আগ্নেয়াস্ত্র হাতে যুবক, সিলেটে তোলপাড়
ওয়েছ খছরু-
মাথায় কালো হেলমেট। পরনে জ্যাকেট , জিন্স প্যান্ট। পায়ে স্যু। স্মার্ট এক যুবক। হাতে অস্ত্র নিয়ে গুলি লোড করছে। সিলেটে অস্ত্র হাতে থাকা ওই যুবকের ছবি এখন ভাইরাল।চেনা যাচ্ছে না যুবকটিকে। নানা জন নানা পরিচয় দিচ্ছে। পুলিশও বিভ্রান্তিতে। মাথায় হেলমেট থাকায় তার পরিচয় শনাক্ত করতে পারছে না পুলিশ। ঘটনাটি সিলেটের টিলাগড় এলাকার। ৪ঠা জানুয়ারি ওই এলাকায় ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়েছিল। পুলিশ গুলি চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনার দিন ছাত্রলীগের ওই কর্মী অস্ত্র হাতে মহড়া দিয়েছে। কালো রঙের পিস্তল হাতে দেখা যায় ওই কর্মীকে। শুধু আগ্নেয়াস্ত্র নয়, ওই দিন দা, রামদা হাতে নিয়ে প্রকাশ্যে মহড়া দিয়েছে ছাত্রলীগ কর্মীরা। সিলেটের শাহপরান থানার ওসি আক্তার হোসেন নিজেও জানিয়েছেন, ‘ওই দিন পুলিশ গুলি না ছুড়লে পরিস্থিতি খারাপ হতো। পুলিশের কারণে অস্ত্রধারীরা সংঘর্ষে জড়ানোর সাহস পায়নি।’ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সিলেটের এমসি কলেজে বর্ণাঢ্য মিছিল বের করে ছাত্রলীগের রঞ্জিত সরকার গ্রুপের কর্মীরা। ক্যাম্পাসের দখল দীর্ঘ দিন ধরে ছাত্রলীগের ওই গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে। বর্ণাঢ্য ওই মিছিলটি পুকুরপাড় এলাকায় যাওয়া মাত্র ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়ে বাইরে থাকা আজাদ বলয়ের নিয়ন্ত্রিত রায়হান গ্রুপের কর্মীরা। এ নিয়ে ক্যাম্পাসের ভেতরে আজাদ-রঞ্জিত গ্রুপের কর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ঘটনাস্থলে ওই দিন পুলিশ টিম নিয়ে উপস্থিত ছিলেন সিলেটের শাহপরান থানার ওসি আক্তার হোসেন। যখন ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হচ্ছিল তখন ওসি পুলিশ নিয়ে মাঝখানে ঢুকে পড়েন। এ সময় সংঘর্ষ থামাতে ফাঁকা গুলি করে পুলিশ। পুলিশের গুলির মুখে ছাত্রলীগের কর্মীরা দু’দিকে অবস্থান নেয়। পুলিশের বাধার মুখেও রঞ্জিত গ্রুপের কর্মীরা এমসি কলেজের মূল ফটক দিয়ে বের হয়ে সিলেট-তামাবিল সড়ক হয়ে টিলাগড় পয়েন্টে চলে যায়। এ সময় পুলিশ তাদের ধাওয়া দিলে তারা গোপালটিলা এলাকায় চলে যায়। রঞ্জিত গ্রুপের কর্মীরা চলে যাওয়ার পরপরই টিলাগড় পয়েন্ট এলাকায় অবস্থান নেয় রায়হান গ্রুপের কর্মীরা। এ সময় তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়ে। পুলিশ এক পর্যায়ে রায়হান গ্রুপের কর্মীদের পিছু হটাতে ফাঁকা গুলি ছুড়ে। কিন্তু পুলিশের গুলি উপেক্ষা করে তারা টিলাগড় পয়েন্টে কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। গাড়ি ভাঙচুর করে। এতে করে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশের সঙ্গে যখন সংঘর্ষ চলছিল তখন অস্ত্র হাতে ওই যুবক টিলাগড় পয়েন্ট এলাকায় অবস্থান নেয়। ছাত্রলীগ নেতাদের অবস্থানের সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে সে অস্ত্রের মধ্যে গুলি লোড করছিল। এর একটু পরে যখন টিলাগড় পয়েন্ট এলাকায় র্যাব নামে তখন ওই কর্মীরা পালিয়ে যায়। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। পুলিশ জানিয়েছে, ছাত্রলীগের রায়হান গ্রুপের কর্মীরা কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। এ সময় পয়েন্ট এলাকায় ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে। তবে তাদের লক্ষ্য করে কোনো গুলি বর্ষণের ঘটনা ঘটেনি। পুলিশের পক্ষ থেকে ওই দিন ৩২ রাউন্ড গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার দিন অদূরে থাকা যুবকের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র থাকার বিষয়টি পুলিশ লক্ষ্য করেনি। পুলিশের চোখে পড়লেই অবশ্যই তারা এই অস্ত্রধারীকে গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করতো। শাহপরান থানার ওসি জানিয়েছেন, এখন তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই অস্ত্রধারীর ছবি পেয়েছেন। ছবি পাওয়ার পরপরই তারা তদন্ত শুরু করেছেন। কে এই অস্ত্রধারী- সেটি বের করাই এখন তাদের কাজ। পুলিশের কর্মকর্তারা ইতিমধ্যে সোর্স নিয়োগ করেছেন। সূত্র জানায়, ওই ছাত্রলীগ কর্মীর বাসা নগরীর শাহজালাল উপশহর এলাকায়। সে টিলাগড় গ্রুপ ছাত্রলীগের হয়ে সংঘর্ষে অংশ নিয়েছিল। র্যাব আসার সঙ্গে সঙ্গে সে গাঢাকা দিয়েছে। ঘটনার পর থেকে তাকে আর টিলাগড় পয়েন্ট এলাকায় দেখা যায়নি।