‘অনেক বড় বড় স্যারও আসতেন’
রিমান্ডে নিজের বিভিন্ন অপরাধ সম্পর্কে পাপিয়া জানিয়েছেন, নারীদের আকর্ষণ কার নেই। এখন সব দোষ পাপিয়ার হবে কেন। এসময় শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা, কয়েক প্রভাবশালী নেতা ও ব্যবসায়ীদের নাম উল্লেখ করেছেন তিনি। তাদের আগ্রহেই রুশ যৌনকর্মীদের ঢাকায় এনেছিলেন তিনি। তবে অন্যান্য গুরুতর অপরাধ সম্পর্কে প্রায় প্রশ্নেই নিরব থাকছেন পাপিয়া। কখনও কখনও কৌশলে এড়িয়ে গেছেন। তারকা হোটেলে বসে চাকরি-বদলি, টেন্ডারের তদবির, অবৈধ বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন পাপিয়া। এসব বাণিজ্যের মধ্যে ছিলো অস্ত্র ও মাদক। জিজ্ঞাসাবাদে এ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। পাপিয়া জানিয়েছেন, সরকারি দলের নেত্রী হওয়ার কারণে তার কথার বাইরে যেতো না পুলিশ। এরমধ্যে নরসিংদীতে কিছুটা সমস্যা সৃষ্টি হয়েছিলো। তবে একজন প্রভাবশালী মন্ত্রীর নির্দেশের পর প্রশাসন তাকে সবসময় সহযোগিতা করতো।
অবৈধ বাণিজ্য পরিচালনা করতেন পাপিয়ার স্বামী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মফিজুর রহমান সুমন। অল্পদিনের বিপুল সম্পত্তির মালিক হতেই স্ত্রী পাপিয়াকে দিয়ে শীর্ষ নেতা ও কর্মকর্তা ম্যানেজ করতেন সুমন। তাদের অবৈধ ব্যবসায় জড়িত ছিলো কয়েক যুবলীগ নেতা-কর্মী। ইতিমধ্যে তাদের নাম-পরিচয় পেয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। তাদের গ্রেপ্তারের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে বলে জানা গেছে। এরই মধ্যে পাপিয়া ও সুমনের মোবাইল ফোনের কললিস্ট পরীক্ষা ও জিজ্ঞাসাবাদে কয়েক এমপিসহ প্রভাবশালী অনেকের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ পরিচয় থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার মশিউর রহমান বলেন, পাপিয়াকে বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
সূত্রমতে, পাঁচ তারকা হোটেলের বাইরেও নিজের ফার্মগেটের বাসায়ও আমোদ-ফূর্তির আসর বসাতেন পাপিয়া। রাত বিরাতে নিয়ে আসতেন তরুণীদের। সেখানে আসতেন ভিআইপিরাও। তিন বছর ধরে ফার্মগেটের ইন্দিরা রোডের বাসাটিতে থাকতেন তিনি। তবে মাসে ছয় সাত দিনের বেশি অবস্থান করতেন না এই বাসায়। তেজগাঁও কলেজ সংলগ্ন একটি বহুতল ভবনে মাসে প্রায় অর্ধলক্ষাধিক টাকা ভাড়া দিয়ে তৃতীয় তলার ফ্ল্যাট রেখেছিলেন পাপিয়া। সরজমিনে ইন্দিরা রোডের ২৮ নম্বর বাড়িতে গিয়ে কথা হয় প্রতিবেশী ও কেয়াটেকারের সঙ্গে। কয়েকজন কেয়ারটেকারের মধ্যে নামপ্রকাশ না করার শর্তে একজন বলেন, প্রায়ই রাত বারোটা একটার দিকে সাত-আট জন নারী নিয়ে বাসায় আসতেন পাপিয়া ম্যাডাম। কোনো দিন নিজের গাড়ি নিয়েই আসতেন, আবার কোনো দিন অন্য কেউ এসে নামিয়ে দিয়ে যেতো। যেদিন রাতে আসতেন সেই দিন রাতে থেকে পরের দিন দুপরে চলে যেতেন। মাঝেমধ্যে সঙ্গে অনেক বড় বড় স্যারও নিয়ে আসতেন। তারা বেশি সময় থাকতেন না। এক-দুই ঘন্টা থেকে চলে যেতেন। ম্যাডাম তাদের নিচের পার্কিং পর্যন্ত এগিয়ে দিতেন।
এর বাইরে পাপিয়ার তেমন কিছু জানতেন না তারা। টিভি পত্রিকায় দেখার পর হতভম্ব হয়েছেন তারা। তবে প্রতিবেশীরা জানান, পাপিয়ার ফ্ল্যাটে মাঝেমধ্যে উচ্চস্বরে শব্দ শোনা যেতো। বাসায় উচ্চস্বরে হিন্দি ও পপ গান বাজাতেন তিনি। ওই ভবনের একজন ভাড়াটিয়া বলেন, পাপিয়া সবসময় একদল তরুণী নিয়ে চলাফেরা করতেন। প্রায় সময় সঙ্গে একাধিক পুরুষও দেখা যেতো। তার স্বামীকেও আমরা দেখতাম। মাঝেমধ্যে অনেক ভিআইপিও আসতেন। ওই ভাড়াটিয়া জানান, পাপিয়াদের ফ্ল্যাটে কখনো যাওয়া হয়নি। কারণ দিনের বেলায় তিনি বাসায় কম থাকতেন। যখনই দেখা হতো দেখতাম দলবল নিয়ে বের হচ্ছেন বা প্রবেশ করছেন। গাড়ি চালকের মেয়ে পাপিয়ার চাকচিক্যের অভাব ছিলো না। বেশির ভাগ সময় কাটাতেন পাঁচ তারকা হোটেল ওয়েস্টিনে। পাপিয়া তার অতিথিদের প্রথমে নিয়ে যেতেন ওয়েস্টিনের লবিতে। পরে লাঞ্চ বা ডিনার শেষে সেখান থেকে নিয়ে যেতেন তার নামে বরাদ্দকৃত বিলাসবহুল প্রেসিডেনসিয়াল স্যুটে। এদিকে সুমন-পাপিয়া দম্পতির বিদেশে অর্থ পাচারের বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। অস্ত্র, মাদক ও জাল টাকার পৃথক তিনটি মামলায় যুব মহিলা লীগের নরসিংদী জেলার বহিস্কৃত সাধারণ সম্পাদক শামীমা নুর পাপিয়াকে গত সোমবার ১৫ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। তার স্বামী মফিজুর রহমান সুমনও ১৫ দিনের রিমান্ডে রয়েছেন। এছাড়াও তাদের সহযোগী সাব্বির খন্দকার ও শেখ তায়্যিবকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। গত ২২শে ফেব্রুয়ারি তাদের গ্রেপ্তার করে র্যাব।