আজমিরীগঞ্জ নির্বাচনঃ আওয়ামী লীগ কিছু কি শিখবেন?
হাসান মূর্শেদ(ফেসবুক থেকে)- হবিগঞ্জ জেলার আজমিরীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচনে নৌকা প্রতীক বিপুল ভোটে পরাজিত হয়েছে। স্বাধীনতার প্রতীক, মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক, বঙ্গবন্ধুর প্রতীক নৌকার পরাজয় আনন্দের নয়। আমি ঐ অঞ্চলের ভোটার নই, কিন্তু ঐ অঞ্চলের হাজার হাজার আওয়ামী লীগ সমর্থক যারা নৌকার পরাজয়ে বেদনার্ত হবার কথা ছিলো তারা আজ আনন্দিত। এই আনন্দ বড় সংকট ও সংবেদনের। আওয়ামী লীগের তৃণমুলের নেতাকর্মীকে বাধ্য করা হয়েছিলো নৌকার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে। মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ উদ্দীন ভাইয়ের কথা মনে পড়ছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি। আইয়ূব বিরোধী আন্দোলনের সময় স্কুলে আইয়ূব খানের ছবি ভাংচুর করেছিলেন, এই অপরাধে যে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান তাকে শাস্তি দিয়েছিলো সে পরে জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা আর তার ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ২০ বছর ধরে- মিছবাহ উদ্দীন ভুঁইয়া। ‘দাসপার্টর খোঁজে’ লিখতে গিয়ে জেনেছি ’৭০ এর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুকে এরা আজমিরীগঞ্জ জনসভা করতে দেয়নি,মুক্তিযুদ্ধে যথারীতি বিতর্কিত ভূমিকা। এই মিছবাহ উদ্দীন ভুঁইয়া ছিলেন নৌকার প্রার্থী। এর আগে আরো চারবার নির্বাচন করে হেরেছেন- তার জীবনে কোন ভোটে জেতার ইতিহাস নেই। বিগত উপজেলা নির্বাচনে ও সে ছিলো আওয়ামী লীগের প্রার্থী। তার বিরুদ্ধে যিনি স্বতন্ত্র হিসাবে জিতেছিলেন তিনি ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারন সম্পাদক আতর আলী।
বিপুল জনপ্রিয় আতর আলী গত এপ্রিলে হৃদরোগে মারা গেলে তার ছেলে যুবলীগ নেতা আল আমীন প্রার্থীতা চেয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় তাকে আক্রমন করে হত্যা করা হয়। এই হত্যা মামলার প্রধান আসামী এই ভুঁইয়া গন। দুই মাসের ব্যবধানে বাবা ও ভাইকে হারানো তরুন আলাউদ্দীন স্বতন্ত্র নির্বাচনের ঘোষনা দেন। আর আওয়ামী লীগ আবারো বারবার পরাজিত হত্যা মামলার আসামীকে নৌকা বরাদ্দ দেয়। সিনিয়র সহ সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ উদ্দিন সহ যারা প্রতিবাদ করেছেন তাদেরকে দল থেকে শুধু বহিস্কারই করা হয়নি, নানা মামলা হামলায় ভোগান্তিতে ফেলা হয়েছে। এই ভাটি অঞ্চল যেখানে নৌকা নিয়ে কলাগাছ দাঁড়ালেও পাশ করে আসার কথা, সেখানে নৌকা পরাজিত হয়েছে বিপুল ভোটে, নিজের সেন্টারে পর্যন্ত পাশ করতে পারেনি। তরুন আলাউদ্দীন উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন- ধারনা করি আওয়ামী লীগের তৃণমুলের ভোটের নৌকার বদলে আনারসে পড়েছে। আওয়ামী লীগের ভোটারদেরকে আওয়ামী লীগ বাধ্য করেছে দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যেতে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের যদি দলের প্রতি ন্যনতম দায়বদ্ধতা থাকতো তারা সারা জীবনের পরাজিত খুনের আসামীকে নৌকা না দিয়ে এই তরুনকে তাদের প্রার্থী করতো। সে আরো পরিশুদ্ধ আওয়ামী পরিবারের সন্তান, দুই মাসের মধ্যে বাবা ভাইকে হারানোয় মানুষের সমবেদনা ও আবেগ তার প্রতি। আওয়ামী লীগ এই আবেগকে উপেক্ষা করেছে কারন ভুঁইয়াদের বিপুল টাকা এবং জেলা নেতৃত্বের সাথে আত্মীয়তা।
বঙ্গবন্ধু মুসলিম লীগ নেতৃত্বের এইসব অনৈতিকতার বিরুদ্ধে লড়াই করে আওয়ামী লীগ গড়ে তুলেছিলেন। এখন আওয়ামী লীগের নেতারা ও একই অপকর্মে জড়িত। দলের চেয়ে, কর্মী সমর্থকদের প্রত্যাশার চেয়ে টাকা আর আত্মীয়তা মুখ্য হয়ে গেছে। এর পরিনাম কী হতে পারে আজকের আজমিরীগঞ্জ এর উদাহরন। অভিনন্দন হাওর পাড়ের আজমিরীগঞ্জের সচেতন বিবেকবান মানুষদের, অভিননন্দন আলাউদ্দীন- যাত্রা মাত্র শুরু মানুষের পাশে কিন্তু থাকতে হবে। আর আওয়ামী লীগ, কিছু শিখেন সম্ভব হলে এসব আপাতঃ ছোট ছোট ঘটনা থেকে। গনবিরোধী লোকজনকে নৌকার ইজারা দিয়ে নিজেদের নিবেদিতপ্রাণ কর্মী সমর্থকদের বাধ্য করবেন না বিপরীত সিদ্ধান্ত নিতে।