আল-হেলাল,সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি : সুনামগঞ্জের ধোপাজান চলতি নদী হতে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন এর দায়ে নৌপুলিশের হাতে আটককৃত ৬টি বালিবুঝাই নৌকার মালিক ও বালি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ৪ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছে ভ্রাম্যমান আদালত। আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইমরান শাহরীয়ার এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন,মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে,আটককৃত ৬টি নৌকার মধ্যে ৩ টি নৌকাকে ১ লক্ষ টাকা করে তিন লক্ষ টাকা এবং ২টি নৌকাকে ৫০ হাজার করে ১ লক্ষ টাকা ও ১ টি নৌকাকে ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করে মোট ৪ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। ৯ আগস্ট সোমবার সকাল ৬ টায় সুনামগঞ্জের টুকের বাজার নৌ পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ রাকিবুল ইসলাম এর নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করে ৬টি নৌকা আটক করে নৌ পুলিশের টহলদল। আটককৃত ৬ টি নৌকা জব্দ করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইমরান শাহরিয়ারের নিকট হস্তান্তর করেন তারা।
একটি সুত্র জানায় ৮ আগস্ট রোববার দিবাগত রাত ২ টার সময় বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সলুকাবাদ ইউনিয়নের ভাদেরটেক (মুনিপুরিহাটি ঘাট) ও সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের হুরারকান্দা গ্রামের কিছু লোকজন মিলে চালক (সুকানি) আলী কোস্তার পিতামৃত শামস উদ্দিন গ্রাম কাটাখালি, ইউনিয়ন ধনপুর, থানা বিশ্বম্ভরপুর কর্তৃক পরিচালিত মক্কা-মদিনা ৪ নৌ পরিবহন,পিংকু চৌধুরী পিতামৃত নিরঞ্জন চৌধুরী, সাং কৌয়া, থানা বিশ্বম্ভরপুর পরিচালিত আলমগীর নৌ পরিবহন, আমিনুর রহমান পিতামৃত ছালিম উল্লাহ, সাং বর্মাত্তোর,থানা সুনামগঞ্জ সদর পরিচালিত ফারিয়া এন্ড ফাহিম এন্টারপ্রাইজ, শহীদুল ইসলাম পিতা মাইন উদ্দিন সাং কাটাখালি, থানা বিশ্বম্ভরপুর পরিচালিত আল-আমিন নৌ পরিবহন, মোঃ হাফিজুর রহমান পিতামৃত আস্কর আলী সাং ফুলভরি,থানা বিশ্বম্ভরপুর পরিচালিত মক্কা-মদিনা ৩ নৌ পরিবহন ও তারা মিয়া পিতামৃত মোক্তার আলী সাং চাঁন্দবাড়ী থানা জামালগঞ্জ পরিচালিত নুসরাত এন্টারপ্রাইজ নামের ৬টি বালিবুঝাই করা বাল্কহেড নৌকা আটক করে। আটককৃত নৌকাগুলো রাতের আধারে প্রশাসনের চোঁখ ফাঁকি দিয়ে ভারত সীমান্ত সংলগ্ন চলতি নদীর উৎসমুখ হতে বালি বুঝাই করে ধোপাজান নদী অতিক্রম করে সুরমা নদীতে বের হয়ে যাওয়ার সময় আটক করেছে এলাকাবাসী। তারা আটককৃত ৬ টি নৌকা সকাল ৬ টার সময়, টুকের বাজার নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই রাকিবুল ইসলাম রকিব এর কাছে হস্তান্তর করে।
সোমবার বিকেলে সদর উপজেলার বৈঠাখালি খেয়াঘাটের কাছে আটককৃত বাল্কহেড এর চালকদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলে, আমরা বাল্কহেড বা ইঞ্জিন নৌকার কর্মচারী সুকানী মাত্র। নৌকার মধ্যে থাকা বালির প্রকৃত মালিক হচ্ছেন জনৈক রাজিব আহমদ। তারা বলে, আমরা বালি বুঝাই করা বাল্কহেডগুলো চালিয়ে ধোপাজান নদী হতে বের হয়ে আসার পথে মনিপুরিহাটি ঘাট ও হুরারকান্দা এলাকায় পৌছলে কতিপয় মুখোসধারী যুবক আমাদের নৌকা আটক করে নৌকার মধ্যে থাকা নগদ টাকা,হাড়ি পাতিল ও গ্যাস সিলিন্ডারসহ আমাদের প্রয়োজনীয় সবকিছু লুটতরাজ করে নিয়ে যায়। রাতের বেলা আমরা ডাকাতি লুটতরাজের শিকার হয়েছি। আর ভোর বেলা নৌ পুলিশ দল এসে আমাদের বালিবুঝাই বাল্কহেডগুলো আটক করে আমাদেরকে বৈঠাখালি খেয়াঘাটে নিয়ে এসেছে।
ইব্রাহিমপুর গ্রামের লোকজন বলেন,গত ২০১৯ সাল হতে মহামান্য হাইকোর্টের আদেশক্রমে সুনামগঞ্জের ধোপাজান চলতি নদীর ইজারা বন্ধ রয়েছে। এরপর থেকেই জেলা প্রশাসন কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত ইজারাবিহীন ধোপাজান নদীতে কিছু অসাধু বালু পাথর ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট প্রতিরাতে প্রতিযোগীতামূলকভাবে ড্রেজার মেশিন দ্বারা বালি পাথর উত্তোলন করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতি সপ্তাহের ব্যবধানে মোবাইল কোর্টের অভিযান পরিচালিত হলেও এ চক্রটি অবাধে ড্রেজার মেশিন চালিয়ে বালি ও পাথর উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে। ইতিপূর্বে জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনসহ যৌথবাহিনী মিলে অভিযান পরিচালনা করে জেল ও জরিমানা করছেন। তব্ওু থেমে নেই ড্রেজার মেশিন এর তান্ডবলীলা ও নদীর তীর কাটার মহোৎসব। কয়েকদিন বন্ধ থাকলেও গত ঈদুল আযহার পর থেকে চলছে তাদের বালু পাথর উত্তোলন। রাতের আধারে বড় বড় নৌকা বুঝাই করে প্রশাসনের চোঁখ ফাকি দিয়ে দেদারছে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের বালু পাথর এর রমরমা ব্যবসা।
এ ব্যাপারে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইমরান শাহরিয়ার বলেন, ধোপাজান চলতি নদীতে অবৈধভাবে বালু পাথর উত্তোলন বন্ধ রাখতে আমাদের অভিযান পরিচালনা অব্যাহত আছে এবং থাকবে।
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
১৬৪ বার