অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেবেন না ড. জাফর ইকবাল
বাংলাদেশের অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করবেন না বলে জানিয়েছেন শাহ্জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরোত্তর ছুটিতে থাকা অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। শাবি’র শিক্ষকের পরিচয় নিয়েই বাকি জীবন থাকতে চান বলে জানিয়েছেন তিনি। বিশিষ্ট লেখক ও কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হক দম্পতির শাবিতে চাকরির ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানভিত্তিক সংগঠন সাস্ট সায়েন্স অ্যারেনার উদ্যোগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে ‘সাস্টে ২৫ বছর’- নামক স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল বলেন, ‘শাবি থেকে অবসর নেয়ার পর বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করার জন্য প্রস্তাব এসেছে। আমার সঙ্গে অনেকেই যোগাযোগ করেছেন তখন আমি উনাদেরকে সরাসরি না করতে পারিনি। কিন্তু আমি ঠিক করেছি যে, যখন এখান থেকে চলে যাবো এরপরে বাংলাদেশের আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করবো না কারণ আমি চাই আমার পরিচয়টা থাকুক, আমি শাহ্জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলাম। অন্য কোথাও জয়েন করলে সেই সুযোগ আর থাকবে না। এখানে প্রত্যেকটি মুহূর্ত, প্রত্যেকটি সেকেন্ড আমি উপভোগ করেছি। আমি অপূর্ব স্মৃতি নিয়ে এখান থেকে যাচ্ছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিদেশে বেশিদিন থাকলে আমি নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে মারা যেতাম। তাই দেশে চলে এসেছি, ফ্রি-ভাবে নিঃশ্বাস নিতে আসছি। আমি খুব ভাগ্যবান, সিলেটে আসার পর ব্যাঙের ডাক, শেয়ালের ডাক শুনেছি, প্রত্যেক রাতে বৃষ্টি হয়। বাংলাদেশে কত সুন্দর ঝম ঝম করে বৃষ্টি হয় কিন্তু ওখানে টিপ টিপ করে বৃষ্টি পড়তো।’ মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ড. জাফর ইকবাল বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ আমাদের অনেক বড় সেক্রিফাইস, অনেক বড় বীরত্ব এবং অনেক বড় অর্জন। তখন বাংলাদেশের প্রায় প্রত্যেক পরিবার থেকে মানুষ মারা গিয়েছিল। এই মুক্তিযুদ্ধের ভেতর অসংখ্য স্বজন হারানোর একটি বেদনা আছে। আমরা অনেক কিছু দেখেছি কিন্তু মানুষের মনের ভেতরের কষ্টটা আমরা অনেকে দেখিনি। তোমরা কল্পনাও করতে পারবে না মুক্তিযুদ্ধের মানুষ কত বড় কষ্ট নিয়ে বড় হয়েছে। সে জন্য আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম একটি বই লিখবো যেখানে পাঠকের মনে কষ্ট দিবো। সেজন্য ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ নামে বইটিতে মুক্তিযুদ্ধের কষ্টটি তুলে ধরেছি। ইচ্ছা করে ছেলে- মেয়েদের মনে কষ্ট দিয়েছি। যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখো নাই তারা যাতে অন্তত বুঝতে পারো মুক্তিযুদ্ধে কতটা কষ্ট ছিল।’ সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. হাবিবুর রহমানের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হক বলেন, ‘তিনি অসম্ভব ভালো মানুষ ছিলেন। মানুষ ভালো হওয়া অনেক বেশি দরকার। অনেক ভিসিকে দেখলাম অধ্যাপক ড. হাবিবুর রহমানের মতো ভালো মানুষ দেখিনি।’ এ সময় তিনি শাবিতে যোগদানের অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটারটি সবাইকে পড়ে শোনান। কীভাবে তিনি সিলেট এলেন, সিলেটের বিভিন্ন ঘটনা, হল প্রভোস্ট থাকার সময়ের বিভিন্ন স্মৃতি, ডিন এবং বিভাগীয় প্রধানসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালনের সময় ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনার স্মৃতিচারণ করেন। তিনি আরও বলেন, ‘২৫ বছর ধরে একটি বাসায় ছিলাম, অসংখ্য জিনিস এখানে রয়েছে, জমা হয়েছে। এখন চলে যাচ্ছি। আমরা বাসা গুছানো আরম্ভ করেছি, বাসা গুছানো অনেক কঠিন কাজ।’ এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে কাজী খাইরুন নাহার মিতু, ত্রিদিব সেন, রাকিব হোসেন, অনামিকা ফৌজিয়া প্রমুখ প্রিয় স্যার-ম্যামকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন। প্রসঙ্গত, ১৯৯৪ সালে অধ্যাপক জাফর ইকবাল বিখ্যাত বেল কমিউনিকেশনস রিসার্চ (বেলকোর) এর গবেষকের চাকরি ছেড়ে দেশে ফিরে ডিসেম্বরের ৪ তারিখ শাবিতে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে যোগদান করেন। ২০১৮ সালের ৪ঠা অক্টোবর অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল ২৫ বছর শিক্ষকতা শেষে অবসরে যান। বর্তমানে তিনি অবসরোত্তর ছুটিতে আছেন।