হোয়াইট হাউসে ক্ষমতার দাপট নিয়ে দ্বন্দ্ব
তালেব রানা- হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের পরের ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রতিযোগিতা শুরু হয় মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যেই। চিফ অব স্টাফ রিন্স প্রিবাস, চিফ স্ট্রাটেজিস্ট স্টিভ ব্যানন এবং ট্রাম্পের জামাই জ্যারেড কুশনারের লড়াই ছিল চিফ অব স্টাফের প্রকৃত ক্ষমতা ধরে রাখা। আর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেই চাইছিলেন না একক কাউকে এই দায়িত্ব অর্পণ করতে। অন্যদিকে এই দ্বন্দ্বের বিপরীতে একেবারেই নির্লিপ্ত ছিলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে নিয়ে লেখা ‘ফায়ার এন্ড ফিউরি:ইনসাইড দি ট্রাম্প হোয়াইট হাউস’ বইতে এসব তথ্য উঠে এসেছে। বইয়ের ‘অর্গ চার্ট’ অধ্যায়ে লেখক লিখেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর হোয়াইট হাউসে তিন ব্যক্তির মধ্যে ক্ষমতা ধরে রাখার প্রতিযোগিতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। হোয়াইট হাউসের নির্বাহী দফতর ‘ওয়েস্ট উইং’য়ে প্রিবাস, ব্যানন এবং ট্রাম্পের জামাই কুশনার কার্যকরভাবে একই পদ ধরে রাখতে উদ্যোগী হন। হোয়াইট হাউসের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ কেটি ওয়ালশ’কে উদ্ধৃত করে বইতে বলা হয়েছে, তিনজনই ভিন্ন ভিন্ন পন্থায় ট্রাম্পের কাছে নিজেদের উপস্থাপন করেন। স্টিভ ব্যানন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে উত্সাহ দেন এবং বিভিন্ন লক্ষ্যের কথা বলেন। হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের স্পিকার পল রায়ানের ঘনিষ্ঠ প্রিবাস সরকারের বিশেষ কাজের বিষয়ে ট্রাম্পকে বলেন। আর কুশনার যিনি ধনীদের মধ্যে সমন্বয় করেন, তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলেন মধ্য-রাতে। অভিবাসন নিয়ে আদেশ জারি ও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার দুর্দশার মধ্যেই তিন জনের দ্বন্দ্ব সবার সামনে আসে। বইতে বলা হয়েছে, এই দ্বন্দ্বের মূল কারণ হচ্ছে একটি যৌক্তিক সাংগঠনিক কাঠামো বা চেইন অব কমান্ডের অনুপস্থিতি। এই তিনজনের দ্বন্দ্বের মাঝে পড়েন ওয়ালশ। তাকে একজন কাজের নির্দেশনা দিলে অন্যরা তা বাতিল করতে বলেন। কেউ কিছু বললে কুশনার প্রথমে একমত হন, পরে সেটা অন্তর্ঘাতমূলক হলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে গিয়ে নালিশ করেন। তিনি বলেন, এটা প্রিবাস কিংবা ব্যাননের চিন্তা-ভাবনা ছিল। ব্যাননের ভাবনা কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে নির্বাহী আদেশ জারির মাধ্যমে নতুন প্রশাসনকে এগিয়ে নেওয়া। প্রিবাস এই ধারণার বিরোধী। তিনি রিপাবলিকান এজেন্ডা অনুযায়ী কাজ করতে চান। আর এর বিরোধী কুশনার ছিলেন সিইও’দের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন করে তাদের মতে চলতে।
অথচ হোয়াইট হাউসে কোন কাজগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে সে বিষয়ে কিছুই জানতেন না কুশনার। গত মার্চের শুরুর দিকে কেটি ওয়ালশ কুশনারকে বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অগ্রাধিকার দিতে চান এমন তিনটি বিষয়ের তালিকা দিন। কিন্তু এর কোনো জবাবই কুশনার দিতে পারেননি। তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে পরে আলোচনা হওয়া উচিত। তিনজনই প্রেসিডেন্টকে প্রভাবিত করা এবং অন্যদের খাটো করার পৃথক ম্যাকানিজম গড়ে তুলেছিলেন। তিন জনের কাজের ধরন ট্রাম্প পছন্দ করেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি যা চান সব এদের মধ্যেই আছে। কিন্তু তিনি একটি বিষয় বুঝতে পারেন না যে, তিনি একসঙ্গে সব কিছু পাবেন না। বইতে বলা হয়েছে, ট্রাম্প যখন রাতে তার বন্ধুদের সঙ্গে আলাপ করতেন তখন তার কর্মকর্তাদের নানা ত্রুটি ও দুর্বলতার কথা বলতেন। যেগুলো ধীরে ধীরে গণমাধ্যমে আসতে শুরু করে। তিনি বলতেন, ব্যানন অবিশ্বাসী, প্রিবাস দুর্বল আর কুশনার চুষে খাচ্ছে। সিন স্পাইসার একটা নির্বোধ, কনওয়ে ছিচকাঁদুনে আর ইভানকার ওয়াশিংটনে আসাই উচিত হয়নি। ট্রাম্পের আলাপের কারণেই হোয়াইট হাউসের ভেতরের খবর মুক্তভাবে প্রকাশ হতে থাকে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের একক কর্তৃত্ব ও কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষমতা ধরে রাখার লড়াইয়ে কোনঠাসা মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। বইতে বলা হয়েছে, সকল প্রশাসনে অন্তত ক্লিনটন ও আল-গোরের পর থেকে ভাইস প্রেসিডেন্টদের এক ধরনের স্বাধীন ক্ষমতা ছিল। অথচ ট্রাম্পের প্রশাসনে পেন্স যেন কেউই না, এক গুরুত্বহীন চরিত্র। হাসি মুখে উপস্থিতি জানান দেওয়া ছাড়া তিনি কিছুই করেন না। দেখে মনে হয়, তিনি নিজের ক্ষমতা প্রয়োগের বিষয়টি এড়িয়ে চলেন, নয়তো তিনি এই ক্ষমতা আকড়ে ধরতে অক্ষম। রিপাবলিকান হিলের সাবেক এক সহকর্মীকে পেন্স নিজেই বলেছেন, আমি শুধু শেষকৃত্যের আনুষ্ঠানিকতাগুলো করি আর ফিতা কাটি। ডেপুটি চিফ অব স্টাফ ওয়ালশের মতে, ঝড়ো পরিবেশের মধ্যে ভাইস প্রেসিডেন্টের দফতরই শান্ত। পেন্স তার যেকোন ভাষণের শুরুতে বলেন, আমি যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পক্ষ থেকে আপনাদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। এর মাধ্যমে তিনি দর্শকদের চেয়ে ট্রাম্পকেই বেশি অভিবাদন জানান। পেন্স নিজেকে এমন অনাগ্রহী হিসেবে পেশ করেন যে, তিনি ট্রাম্পের ছায়াতলে রয়েছেন। ট্রাম্পের মেয়ে ও জামাই’য়ের কাছে পেন্স খুবই হাস্যরসের পাত্র। তাদের মতে, পেন্স অদ্ভুতভাবে ট্রাম্পের ভাইস প্রেসিডেন্ট হয়ে খুশি। ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্বটাই পালন করে তিনি সন্তুষ্ট, ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে কোনো দ্বন্দ্ব হয় এমন কিছু করেন না। ভাইস প্রেসিডেন্টের এই ধৈর্য্য ও বিনয়ের জন্য ট্রাম্পের মেয়ে ও জামাই পেন্সের স্ত্রী কারেন’কে কৃতিত্ব দেন।