‘আগাছা নিধনের প্রস্তুতি সম্পন্ন, এখন শুরু হবে উপড়ানো’
ফারজানা ইসলাম লিনু :: আমার প্রথম উপন্যাস “রুমানা” নিয়ে উচ্ছ্বসিত এক শুভাকাঙ্ক্ষী ইনবক্সে নক করলেন, আজ মেলায় আসবো তোমার সাথে দেখা করতে। আমি উচ্ছ্বাস আরো দ্বিগুণ বাড়িয়ে বললাম, সুস্বাগতম। শুধুই কি আমার সাথে দেখা করা?
না না, রথ দেখার সাথে কলাও বেচা হবে?
রথ দেখে তো কলা বেচা হবে না। কলা কিনে নিতে হবে।
কেন? কেন?
কারণ এইবারের বই মেলায় নতুন নতুন লেখকের অজস্র বই বেরিয়েছে। নব্য লেখকদের লিখালিখিতে উৎসাহ প্রদানের জন্য আপনাকে বইগুলো বই কিনে নিতে হবে। আপনার মতো একজন সত্যিকারের সাহিত্যানুরাগী ব্যক্তি সেইসব বই পড়লে বাংলা সাহিত্যে অনেক সমৃদ্ধ হবে। আমরা অধম লেখককূল আজন্ম আপনার এই অবদানের কথা শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করবো।
বিমুগ্ধ সেই পাঠকের সপ্রতিভ উত্তর, টাকা খরচ করে বই কিনা কিনিতে আমি নাই। তুমি তোমার অটোগ্রাফ সহ আমার জন্য দুই কপি “রুমানা” উপহার হিসেবে রাখিও। পড়া না পড়া আমার ব্যাপার।
উপহার কেন? আপনার যত কপি ইচ্ছা কিনে নিয়ে যান।
বললাম না, বইয়ের পেছনে খরচ করার অতো টাকা নাই।
অহহো আপনার এই অর্থনৈতিক দুর্দশার কথা আমার জানা ছিলো না। কি আর করা? বই মেলায় আসার সময় একটা চ্যাপা ড্যাপা কানা টিনের প্লেইট নিয়ে আসবেন।
কেন? কেন? চ্যাপা ড্যাপা কানার টিনের প্লেইট কেন?
এইতো বই মেলার গেইটের সামনে কানা বর্তন পেতে বসবেন, আমি আপনাকে দুই কপি “রুমানা” ভিক্ষা দিয়ে শুভসূচনা করবো। তারপর সবগুলো স্টলে গিয়ে আপনার জন্য বই ভিক্ষা চাইবো।
বই কেনার টাকা নেই, বই পড়ার ইচ্ছাও নেই। কিন্তু লেখিকার সাথে দেখা করে রথ দেখার ষোলকলা পূর্ণ করতে চান তাদেরকে বই ভিক্ষা দিতেও বিবেকে বাধে। পরক্ষণেই বই ভিক্ষা দেওয়ার সিদ্ধান্তটা বাতিল করতে হলো।
ফেসবুকে লিখা পড়ার নাম করে ফ্রেন্ড লিস্টে ঘাপটি মেরে থেকে ইনবক্সে নানা বিতং করে যন্ত্রণা দানকারীদের সবিনয়ে বলতে চাই, অহেতুক সময় ও অর্থ নষ্ট না করে সৃষ্টিশীল কর্মে মনোনিবেশ করুন। কষ্টার্জিত টাকার সুষম ব্যবহার নিশ্চিত করুন।
আমার এই উপদেশ উলুবনে মুক্তা ছড়ানোর শামিল। অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করার জন্য সুহৃদ এই শুভাকাঙ্ক্ষীকে আনফ্রেন্ড করার চেয়ে ভালো কোন পন্থা আমার সামনে আপাতত নেই।
এতো বড় আর্থিক সংকট মাথায় নিয়ে মোবাইলের এমবি খরচ করে কন্যা কিংবা জননীর বয়সী বেগানা মহিলাদের ছবিতে নাইচ, চুইট, ওয়াও লিখা স্টিকার পাঠিয়ে দুনিয়া ও আখিরাতের দুর্ভোগ ডেকে আনা লোক গুলোকে এখনই রক্ষা করতে হবে।
আগাছা নিদনের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রেখেছি, যে কোন সময় উপড়ানো শুরু করবো।
ভোটের সময় আমরা “ভোট চাই ভোটারের, দোয়া চাই সকলের।”
সার্বজনীন এই পরিচ্ছন্নতা অভিযানে আমিও সকলের দোয়া চাই।
“বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না”, নাইচ, চুইট, ওয়াও, লিখা স্টিকার পাঠিয়ে মানুষ কিন্তু আনফ্রেন্ড হয়, ব্লক খায়।