ঝিনাইদহে আবারো জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এর আগে গত ২১ এপ্রিল সদর উপজেলার পোড়াহগাটি গ্রামে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালিয়েছিল তারা। রবিবার ভোরে মহেশপুর উপজেলার বজরাপুর গ্রামের হঠাৎপাড়ায় একটি জঙ্গি আস্তানা এবং সদর উপজেলার লেবুতলা গ্রামের আরো একটি বাড়িতে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। সকালে মহেশপুর উপজেলার বজরাপুর গ্রামে অভিযান শুরু হলে সেখানে আত্মঘাতী হামলায় দুই ‘জঙ্গি’ নিহত হয়। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হন একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুই সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন মহেশপুর থানার ওসি আহমেদুল কবীর।এদিকে, পুলিশের খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি দিদার আহমেদ ঘটনাস্থলে আসেন। সন্দেহজনক জঙ্গি আস্তানা পরিদর্শন শেষে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে সাংবাদিকদের ব্রীফ করেন দিদার আহমেদ।পুলিশের খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি বলেন, অভিযানে দুই জঙ্গি নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন ঘরের বাইরে পুলিশের সাথে গুলিবিনিময়ে নিহত হয়। আরেকজন ঘরের ভেতরে আত্মঘাতী বোমার বিস্ফোরণে নিহত হয়। নিহত দুজন নব্য জেএমবির সদস্য। তাদের মধ্যে একজনের নাম তুহিন বলে জানা গেছে।দিদার আহমেদ বলেন, ঘরের ভেতরে বিস্ফোরকদ্রব্য থাকতে পারে। ঢাকা থেকে বিস্ফোরক নিষ্ক্রিয়করণ দল আসছে।

বজরাপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ হোসেন জানান, জহিরুল ইসলাম গ্রামেরই নুরু বাঁশিওয়ালার ছেলে। তার বাবা যাত্রাদলে বাঁশি বাজাতেন। জহিরুল ফুসকার ব্যবসা করে। বাড়িতেই ফুসকা বানিয়ে বিক্রি করে। বছর তিনেক আগে জহিরুল বিয়ে করে। বিয়ের পর থেকেই পাল্টাতে থাকে সে। তার স্ত্রী বাড়ির বাইরে বেরোত না। তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। প্রতিবেশী বা গ্রামের লোকজনের সাখে তাদের তেমন কোনো যোগাযোগ ছিল না। তবে ‘জঙ্গি আস্তানা’য় নিহতরা ওই পরিবারের সদস্য কি না কিংবা বাইরে লোক হলে তারা সেখানে কবে এসেছে এসব বিষয়ে গ্রামের লোকজন কিছুই জানে না।মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ হোসেন দাবি করেন, জহিরুল আহলে হাদিসের অনুসারী। তবে গ্রামের লোকজন তাদের ভালো বলেই জানত। কারো সাথে কোনো ঝগড়াঝাঁটি বা বিবাদ ছিল না।এদিকে, যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এবং অভিযানের সুবিধার্থে বজরাপুর গ্রামের ‘জঙ্গি আস্তানা’র আশপাশে ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন। সেখানে কাউকে ঢোকতে দেয়া হচ্ছে না। সাংবাদিকরা ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৫০০ গজ দূরে রয়েছেন। গ্রামটি ঘিরে প্রচুর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে।এলাকাবাসীরা জানান, সকালে অভিযান শুরুর পর সেখানে তারা প্রচণ্ড বিস্ফোরণ ও গুলির শব্দ শুনেছেন। এরপর আর কোনো শব্দ তারা পাননি। শনিবার গভীর রাত থেকে ‘জঙ্গি আস্তানা’ সন্দেহে বজরাপুর গ্রামের ওই বাড়ি ঘিরে রাখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।পুলিশ জানায়, ভোর থেকে বাড়িটিতে অভিযান শুরু করেছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। পুলিশের সাথে জঙ্গিদের গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এ সময় আত্মঘাতী হামলায় দু’জঙ্গি নিহত হয়।এদিকে, জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় আরো একটি বাড়ি ঘিরে রেখেছে পুলিশ। সেখান থেকে বাড়ির মালিকসহ তার দুই ছেলেকে আটক করা হয়েছে।সদর থানার ওসি হরেন্দ্রনাথ সরকার জানান, উপজেলার লেবুতলা গ্রামের সরাফত হোসেনের বাড়িটি জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে রবিবার সকাল থেকে ঘিরে রাখে পুলিশ। সেখান থেকে বাড়ির মালিক সরাফত হোসেন, তার ছেলে হাসান ও শামিম হোসেনকে আটক করা হয়েছে। সেখানে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক রয়েছে বলে পুলিশের এই কর্মকর্তা দাবি করেছেন।

এর আগে গত ২১ এপ্রিল ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পোড়াহাটি গ্রামের ঠনঠনিয়া পাড়ার ‘জঙ্গি’ আবদুল্লাহ ওরফে প্রভাতের বাড়ি ঘিরে রাখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরদিন সেখানে অভিযান চালানো হয়। কিন্তু কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। ধরা পড়েনি কোনো জঙ্গিও। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ওই বাড়ি থেকে ২০ ড্রাম রাসায়নিক, বিপুল পরিমাণ ইলেকট্রিক ডিভাইস, একটি বিদেশি পিস্তল, সাত রাউন্ড গুলি, একটি মোটর সাইকেল ও বিপুল পরিমাণ বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn