দেশে বর্তমানে আলোচনায় রয়েছে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এরই মধ্যে এ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো। প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থা নির্বাচন কমিশনও। বসে নেই আমলারাও। অবসর নিয়েই যাতে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেন সেই জন্য তারা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের জন্য দৌঁড়ঝাপ শুরু করে দিয়েছেন।

নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে কেউ কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হতে চাইলে তাকে সেই দলের কমপক্ষে তিন বছর আগে দলের সদস্য হতে হবে। তবে বিগত কমিশন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দলীয় প্রার্থী হওয়ার তিন বছর সদস্য পদ থাকার বিধানটি বাদ দেয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ঊর্ধ্বতন ইসি কর্মকর্তা পরিবর্তন ডটকমকে জানান, কোনো রকম আলোচনা ছাড়াই দলীয় সদস্য পদ থাকার বিধানটি তুলে দেওয়াটি ছিল কমিশনের ভুল সিদ্ধান্ত। যার ফলে ডিগবাজি ও মনোনয়ন বাণিজ্যের পথ খুলেছে। একই পথ ধরে আমলাদের প্রার্থী হওয়ার শর্ত শিথিল করা কোনোভাবেই ঠিক হবে না। রাজনীতি চলে যাবে ব্যবসায়ী এবং আমলাদের হাতে। যারা সারাবছর মাঠে জনগণের পাশে থেকে রাজনীতি করেন তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বঞ্চিত হবেন।

এদিকে একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কর্মপরিকল্পনার কাজ শুরু করেছে কে এম নুরুল হুদা নেতৃত্বাধীন ইসি। যা চলতি মাসের ১৪ তারিখে চূড়ান্ত হওয়ার কথা রয়েছে। আর ওই কর্মপরিকল্পনায় রাজনৈতিক দল, গণমাধ্যম, সুশীল সমাজের সঙ্গে সংলাপসহ আইন সংস্কারের আলোচনাও চলছে।

একাদশ সংসদ নির্বাচনে আমলাদের শর্ত শিথিলের কোনো পরিকল্পনা কমিশনের রয়েছে কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, সব কিছু বুঝেশুনে করতে হবে। স্টেকহোল্ডার যারা রয়েছে তাদের কাছ থেকে কোনো প্রস্তাব এলে তা পর্যালোচনা করা যেতে পারে। আগে সংলাপ হোক, তারা যদি প্রস্তাব দেন তারপর কমিশন বিষয়টি ভেবে দেখবে। তবে এখনো পর্যন্ত এ ধরনের কোনো প্রস্তাবনা আমাদের কাছে আসেনি।

তিনি বলেন, আরপিও সংস্কার চূড়ান্ত হবে জাতীয় সংসদে। রাজনৈতিক দল বা অন্য অংশীজনদের প্রস্তাব আসার পর এটা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। তাছাড়া শর্ত শিথিল কেমন হবে, এক বছর হবে নাকি দুই বছর হবে, আদৌ হবে কিনা- প্রস্তাব না এলে তো কিছু বলা যাচ্ছে না।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, জুলাইয়ে আইন-বিধির সংশোধনী আনতে পরিকল্পনা গ্রহণ; আগাস্টে প্রস্তাবিত আইন ও বিধির খসড়া প্রণয়ন; আলোচনার জন্য চূড়ান্তকরণ এবং আইন সংস্কারের নিয়ে রাজনৈতিক দল, সাংবাদিক, সুশীল সমাজের সঙ্গে আলোচনার জন্য সেপ্টেম্বরে এজেন্ডা তৈরি ও সময়সূচি নির্ধারণ ইত্যাদি রয়েছে ইসির কর্মপরিকল্পনার মধ্যে।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ১২ অনুচ্ছেদে (উপ ধারা এফ ও এইচ) বলা হয়েছে, সরকারি চাকরি থেকে অবসর বা অপসারণের তিন বছর পার না হলে প্রার্থী হতে পারবেন না। সশস্ত্রবাহিনী বা সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান ও সরকারি চাকরিতে চুক্তিভিত্তিক চাকুরেদের ক্ষেত্রেও একই বিধান প্রযোজ্য।

ইসি সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে কয়েকজন সাবেক আমলা ইসিতে যোগাযোগ করেছেন। তারা চান শর্তের বিধানটি বাদ দেওয়া হোক। এর আগেও এ ধরনের একটি বিধান মন্ত্রিসভায় অনুমোদন করেই সংসদে পাঠিয়েছে। এখন সরকার যদি মনে করে আমলাদের বিষয়ে শর্ত শিথিল করবে, কেবিনেট থেকেই প্রস্তাব যেতে পারে। তবে ইসির সংলাপে এ বিষয়ে কোনো প্রস্তাবনা এলে তা নিয়েও পর্যালোচনার সুযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের (ইডব্লিউজি) পরিচালক আব্দুল আলীম বলেন, বিধানটি বাদ দিলে অনেকেই নিজ নির্বাচনী এলাকায় চাকরিকালীন ক্ষমতার অপব্যবহার করতে পারেন। প্রশাসনেও রাজনীতিকরণের প্রভাব বাড়বে। তাই কোনোভাবেই আমলাদের প্রার্থিতায় শিথিলতা সমীচিন হবে না।

গত ফেব্রুয়ারির ১৫ তারিখে কেএম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন কমিশন দায়িত্ব গ্রহণ করে। সবকিছু ঠিক থাকলে এই কমিশনের অধীনেই ২০১৮ সালের শেষে বা ২০১৯ সালের জানুয়ারির মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তার আগেই আইন সংস্কারসহ নানা বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা করছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn