আওয়ামী লীগের গৌরবের ৭০ বছর
ডেস্ক: স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পুরোধা রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী বাংলাদেশের মুক্তির সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়া ক্ষমতাসীন দলটি উপমহাদেশের রাজনীতিতেও গত ৭ দশক ধরে অবিভাজ্য ও অবিচ্ছেদ্য সত্তা হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। দেশের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে ও স্বাধিকার আদায়ে ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামী লীগের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বাংলাদেশের ইতিহাস মানেই আওয়ামী লীগের ইতিহাস। আওয়ামী লীগের ইতিহাস ব্যতিত বাংলাদেশের ইতিহাস কল্পনাই করা যায় না বলেছেন বর্ষিয়ান নেতা তোফায়েল আহমেদ। বাঙালী জাতীয়তাবাদের চেতানা আর আওয়ামী লীগের চেতনা এক ও অভিন্ন। আওয়ামী লীগ মানেই মুক্তি ও সংগ্রামের প্রতিচ্ছবি। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক দর্শন হচ্ছে গরিব ও দুঃখী মানুষের অধিকার আদায়ের দর্শন। আওয়ামী লীগ মানেই জাতির অর্জন ও সমৃদ্ধির স্বর্ণালি দিন। অতীত থেকে বর্তমান সব কিছুতেই আওয়ামী লীগ অবিচ্ছেদ্যভাবে যু্ক্ত আছে। যেমন ৪৭-এর দেশ বিভাগ, ৫২-র ভাষা আন্দোলন, ৬২-র ছাত্র আন্দোলন, ৬৬-র ছয় দফা, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ৭০-এর নির্বাচন আর ১৯৭১’র মহান স্বাধীনতা আন্দোলন সব কিছুতেই আওয়ামী লীগের অগ্রণী ভূমিকা ছিল।
১৯৪৯ সালে দেশের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগের যাত্রা শুরু। এই বছরের ২৩ জুন পুরান ঢাকার কেএম দাস লেনের ঐতিহাসিক রোজ গার্ডেনে তৎলীন পাকিস্তানের প্রথম প্রধান বিরোধী দল হিসেবে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। প্রথম কাউন্সিলে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং শামসুল হককে দলের যথাক্রমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। তখন তরুণ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন কারাগারে বন্দী। বন্দী অবস্থায় তাকে সর্বসম্মতিক্রমে প্রথম কমিটির যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। ১৯৫৩ সালে ময়মনসিংহে দলের দ্বিতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সভাপতি এবং শেখ মুজিবুর রহমান সাধারণ সম্পাদক হন।
১৯৫৫ সালের ২১-২৩ অক্টোবর ঢাকার সদরঘাটের রূপমহল সিনেমা হলে দলের তৃতীয় কাউন্সিল অধিবেশনে আওয়ামী লীগ অসাম্প্রদায়িক সংগঠনে পরিণত হয়। ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে দলের নতুন নামকরণ হয় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ। পরে কাউন্সিল অধিবেশনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে মওলানা ভাসানী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বহাল থাকেন। ৫৭ সালে কাগমারী সম্মেলনে দলের আন্তর্জাতিক নীতির প্রশ্নে সোহরাওয়ার্দী-ভাসানীর মতপার্থক্যের কারণে প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগ ভেঙে যায়। ভাসানীর নেতৃত্বে গঠিত হয় ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)। আর মূল দল আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন মওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ ও সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান বহাল থাকেন। ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি হলে আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ড স্থগিত করা হয়। ১৯৬৪ সালে দলটির কর্মকাণ্ড পুনরুজ্জীবিত করা হয়। এতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে তর্কবাগীশ ও শেখ মুজিবুর রহমান অপরিবর্তিত থাকেন।
১৯৬৬ সালের কাউন্সিলে দলের সভাপতি পদে নির্বাচিত হন শেখ মুজিবুর রহমান। তার সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তাজউদ্দীন আহমদ। এর পরে ১৯৬৮ ও ১৯৭০ সালের কাউন্সিলে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অপরিবর্তিত থাকেন। এই কমিটির মাধ্যমেই পরিচালিত হয় মহান মুক্তিযুদ্ধ। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রথম কাউন্সিলে সভাপতি হন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান। ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু স্বেচ্ছায় সভাপতির পদ ছেড়ে দিলে সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয় পঁচাত্তরে কারাগারে ঘাতকদের হাতে নিহত জাতীয় নেতাদের অন্যতম এএইচএম কামরুজ্জামানকে। সাধারণ সম্পাদক পদে বহাল থাকেন মো. জিল্লুর রহমান। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আসে আওয়ামী লীগের ওপর মরণাঘাত। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলে আওয়ামী লীগের রাজনীতি আবারো স্থগিত করা হয়। ১৯৭৬ সালে ঘরোয়া রাজনীতি চালু হলে আওয়ামী লীগকেও পুনরুজ্জীবিত করা হয়। এতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করা হয় যথাক্রমে মহিউদ্দিন আহমেদ ও বর্তমান সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীকে। ১৯৭৭ সালে এই কমিটি ভেঙে করা হয় আহ্বায়ক কমিটি। এতে দলের আহ্বায়ক করা হয় সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীনকে। ১৯৭৮ সালের কাউন্সিলে দলের সভাপতি করা হয় আবদুল মালেক উকিলকে এবং সাধারণ সম্পাদক হন আব্দুর রাজ্জাক। এরপরই শুরু হয় আওয়ামী লীগের উত্থানপর্ব, উপমহাদেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হিসেবে গড়ে তোলার মূল প্রক্রিয়া। সঠিক নেতৃত্বের অভাবে দলের মধ্যে সমস্যা দেখা দিলে নির্বাসনে থাকা বঙ্গবন্ধুকন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। দেশে ফেরার আগেই ১৯৮১ সালের কাউন্সিলে শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। এদিকে, আজ ২৩ জুন ৭১ বছরে পা দিচ্ছে বংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী হবে স্মরণ কালের মাঝে জমকালো, রঙিন ও আনন্দ-উৎসবমুখর। ইতোমধ্যে দলটি ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী রাঙাতে নিয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। ঘোষণা করেছে মাসব্যাপী কর্মসূচি।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ৭০তম প্রতিষ্ঠাবাষির্কী রঙিন এবং উৎসবময় করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ৭১তম জন্মদিনকে স্মরণীয় করে রাখতে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ২৪ জুন রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভার আয়োজন করবে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন ২৩ জুন সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে প্রতিষ্ঠাবাষির্কীর কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। ২৫ জুন ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। জাতীয় সঙ্গীত ও দলীয় সঙ্গীতের পাশাপাশি স্বাধীনতা ও দেশের গান থাকবে এই আয়োজনে। যেখানে দেশের সনামধন্য শিল্পীরা গান গাইবেন। এছাড়া আলোচনা সভা, আলোকচিত্র প্রদর্শনী, র্যালি, প্রচার ও পুস্তিকা প্রকাশ, রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতাসহ থাকছে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময়। এবারই প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে মাসব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।