৩৭ বছর হয়ে গেছে, আর দলের নেতৃতে থাকা সমীচীন হবে না: শেখ হাসিনা
দলে নতুন নেতৃত্ব দেখার ইচ্ছে প্রকাশ করে দলের নেতাদের এ ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করার তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘৩৭ বছর হয়ে গেছে…। একটা দলের সভাপতি হিসেবে ৩৭ বছরের বেশি থাকা বোধ হয় সমীচীন নয়।’ বৃহস্পতিবার (১৭ মে) নিজের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ৩৭তম দিবস উপলক্ষে গণভবনে আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের শুভেচ্ছা গ্রহণের পর তিনি এ কথা বলেন। তিন যুগের বেশি সময় ধরে আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারো দলে নতুন নেতৃত্ব দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। বিষয়টি নিয়ে দলের নেতাদের চিন্তা-ভাবনাও করতে বলেছেন তিনি। আওয়ামী লীগের ২০তম কাউন্সিলেও জীবদ্দশায় নতুন নেতৃত্বের হাতে দলের দায়িত্ব দেখার ইচ্ছে পোষণ করেছিলেন শেখ হাসিনা। আজ আবারও বিষয়টি অবতারণা করে তিনি বলেন, ‘নতুন নেতৃত্বের কথা ভাবা উচিত।’ এসময় শুভেচ্ছা জানাতে যাওয়া আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, তাঁতী লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ, ছাত্রলীগ এবং বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা সমস্বরে ‘না না’ বলে চিৎকার করে ওঠেন। তখন শেখ হাসিনা বলেন, ‘যতক্ষণ আছি.. সংগঠনকে শক্তিশালী করা দরকার। এ বিষয়টির প্রতি আরও গুরুত্বারোপ করতে হবে। ঐক্যবদ্ধভাবে জনগণের পাশে থেকে আওয়ামী লীগের পক্ষে যে কোনও কিছু অর্জন করা সম্ভব’
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ছাত্র রাজনীতির অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের মতো এতো বড় দলের নেতৃত্বে আমি আসতে চাইনি। একাশি সালে আওয়ামী লীগের কনফারেন্সে আমার অজান্তেই আমাকে দলের সভানেত্রী করা হয়। তার পর থেকে দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। জাতির পিতার স্বপ্নপূরণে কাজ করে যাচ্ছি। সোনার বাংলা গড়তে কাজ করে যাচ্ছি।’১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ হিসেবে উঠে দাঁড়াবে, স্বাধীন দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে; এটা যারা চায়নি তাদেরই এই হত্যার পেছনে ষড়যন্ত্র ছিল। তারা এই দেশটাকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছিল।’ আওয়ামী লীগের সমালোচনাকারীদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা শ্রেণি আছে, তাদের কিছুই ভালো লাগে না। তারা মিলিটারি ডিক্টেটরদের পা চেটে চলত। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে তারা ডেমোক্রেসি দেখে না। বুটের লাথি খেলে তাদের ভালো লাগে। যারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছে, তাদের আমলে ডেমোক্রেসি থাকে।’ নিজের ওপর বারবার বিরুদ্ধ, প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির আক্রমণের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বারবার বাঁধা এসেছে, আসবে; এটাই স্বাভাবিক। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আমরা করেছি, করছি। মৃত্যুকে আমি অনেক কাছ থেকে দেখেছি। মৃত্যুকে আমি পরোয়া করি না।’ যারা যুদ্ধাপরাধ মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন তাদের যেন কোনও রকম হুমকি ও নির্যাতনের মুখে থাকতে না হয় সে ব্যাপারে দলের নেতাকর্মীদের সজাগ থাকার আহ্বান জানান তিনি। পাশাপাশি দলের নেতাকর্মীদের আত্মবিশ্বাসী থাকারও আহ্বান জানান তিনি। ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফেরার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে এসময় বাষ্পরুদ্ধ হয়ে উঠে বঙ্গবন্ধু কন্যার কণ্ঠ। শুভেচ্ছা জানানোর সময় দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী ও সাহারা খাতুন, দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, দীপু মনিসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এদিকে শেখ হাসিনার ৩৭তম প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার পর প্রায় অর্ধযুগ দেশের বাইরে থাকতে হয় শেখ হাসিনাকে। এর পর আওয়ামী লীগ তাঁকে দলের সভাপতি নির্বাচন করলে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আসেন তিনি। তার পর থেকে গত ৩ যুগেরও বেশি সময় ধরে দলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন শেখ হাসিনা। এবার সেই দায়িত্ব থেকে বিশ্রামে যাওয়ার ইঙ্গিত দিলেন দলের নেতাকর্মীদের।
উন্নয়ন প্রকল্পের ৯০ শতাংশ করছি নিজস্ব অর্থায়নে: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের উন্নয়ন প্রকল্পের ৯০ শতাংশ আমরা নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করছি। গণতন্ত্র আছে বলেই দেশ এভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার (১৭ মে) দুপুর সাড়ে ১২টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) প্রতিনিধি সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আমাদের নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু আমরা বানাচ্ছি। মানুষ মনে করত বাংলাদেশ একটি দরিদ্র দেশ, তারা হাত পেতে চলবে। কিন্তু আমরা কেন হাত পেতে চলব? সরকারের সমালোচনা করার মনোভাব পরিহার করা উচিত বলে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা সমুদ্র বিজয় করেছি, আকাশ বিজয় করেছি। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে আমরা বিশ্বে মর্যাদার আসনে উন্নীত হয়েছি। শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের উন্নয়নের পরিকল্পনা একেবারে তৃণমূল থেকে করছি, যাতে সব পর্যায়ে উন্নয়ন ঘটে। তিনি সাংবাদিকদের কাছে অনুরোধ করেন, দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য যে কাজ হচ্ছে, তা যেন তুলে ধরা হয়। কারণ আমরা পরমুখাপেক্ষী হতে চাই না। সবশেষে বিএফইউজের প্রতিনিধি সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে বিকাল ৩টা থেকে প্রতিনিধি সম্মেলনের কর্ম অধিবেশন শুরু হবে। এতে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের তিন শতাধিক সদস্য ছাড়াও বাকি ১০টি ইউনিয়ন থেকে আরও ২০০ (ইউনিয়নপ্রতি ২০ জন করে) সদস্য যোগ দেবেন।