্ষেত্রে সহায়তা না পেয়ে জীবিকার তাগিদে পিতা – মাতার সাথে কাজের সন্ধানে এলাকা ছেড়েছে অনেক শিক্ষার্থী।উপজেলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করে বলেন, এমপি মহোদয় বলেছিলেন তিনি ব্যাক্তিগত ভাবে শিক্ষার খরচ বহন করবেন। এ বিষয়ে তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকতার নিকট একটি ডিও লেটারও দিয়েছিলেন । কিন্ত এখন পর্যন্ত এ উপজেলার কোন একটি বিদ্যালয়ে একটি টাকাও দেননি।উপজেলার জনতা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কাজল দাস জানায়, বোর ফসল সঠিক সময়ে ঘোলায় তুলতে না পেরে সে এখন আর বিদ্যালয়ে যেতে পারছেনা। পরিবারের খাবার জোগাড় করতে সে এখন বিভিন্ন স্থানে কাজ করছে।
উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের মন্দিয়াতা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সানজু মিয়া বলেন, জীবিকার তাগিদে বিদ্যালয়ে পড়ুয়া অনেক শিক্ষার্থী তার বাবা-মায়ের সাথে কাজের সন্ধানে শহরে চলে গেছে। তিনি আরও বলেন, অনেক পরিবার শিক্ষার খরচ দিতে না পারায় শিক্ষার্থীরা এখন আর আগের মতো বিদ্যালয়ে আসছেনা। সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন জানান, তাহিরপুর উপজেলার পাশ^বর্তী মধ্যনগর থানার কিছু বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যক্তিগত তহবিল থেকে অর্থ দেয়া শুরু করেছি। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সুনামগঞ্জ ১ আসনের সবগুলো বিদ্যালয়ে প্রতিশ্রুতি মোতাবেক নগদ অর্থ দেয়া হবে।