‘অভিনয়শিল্পীদের শর্টকাট পথ খোঁজা উচিত না’
মাসুম আওয়াল-
‘অভিনয়শিল্পীদের শর্টকাট পথ খোঁজা উচিত না। সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো অভিনয়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া, যত্নবান হওয়া। শুধু অভিনয়ে নয় সবক্ষেত্রেই তাই। কাজের ব্যাপারে যে যেমন যত্নবান হবেন তেমন ফল পাবেন। টার্গেট সবসময় হতে হবে ১০ এর মধ্যে কমপক্ষে ৮ মার্ক পাওয়া। ৫ মার্কেই সন্তুষ্ট হলে উৎকর্ষের জায়গা বন্ধ হয়ে যায়।’— কথাগুলো বলছিলেন ছোটপর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী সাবেরী আলম। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে এসব বলেন তিনি। সে আলাপের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো।
বর্তমান কর্মব্যস্ততা দিয়ে শুরু করা যাক আলাপ?
ঠিক আছে। এখন ব্যস্ততা মুলত নাটক নিয়ে। বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচারিত ধারাবাহিকগুলোর মধ্যে আছে সাজ্জাদ সুমনের ‘চুইংগাম’, খায়রুল পাপনের ‘হোম থিয়েটার’, সাগর জাহানের ‘ল্যাম্পপোস্ট’, অঞ্জন আইচের ‘মেঘের পরে মেঘ’ ও দীপ্ত টিভিতে রিপিট হচ্ছে ‘খেলাঘর’।
সিঙ্গেল নাটক ও বিজ্ঞাপন?
অনেক একক নাটকে অভিনয় করা হয়। সত্যি কথা বলতে এগুলোর নাম মনে থাকে না। ধারাবাহিক নাটকেই বেশি অভিনয় করা হয়। বিজ্ঞাপনে অভিনয়ের পাশাপাশি মাঝে মধ্যে ভয়েসওভারও দিই।
নিজের অভিনীত প্রিয় নাটকগুলোর কথা তো আর ভোলা যায় না। এমন কিছু নাটকের নাম বলবেন?
২০০৮ সাল থেকে নিয়মিত অভিনয় করছি। এই আট বছরে কতটা কাজ করতে পেরেছি জানি না। নিজের সব কাজই ভালো এটা বলব না। তবে এ কথা বলতে পারি আমি সব কাজই ভালো করে করতে চাই। প্রত্যেকটা কাজই যেন ভালো হয় সেটা আমার উদ্দেশ্য থাকে। তবে সব তো আর ভালো হয় না। যেমন; আমি যখন রান্না করতে যাই। আমি চাই প্রত্যেকটা তরকারিই যেন মজার হয়। কিন্তু দেখা যায় একটা একটু বেশি মজা হয়, একটা একটু কম মজা হয়। আর নাটক যেহেতু টিমওয়ার্ক সবকিছু মিলিয়েই একটা ভালো কিছু দাঁড়ায়। আমি মুনতাসির রিপনের একটি হাসির নাটকে অভিনয় করলাম। এখন ভালো স্ক্রিপ্ট কম। স্ক্রিপ্ট রাইটারের অভাব আছে।
জানতে চাচ্ছিলাম কিছু প্রিয় কাজের কথা?
বাংলালিংকের ‘২৬ মার্চ’ বিজ্ঞাপনে অভিনয় করেছিলাম। এটা আমার খুব প্রিয়। গত রোজার ঈদে কৃষ্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের নির্দেশনায় রেড কাউ বাটার ওয়েলের একটি বিজ্ঞাপনে অভিনয় করেছিলাম। একঘণ্টার নাটকের মধ্যে গিয়াস উদ্দিন সেলিমের ‘মুখোশ’ প্রিয় অনেক। কয়েকটি সিনেমাতে অভিনয় করেছি। ‘রিনা ব্রাউন’ ও ‘রাজনীতি’তে অভিনয় করে অনেক ভালো লেগেছে। ধারাবাহিক নাটকগুলোর মধ্যে মাতিয়া বানু শুকুর ‘অপরজিতা’, বদরুল আনাম সৌদের কয়েকটা ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করেছি। এগুলো ভালো লেগেছে।
একজন অভিনেত্রী হিসেবে সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা আছে বলে মনে করেন?
আমি অতি ক্ষুদ্র ও সাধারণ মানুষ। এই ধরনের কোনো বিশাল ধারণা থেকে অভিনয় করি না। আমার মনে হয় একজন মানুষ হিসেবে আরেকজন মানুষের জন্য কিছু করতে পারি। প্রতিটা মানুষই যদি কোন না কোন মানুষের জন্য কিছু না কিছু করে সেটা একসময় সামাজিক রূপ পায়। আমি এককভাবে হয়তো বড় কিছু করতে পারব না। করা সম্ভব না আসলে। আমি একজন অভিনেত্রী হিসেবে ভাবি— অনুজরা যেন আমার দ্বারা ভুল পথে পরিচালিত না হয়। ঠিক দিকে যদি পরিচালিত করতে পারি তাহলে খুব ভালো। আর ঠিক দিকে যদি পরিচালিত করতে না পারি তাহলে অন্তত যেন ভুল দিকে পরিচালিত না করি।
আমি একজন মা এবং একইসঙ্গে একজন অভিনেত্রী। দুটোর মধ্যে ব্যলেন্স করাটা কষ্টকর। আমি চেষ্টা করি দুটোকে ব্যালেন্স করে চলার। একজন ব্যাক্তি হিসেবে আমি যদি দায়িত্বশীল হই, তাহলে তার প্রতিফলন সমাজে পড়বে।
একজন অভিনয়শিল্পীর কী কী গুণ থাকা উচিত মনে করেন?
অভিনয়শিল্পীদের শর্টকাট পথ খোঁজা উচিত না। সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো অভিনয়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া, যত্নবান হওয়া। শুধু অভিনয়ে নয় সবক্ষেত্রেই তাই। কাজের ব্যাপারে যে যেমন যত্নবান হবেন তেমন ফল পাবেন। টার্গেট সবসময় হতে হবে ১০ এর মধ্যে কমপক্ষে ৮ মার্ক পাওয়া। ৫ মার্কেই সন্তুষ্ট হলে উৎকর্ষের জায়গা বন্ধ হয়ে যায়।
আরো কিছু আনুষাঙ্গিক বিষয় থাকে নিশ্চয়?
তা তো থাকেই। কিছুদিন আগেই আমার এক কলিগ মজা করে বলছিলেন, ‘আমার এতোজন ফলোয়ার এ জন্য আমি এতো জনপ্রিয়।’ অনেকেই এমনটিই মনে করে। আপনি কেমন অভিনেতা কেমন অভিনেত্রী তার মানদণ্ড কখনই ফেসবুক হয় না। এমন ভাবনা আমাদের সামনের দিকে এগুনোর বদলে পিছিয়ে দেবে। প্রযুক্তির ব্যবহার অবশ্যই প্রয়োজন আছে। তবে সেটা বুঝে যদি যোগ্যভাবে ব্যাবহার করা হয়, তাহলে ভালো।
আপনার কি মনে হয় দেশের নারীরা অনেক এগিয়েছে?
হ্যাঁ। আমি মনে করি যতদিন যাচ্ছে তত সবল হচ্ছে নারীরা। সব পেশাতেই এখন সম্মানজনক অবস্থানে আছে নারীরা। পুরুষদের কাছ থেকে একজন মেয়ের সম্মান তখনই নিশ্চিত হবে যখন একজন মেয়ে আরেকজন মেয়েকে সম্মান করবে। পুরুষ-নারীর ভেদাভেদ ভুলে আমরা যদি সবাই সবাইকে মানুষ ভাবি তাহলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।
সময় দেওয়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আপনাকেও ধন্যবাদ।