অবশেষে যুদ্ধাপরাধের কথা স্বীকার মিয়ানমার সেনাবাহিনীর
বার্তা ডেস্ক :: অবশেষে রাখাইনে যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হওয়ার কথা স্বীকার করলো মিয়ানমার। একটি অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হওয়ার আলামত পাওয়ার কথা জানিয়ে প্রথমবারের মতো মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা নিপীড়নের কথা স্বীকার করেছে। মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, রাখাইন রাজ্যে ২০১৭ সালের আগে-পরে সংঘটিত ‘সম্ভাব্য বিস্তৃত আকারে নিপীড়নের ঘটনা’ তদন্ত করছে তারা। সম্প্রতি মিয়ানমারের দুই সেনা সদস্য উত্তর রাখাইনে বেশ কয়েকজন গ্রামবাসীকে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। যখন তারা দ্য হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে সাক্ষ্য দেবেন বলে শোনা যাচ্ছে, ঠিক সেই সময় মিয়ানমার সেনাবাহিনী সম্ভাব্য নিপীড়নের স্বীকারোক্তি দিয়ে তদন্তের কথা জানালো। খবর রয়টার্স।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রায় ৭ লাখ ৪০ হাজার মানুষ। রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানোর দায়ে এরইমধ্যে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) অভিযুক্ত হয়েছে মিয়ানমার। ভবিষ্যৎ প্রসিকিউশনে ব্যবহারের জন্য মিয়ানমারে সংঘটিত আন্তর্জাতিক অপরাধের আলামত সংগ্রহ করতে ২০১৮ সালে ইন্ডিপেনডেন্ট ইনভেস্টিগেটিভ মেকানিজম অন মিয়ানমার (আইআইএমএম) প্রতিষ্ঠা করে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল। মিয়ানমার বরাবরই গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। দেশটির দাবি, পুলিশ পোস্টে হামলাকারী জঙ্গিদের বিরুদ্ধে বৈধ অভিযান চালিয়েছে সশস্ত্র বাহিনী। মঙ্গলবারের বিবৃতিতে মিয়ানমার সেনাবাহিনী স্বীকার করেছে, রাখাইনে বড় আকারে নিপীড়নের ঘটনা সংঘটিত হয়ে থাকতে পারে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “সেনা নিয়ন্ত্রিত ‘অফিস অব দ্য জাজ অ্যাডভোকেট জেনারেল’ সরকার সমর্থিত কমিশনের প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করেছে। ওই প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে, মিয়ানমারের সেনা সদস্যরা যুদ্ধাপরাধ করেছে। এর ভিত্তিতে তদন্ত আরও বিস্তৃত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে আরও বলা হয়, জাজ অ্যাডভোকেট জেনারেল অফিস ২০১৬-২০১৭ সালে উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইনে সম্ভাব্য বিস্তৃত আকারের সহিংসতার ঘটনা তদন্ত করছে। মংডু জেলার গ্রামগুলোতে নিপীড়ন সংঘটিত হওয়ার অভিযোগকেও এ তদন্তের আওতায় রাখা হয়েছে।’ ২০১৭ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এ মংডু জেলাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছিল। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দেওয়া ওই বিবৃতিতে তদন্ত নিয়ে খুব বেশি বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়নি। এ ব্যাপারে মিয়ানমারের সেনা মুখপাত্রদের ফোন করে সাড়া পায়নি ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।