৮ ফেব্রুয়ারি থেকে মাঠ দখলের প্রস্তুতি ২ দলের
আওয়ামী লীগের পাশাপাশি সরকারও নাশকতা প্রতিহত করতে প্রস্তুতি গ্রহণ করছে
মেহেদী হাসান- বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ওইদিন থেকে মাঠ দখলে রাখার প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রায় যা-ই হোক বিএনপিকে রাস্তায় কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে দেয়া হবে না, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করা হলে শক্তভাবে দমন করা হবে। অন্যদিকে, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, যেনতেন রায় জনগণ মেনে নেবে না। ‘ষড়যন্ত্রমূলক’ কোনো রায় দেয়া হলে বিএনপি ও জনগণ রাস্তায় নেমে আসবে। ন্যায়বিচার না হলে পথে নামার জন্য প্রস্তুতি নিতে তিনি দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি গতকাল শনিবার আহ্বান জানিয়েছেন।
খালেদা জিয়ার রায় ঘিরে দেশে যাতে কোন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয় সেজন্য সারাদেশে সতর্ক রয়েছে আওয়ামী লীগ। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে রাজপথসহ সারাদেশের মাঠ দখলের রাখার টার্গেট নিয়েছে দলটি। দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, রায়কে ঘিরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির কোন সুযোগই বিএনপি পাবে না। কারণ মাঠ থাকবে আওয়ামী লীগসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির দখলে। ইতিমধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কেন্দ্রীয় নেতারা সারাদেশ সফরে নেমে পড়েছেন। আর এ সফরের মাধ্যমে দেশবাসীকে জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতি প্রতিহত করার আহ্বান জানানো হচ্ছে। মাঠ দখলে রাখতে তৃণমূলের নেতাকর্মীদেরও নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। আওয়ামী লীগের পাশাপাশি সরকারও নাশকতা প্রতিহত করতে প্রস্তুতি গ্রহণ করছে।
জানা গেছে, যে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা প্রতিহত করতে সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। অতীতে যারা আগুন সন্ত্রাসে জড়িত ছিলেন তাদের নজরদারিতে রাখা শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, তাদের আহ্বানের প্রেক্ষিতে সারাদেশের জনগণ বেশ সাড়া দিচ্ছে। অতীতের মতো ফের জ্বালাও-পোড়াও হলে তা প্রতিহত করার প্রস্তুতি দিচ্ছে দেশবাসীও। এতে আওয়ামী লীগের মধ্যে আস্থা বাড়ছে। এ কারণে আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করছেন, আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াও কর্মসূচি জনগণই প্রতিহত করবে, আওয়ামী লীগের কোন প্রয়োজন পড়বে না।
আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য, কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ইত্তেফাককে জানান, আদালত থেকে যে রায়ই আসুক না কেন তা বিএনপির মেনে নেওয়া উচিত হবে। আইনের মাধ্যমেই তা মোকাবেলা করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ নিম্ন আদালতের রায় থেকে উচ্চ আদালতের চূড়ান্ত রায় পাওয়া পর্যন্ত অনেক সময় থাকে আইনগতভাবে মোকাবেলা করার। ‘যেনতন রায় বিএনপি মানবে না’ মর্মে বিএনপি নেতাদের বক্তব্যের সমালোচনা করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আদালতের রায়ে কী হবে তা জানি না। তবে রায়কে কেন্দ্র করে বিএনপির এসব মন্তব্য দুঃখজনক, দুর্ভাগ্যজনক। আসলে বিএনপি একটি দায়িত্বহীন দল। তিনি বলেন, যদি তারা রায় না মেনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে তাহলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। আর আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে তা মোকাবেলা করবে। তিনি বলেন, যারা বঙ্গবন্ধুর খুনীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছে, তারা ক্ষমতায় থাকতে আইন-আদালতকেও অবজ্ঞা করেছে। মোহাম্মদ নাসিম বলেন, খালেদা জিয়ার মামলা হয়েছে ওয়ান ইলেভেন সরকারের আমলে। আর বর্তমান সরকার আদালতে কোন হস্তক্ষেপ করে না।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আদালতের বিরুদ্ধে যারা হুমকি দিতে পারে, আমরা মনে করি তাদের হাতে দেশ-গণতন্ত্র ও বিচার ব্যবস্থা কোনটাই নিরাপদ নয়। আদালতের স্বাধীনতায় সরকারের কোন হস্তক্ষেপ নেই উল্লেখ করে কাদের বলেন, ‘যদি আদালত স্বাধীন না হতো তাহলে খুনের মামলায় আওয়ামী লীগের এমপি ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কারাগারে থাকত না।’ ‘গোটা বিচার প্রক্রিয়াই প্রহসন’ মর্মে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আদালত কী রায় দেবে, বেগম জিয়াকে সাজা দেবে কি না তা মির্জা ফখরুল কীভাবে জানলেন যে সেটা তারা আগেই বলে দিচ্ছেন। খালেদা জিয়ার দুর্নীতির মামলার কী সাজা হবে এটা আদালতের এখতিয়ার। সাক্ষ্যপ্রমাণ ও তথ্যের ভিত্তিতে আদালত যে সিদ্ধান্ত নেবে সেখানে সরকারের কোন হাত নেই। খালেদার সাজা হলে দেশে আগুন জ্বালানোর বিষয়ে বিএনপি নেতাদের হুমকির বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি যদি আন্দোলনের নামে আবারও জ্বালাও পোড়াও করতে চায় তাহলে জনগণই তাদেরকে প্রতিহত করবে।’ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, রায়কে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করা হলে আওয়ামী লীগ লাগবে না, দেশের মানুষই বিএনপি-জামায়াতকে প্রতিহত করবে।