আজ মহান বিজয় দিবস। বাঙালীর ইতিহাসে সবচেয়ে স্মরণীয় দিন। বিশ্বের বুকে স্বাধীন জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর দিন। বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়নের দিন। ১৯৫২ সালে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবি নিয়ে স্বাধিকারের জন্য আন্দোলন শুরু হয়েছিল তা পূর্ণতা পায় ১৯৭১ সালের ৯ মাসব্যপী মুক্তিযুদ্ধে। যে যুদ্ধ পুরো বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। যে যুদ্ধ তৎকালীন বিশ্বের দুই পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল। যৌথবাহিনী ঢাকা অবরোধ করে পাকবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের আত্মমসমর্পণের আহবান জানাচ্ছিলেন। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া বার বার যোগাযোগ করছিলেন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সাথে। পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্র চেষ্টা করছিল চীনকে এই যুদ্ধে জড়িয়ে ফেলতে। এটা বুঝতে পেরে সোভিয়েত ইউনিয়ন চীন সীমান্তে সেনা মোতায়েন শুরু করে। তখন চীনের এত শক্তি ছিল না তাদেরকে আটকাবার। তাই চীন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া থেকে নিজেকে বিরত রাখে।

১৪ ডিসেম্বরই বোঝা গিয়েছিল, পাকিস্তানি বাহিনীর মরণঘণ্টা বেজে গেছে। ঢাকা থেকে রাওয়াল পিন্ডিতে বার্তা পাঠানোর সংখ্যা সেদিন অনেক বেড়ে গিয়েছিল আকস্মিক ভাবে। এই সব বার্তায় ফুটে উঠছিল চরম হতাশার সুর। সকাল ১০টায় প্রেরিত এক বার্তায় বলা হয়, ‘আমরা আশ্বাসের ওপর বেঁচে আছি। কিছু ঘটবে কী না অনুগ্রহ করে জানান, যা ঘটবার সেটা অতি দ্রুত হতে হবে।’ আরেক বার্তায় বলা হয়, ‘আমাদের কোনো মিসাইল নেই, আমরা কীভাবে গোলা নিক্ষেপ করব? কোনো বিমানবাহিনী নেই। বিমান হামলা হয়ে উঠেছে দুশ্চিন্তার কারণ।’ ১৫ ডিসেম্বর দিনটি শুরু হয়েছিল পূর্ব পাকিস্তানে সরকারবিহীন পরিস্থিতিতে এবং বাতাসে পাওয়া যাচ্ছিল আত্মসমর্পণের আভাস। ভেতরের খবর অবশ্য সবার জানা ছিল না, আগের দিন বিকেলে গভর্নর ও নিয়াজির কাছে প্রেরিত বার্তায় প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জানান, ‘আপনি এখন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছেন, যখন আর প্রতিরোধ কোনোভাবেই সম্ভব নয়, সেটা কোনো কাজের কথাও হবে না। এখন যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য সব রকম ব্যবস্থা আপনাদের নেওয়া উচিত।’ তবে সর্বশেষ এই বার্তাতেও আত্মসমর্পণ কথাটা ঊহ্য রাখা হয় এবং দায়দায়িত্ব চাপানো হয় ইস্টার্ন কম্যান্ডের ওপর।

কী ঘটছিল পর্দার অন্তরালে, তার এক বিবরণ দিয়েছেন ঢাকাস্থ জাতিসংঘ উদ্বাস্তুবিষয়ক কর্মকর্তা জন কেলি। ইস্টার্ন কম্যান্ডের হেডকোয়ার্টারসে জেনারেল নিয়াজি চাইছিলেন রাওয়ালপিন্ডি থেকে সুস্পষ্ট নির্দেশ আসুক আত্মসমর্পণের জন্য। সকালে তিনি গভর্নর মালিকের কাছ থেকে চিঠি পেয়েছিলেন ত্বরিত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। গভর্নর লিখেছিলেন, ‘আপনার ও আমার কাছে প্রেসিডেন্ট প্রেরিত বার্তার পরিপ্রেক্ষিতে আপনার দিক থেকে কী ব্যবস্থা নিয়েছেন, সেটা আমি জানতে চাইছি। বার্তায় সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে আপনি সংঘাত বন্ধের জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিন এবং সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য, পশ্চিম পাকিস্তানের ও এখানকার বিশ্বস্তজনদের জীবন রক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। যা দরকার সেটা করার জন্য আপনাকে অনুরোধ করছি।’ নিয়াজি পিন্ডিতে জেনারেল হামিদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন।

জেনারেল হামিদ তাকে ‘নির্দেশমতো কাজ করতে’ বলেন। নিয়াজি আকুল হয়ে প্রেসিডেন্ট আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে কথা বলতে চান। দেশের এই গুরুতর পরিস্থিতিতে ইয়াহিয়ার তখন অন্য দশা, নিয়াজি লিখেছেন, ‘জেনারেল হামিদ বললেন তিনি (ইয়াহিয়া) বাথরুমে গেছেন। আদতে তিনি বাথরুমে ছিলেন না, অতিরিক্ত মদ্যপানে তার তখন বেসামাল অবস্থা। এরপর এয়ার মার্শাল রহিম খান আমার সঙ্গে কথা বলেন, তাঁকেও মনে হচ্ছিল মাতাল, তিনি চাপ দেন আমি যেন প্রেসিডেন্টের হুকুম তামিল করি।’ এর পরপরই মালিক-ফারমান আলী মুসাবিদা করা লড়াইয়ে ক্ষান্ত দেয়ার বার্তা ভারতীয়দের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা নেন নিয়াজি।

১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১।সকাল ১০ টা বেজে ৪০ মিনিট। যৌথবাহিনী ঢাকাতে প্রবেশ করে। এর আগেই অবশ্য বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী তার সহযোদ্ধাদের নিয়ে মিরপুর ব্রিজ দিয়ে ঢাকায় ঢুকে পড়েন। একাত্তরের এই দিনে জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক কর্মকর্তা জন কেলি সকাল বেলায় ঢাকা সেনানিবাসের কমান্ড বাঙ্কারে পৌঁছেন। সেখানে লে. জেনারেল নিয়াজীকে পাওয়া গেল না। বিধ্বস্ত অবস্থায় পাওয়া গেল জেনারেল রাও ফরমানকে। রাও ফরমান জন কেলিকে বলেন, মিত্রবাহিনীর কাছ থেকে তারা আত্মসমর্পণের প্রস্তাব মেনে নিয়েছে। কিন্তু মিত্রবাহিনীর সাথে তাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ায় এই খবরটি তাদের জানাতে পারছে না। এই সময় জন কেলি রাও ফরমানকে জাতিসংঘের বেতার সংকেত ব্যবহারের প্রস্তাব দেন। এ সময় আত্মসমর্পণের জন্য সময় নির্ধারণ করা হয় বিকেল সাড়ে ৪টা। ঢাকাবাসী যখন এই আত্মসমর্পণের সময় জানতে পারল তখন তারা মেতে উঠে আনন্দ উল্লাসে। রেসকোর্স ময়দান লোকে লোকারণ্য। পাকবাহিনীর জয়েন্ট কমান্ডার লেফটেনেন্ট জেনারেল নিয়াজি পরাজয় স্বীকার করে আত্মসমর্পণ দলিলে স্বাক্ষর করেন। আর যৌথবাহিনীর পক্ষে স্বাক্ষর করেন লেফটেনেন্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা। এছাড়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সেসময়ের ডেপুটি কমান্ডার-ইন-চীফ ইয়ার কমডোর এ কে খন্দকার উপস্থিত ছিলেন এই স্মরণীয় অনুষ্ঠানে। প্রায় ৯৩০০০ পাকিস্তানি সেনা আত্মসমর্পণ করে। ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর এটাই ছিল সবচেয়ে বড় আত্মসমর্পণের ঘটনা। অভ্যুদয় হলো বাংলাদেশের।

একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর বিকেলে রেসকোর্স ময়দানে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত এ কে খন্দকার বাঙালী জাতির উত্তেজনাপূর্ণ সেই মূহূর্তের বর্ণনা দিয়েছেন তিনি নিজে। তিনি লিখেছেন- ১৬ ডিসেম্বর এলেই স্মৃতির ঝাঁপি খুলে বসতে হয়, মনে পড়ে যুদ্ধদিনগুলোর কথা। কী গভীর দেশপ্রেম নিয়ে যুদ্ধটি চালিয়ে নিয়ে গেছি আমরা। গুটিকয়েক দেশদ্রোহী ছাড়া গোটা দেশের মানুষ তাদের সর্বস্ব উজাড় করে যুদ্ধ করেছে নয়তো তাতে সহযোগিতা করেছে। যুদ্ধদিনের প্রতিটি দিনই তো বিশেষ। তবে আমার কাছে সবচেয়ে স্মরণীয় হয়ে আছে ১৬ ডিসেম্বর বিকেল ৪.৩১ মিনিটে তখনকার রেসকোর্স ময়দানে, এখনকার রমনা মাঠে, যৌথবাহিনীর কাছে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের ঘটনাটি। কীভাবে এই ঘটনাটি ঘটল তা যেন এখনও মনের চোখে দেখতে পাই। আমি তখন কলকাতায়। ১৬ ডিসেম্বর সকালের দিকে কিছু কাজে বাইরে গেছিলাম। ফিরলাম বেলা দশটার দিকে। ফিরে দেখি আমার জন্য কিছু লোক অপেক্ষা করছেন। তাদের কাছেই জানলাম পাকিস্তানি বাহিনী সেদিন বিকেলে যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করবে। সেজন্য ঢাকার রেসকোর্সে একটি ছোট্ট অনাড়ম্বর অনুষ্ঠান হবে। আর আমাকে সে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ও মুক্তিবাহিনীর প্রতিনিধিত্ব করতে হবে।

প্রবাসী সরকারে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক ছিলেন জেনারেল এম এ জি ওসমানী। তাকে বাদ দিয়ে আমাকে প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে বেছে নেয়ার কারণ ছিল তখন জেনারেল এম এ জি ওসমানী ছিলেন সিলেটে। মনে রাখতে হবে তখন তো এত মোবাইল বা এ জাতীয় কোনো মাধ্যম ছিল না যে তাঁর সঙ্গে খুব দ্রুত যোগাযোগ করা যেত। তাই আমাকে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য ডেকে নেয়া হয়েছিল।

যাহোক, আমাদের তখনই আগরতলা হয়ে ঢাকায় রওনা দেবার কথা ছিল। আমাদের জন্য তখন কোলকাতার দমদম এয়ারপোর্টে বিশেষ বিমান অপেক্ষা করছিল। আমরা তাই চলে গেলাম দমদমে। আমার সঙ্গে ছিলেন জেনারেল শিশু ও আরও দুজন এখন যাদের নাম আর মনে করতে পারছি না। দমদমে পৌঁছে বিমানের সিঁড়ির দিকে এগিয়ে গেলাম; উঠব—এমন সময় দেখি ভারতীয় বাহিনীর পক্ষে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে প্রতিনিধিত্বকারী জেনারেল অরোরা সস্ত্রীক এসেছেন একটি জিপে করে। তিনি বয়সে আমার অনেক সিনিয়র। তাই তাঁকে সম্মান দেখিয়ে আমি বিমানের দরজা থেকে সরে দাঁড়ালাম। তাঁকে আগে যেতে অনুরোধ করলাম। কিন্তু জেনারেল অরোরা বিমানে উঠলেন না; তিনি আমার পিঠে হাত দিয়ে বললেন, ‘‘আপনি মুক্তিযুদ্ধের কমান্ডার, আপনিই আগে উঠুন।’’ আমি অরোরার এ ব্যবহারে সত্যিই মুগ্ধ হলাম। আমাকেই আগে উঠতে হল, এরপর উনার স্ত্রী ও সবশেষে উনি নিজে। বিমানের দরজা বন্ধ হল। আমরা রওনা দিলাম আগরতলা বিমানবন্দরের উদ্দেশে। ঢাকার ওপর দিয়েই উড়ে গেলাম আমরা। কেন ঢাকা বিমানবন্দরে না গিয়ে আমরা আগরতলায় গেলাম সে প্রশ্ন থাকতে পারে। ঢাকা বিমানবন্দরের রানওয়ে তখন এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল যে কোনো বিমান সেখানে অবতরণ করার মতো অবস্থা ছিল না। তাই আমরা আগরতলা পৌঁছে সেখান থেকে হেলিকপ্টারে ঢাকায় যাব—এমনই পরিকল্পনা।

আগরতলা বিমানবন্দরে পৌঁছে দেখলাম, সাতটি হেলিকপ্টার আমাদের জন্য প্রস্তুত, আমাদের ঢাকায় নিয়ে যেতে। আমরা রওনা দিলাম। ঢাকা বিমানবন্দরে পৌঁছে দেখি লোকে লোকারণ্য। আমাদের আসার খবরে সাধারণ মানুষ সেখানে অপেক্ষা করছেন। কোনো রকমে ভিড় ঠেলে আমাদের যেতে হল। জিপে উঠে রেসকোর্সে পৌঁছুতে পৌঁছুতে দেখি পথে পথে হাজারও মানুষ নেমে এসেছেন। ময়দানেও তেমনই, হাজার হাজার লোকের ভিড়। সবার মধ্যে বিরাট আনন্দ আর কৌতূহল। এত ভিড়ের মাঝে সামান্য একটু জায়গা ফাঁকা রাখা ছিল, সেখানে একটি টেবিল পাতা। সামনেই ঢাকা ক্লাব, সেখান থেকে দুটো চেয়ার এনে বসার ব্যবস্থা করা গেল। বসলেন ভারতীয় বাহিনীর পক্ষে জেনালে অরোরা এবং পাকিস্তানি বাহিনীর পক্ষে জেনারেল নিয়াজী। তারপর আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করলেন দুজনে। স্বাক্ষরের পরপরই সিনিয়র পাকিস্তানি অফিসারদের ওখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হল। কারণ আত্মসমর্পণ করেছে বলে পাক সেনা অফিসারদের নিরাপত্তার দায়িত্বভার আমাদের ওপরই বর্তে গেছে। ওদিকে আশেপাশে ঘিরে থাকা হাজার মানুষ উল্লাসে মুখর হয়ে ঊঠলেন। অনেকেই এগিয়ে এসে আমাদের জড়িয়ে ধরলেন। কাঁদছিলেন প্রায় সবাই। কাঁদতে কাঁদতে তারা বললেন, ‘‘আজ থেকে আমরা শান্তিতে ঘুমাব।’

মহান বিজয় দিবস উদযাপনে ব্যাপক কর্মসূচি ::
মহান বিজয় দিবস উদযাপনে রাষ্ট্রিয় পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসূচি পালনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রত্যুষে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে দিবসের সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তববক অর্পণের মাধ্যমে একাত্তরের শহীদদের শ্রদ্ধা জানাবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর নেতৃত্বে উপস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি কূটনীতিকবৃন্দ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মিত্রবাহিনীর সদস্য হিসেবে অংশগ্রহণকারী ভারতীয় সেনাবাহিনীর আমন্ত্রিত সদস্যগণ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মুক্তিযুদ্ধে শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। সকাল ১০ টায় তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে সম্মিলিত বাহিনীর বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম ভিত্তিক যান্ত্রিক বহর প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। রাষ্ট্রপতি এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করবেন। প্রধানমন্ত্রীও কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।

এ উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বাংলাদেশ শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিশুদের চিত্রাঙ্কন, রচনা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনের আয়োজন করবে। এছাড়া মহানগর, জেলা ও উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহিদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা দেয়া হবে। বাংলাদেশ ডাক বিভাগ স্মারক ডাক টিকিট প্রকাশ করবে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দেশের শান্তি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও উপাসনার আয়োজন করা হবে এবং এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম, হাসপাতাল, জেলখানা, সরকারি শিশুসদনসহ অনুরূপ প্রতিষ্ঠানসমূহে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। দেশের সকল শিশু পার্ক ও জাদুঘরসমূহ বিনা টিকিটে উন্মুক্ত রাখা হবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে অনুরূপ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হবে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস সমূহে দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হবে।

বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জাসদ, সিপিবি, ওয়াকার্সপার্টি, গণফোরাম সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয়, বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটসহ রাজধানীর বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপন করবে। এর মধ্যে আছে সকালে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ, শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া, মিলাদ মাহফিল, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আওয়ামী লীগের তিনদিন ব্যাপী কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবন ও সারাদেশের সংগঠনের কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল ৬টা৩৪ মিনিটে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন। সকাল ৮টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন। সকাল দশটায় টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদনসহ জিয়ারত, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল।

বিকাল তিনটায় বিজয় শোভা যাত্রা সহকারে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের স্থান ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমবেত হয়ে শিখা চিরন্তনে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর অভিমুখে বিজয় র্যালী শুরু হবে। পরের দিন ১৭ ডিসেম্বর বিকেল ৩টায় বঙ্গবন্ধু আর্ন্তজাতিক সন্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে সভাপতিত্ব করবেন। এছাড়াও ১৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬ টায় রাজধানীর রবীন্দ্র সরোবরে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে মনোঞ্জ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের শুক্রবার এক বিবৃতিতে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মসূচি গ্রহণ করে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য দেশের সকল শাখা আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা-কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী ও সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn