হাওর ডুবির নেপথ্যের কাড়িগড় ইউপি চেয়ারম্যান উধাও!
হাবিব সরোয়ার আজাদ-
হালির হাওরের ৬৮ কোটি টাকার বোরো ফসল ডুবিতে হাজারো কৃষক পরিবারে আর্তনাদ’
জামালগঞ্জের হালির হাওরের প্রায় সাড়ে ৫ হাজার হেক্টরের ৬৮ কোটি টাকার বোরো ধান ডুবিয়ে বেরীবাঁধ মেরামত সংস্কারের ৪টি পিআইসির বরাদ্দের আগাম ৩১ লাখ টাকা বিল ছাড় করিয়ে নিয়ে বাঁধের কাজ অসমাপ্ত রেখেই গাঁ ঢাকা দিয়েছেন এক ইউপি চেয়ারম্যান ও তার পিআইসর লোকজন। ওই গুণধর ইউপি চেয়ারম্যানের নাম অসীম চন্দ্র তালুকদার। তিনি জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার বেহেলী ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান ও এক সময়ের তাহিরপুরের কয়লা আমদানিকারক একটি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার ছিলেন।’
জানা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে ইউপি চেয়ারম্যান হওয়ার সুবাধে জামালগঞ্জের সর্ববৃহৎ হালির হাওরের ৫টি পিআইসির প্রকল্পের বিপরীতে ৪৮লাখ ৫ হাজার ৬২৫ টাকা ও পাশ্ববর্তী মহালিয়া হাওরে জন্য ৯ লাখ ৬১ হাজার ৯৩৬ টাকা সহ মোট ৫৮ লাখ ১৬ হাজার ৫৬১ টাকা বরাদ্দ বাগিয়ে নেন বেহলী ইউপি চেয়ারম্যান নিজেই। ওইসব প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটিতে হরিলুট ও ফাইল ওয়ার্ক করতে নিজে একটি প্রকল্পের পিআইসির সভাপতি থেকে অন্য ৪টি প্রকল্পে তার প্রতিভু ও নিজের পরিবারের ভাই, ভাতিজা চাচা ও ঘনিষ্টজনদের অন্তুর্ভুক্ত করেন চেয়ারম্যান।’ পিআইসির প্রকল্প বাস্তবায়ন ২৮ ফেব্রয়ারীর মধ্যে সময় বেঁধে দেয়া হলেও চেয়ারম্যান ও তার লোকজন কচ্ছপ গতিতে বাঁেধের কাজ চালিয়ে গেছেন।’ অপেক্ষায় ছিলেন ওই চেয়ারম্যান প্রকৃতি অনুকুলে থাকলে নামকাওয়াস্তে বাঁধের কাজ করে প্রকল্পের বরাদ্দের সিংহভাগ টাকায় নিজের থলে ভারী করবেন। কিন্তু বিধি বাম শেষ রক্ষা হয়নি হালির হাওরের বোরো ধানের। এদিকে গত ৩ এপ্রিল হালির হাওর ডোবার পর কৃষকদের রোশানাল থেকে নিজেকে রক্ষায় বাড়ি থেকেও গাঁ ঢাকা দিয়েছেন ওই গুণধর চেয়ারম্যান।’
জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তর ও সুনামগঞ্জ পাউবোর একটি দায়িত্বশীল সোমবার জানান, জামালগঞ্জের হালির হাওরের ৫টি প্রকল্পের বিপরীতে ১৪ লাখ ৯৭ হাজার ২৩টাকা, ১৪ লাখ ৮২ হাজার ৮৪৬ টাকা, ১০ লাখ ৪২ হাজার ৮২১ টাকা, ৮ লাখ ৩১ হাজার ৯৩৫ টাকা, ও মহালিয়ার হাওরের আরেকটি প্রকল্পে চেয়ারম্যান নিজে সভাপতি থেকে ৯ লাখ ৬১ হাজার ৯৩৬ টাকা বাগিয়ে নিয়েছেন। স্থানীয় কৃষকরা জনিয়েছেন পাউবোর সাথে আতাত করে গড়ে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার কাজ করে নিজেদেরকে গুটিয়ে নেন বাঁধের কাজ থেকে ওই চেয়ারম্যান ও তার পিআইসির লোকজন।
পিআইসির সভাপতি হিসাবে চেয়ারম্যান অসীম, তার প্রতিভু অজিত রায়, সুফিয়ান, মনু মিয়া ও রাশেদা আক্তারকে দিয়ে প্রকল্প আর বেরীবাঁধের কাজ নিয়ে হরিলুট চালিয়েছেন। অপরদিকে পাউবোর দানব খ্যাত নির্বাহী প্রকৌশলী আফসার উদ্দিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে বাঁধ’র অগ্রগ্রতি প্রতিবেদনে বিগত ৮ মার্চ ৫০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে হাওর ডুবির আগেই আগাম প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন।’ টানাবৃষ্টিতে হালির হাওরের ৫টি পয়েন্ট যখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠে তখন থেকেই, উপজেলা প্রশাসন ও হাওর পাড়ের কৃষকরা চেয়ারম্যান ও তার পিআইসির লোকজনকে বাঁেধর কাজ দ্রুত শেষ করার তাগিদ দিয়ে আসলেও চেয়ারম্যান তাতে কোন সায় দেননি বলে অভিযোগ উঠেছে।’পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজন বাঁশ খুটি ও মাটির বস্তা ফেলেও হাওরের ফসল রক্ষা করতে পারেননি।্ গত ৩ এপ্রিল সোমবার মধ্যরাতে হালির হাওরের কালিবাড়ি বাঁধ সহ ৫টি বাঁেধর পয়েন্ট দিয়ে পানি ডুকে আবাদকৃত সাড়ে ৫ হাজার হেক্টরের বোরো ধান পানিতে তলিয়ে যায়।’ উপজেলা কৃষি অফিসার ড. সাফায়াত আহমদ সিদ্দীকী সোমবার বলেন. ঘালির হাওর ডুবির কারনে কৃষকদের প্রায় ৬৮ কোটি টাকার চালের সমপরিমাণ উৎপাদন যোগ্য ধান পানিতে তলিয়ে গিয়ে নষ্ট হয়েছে। তিনি আরো বলেন, হাওর ডুবির আগেই হাওওে বাঁধ পরিদর্শনে গিয়ে দেখা গেছে পানি উন্নয়ন বোর্ডেও অগ্রগতি প্রতিবেদনের সাথে বাঁধর কাজের বাস্তবর সাথে কোন মিল নেই। ’
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের হালির হাওরের বেরীবাঁধ কাজের তদারককি অফিসার উপ সহকারি প্রকৌশলী আলী রেজা সোমবার বলেন, হালির হাওরের ৪টি পিআইসির কাজ ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অসীম বাবু নিজেই করিয়েছেন তার পিআইসির লোকজন দিয়ে কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার পর বার বার আমরা উনাকে ও উনার পিআইসির লেঅকজনকে বাঁধের কাজ সমাপ্ত করার জন্য তাগিদ দিলেও তারা তাতে সায় দেননি কেউ ফোন করলেও তারা গত কয়েকদিন ধরেই ফোন কল রিসিভ করছেন না এমনকি এখন নাকি চেয়ারম্যান নিজের বাড়িতেও নেই।’ হালির হাওরের ৪টি প্রকল্পের বরাদ্দের বিপরীতে ৩১ লাখ টাকা বিলও ইতিপুর্বে ছাড় করিয়ে নিয়েছেন চেয়ারম্যান এবং তার লোকজন। ’ এ ব্যাপারে জামালগঞ্জের বেহেলী ইউপি চেয়ারম্যান অসীম চন্দ্র তালুকদারের বক্তব্য জানতে গত কয়েকদিন ধরে দফায় দফায় তার ব্যাক্তিগত মুঠোফোনে (০১৭১৭-৮৪৭৮৯৩) কল করলেও ফোনটি বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য নেয়া যায়নি। সোমবার ফের দুপুর থেকে সন্ধা পর্য্যন্ত ওই মুঠোফোনে কল করলেও তা বন্ধ পাওয়া গেছে। ’
জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রসুন কুমার চক্রবর্তী সোমবার বলেন, পাউবোর অগ্রগতি প্রতিবেদনে অনেকটা বাড়িয়ে লিখা হয়েছে হালির হাওরের সরজমিনে বাঁধের কাজ পরিদর্শনে গিয়ে দেখা গেছে বাঁধগুলোর কাজ ৪০ ভাগের মত সম্পন্ন হয়েছে তবে সময় মত বাধের কাজ সম্পন্ন হলে এক হাওরেই ৬৭ কোটি টাকার ধান ডুবত না।’