আদিম যুগের নগরী সিলেট!
মো. রেজাউল হক ডালিম :: সড়কে নিওনবাতির জ্বলমলে আলো নেই। শপিং মলে নেই আলোর ঝলকানি। দোকান ও বাসাবাড়িতে জ্বলছে মোমবাতি। এ যেন আদিম যুগের নগরী সিলেট। সিলেটের কুমারগাঁওয়ে বাংলাদেশ পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি (পিজিসিবি)-এর নিয়ন্ত্রণাধীন গ্রিড লাইনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের কারণে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে নগরীসহ সিলেটের পাশ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকা। মঙ্গলবার (১৭ নভেম্বর) সকাল সোয়া ১১টা থেকে বিদ্যুৎহীন সিলেট মহানগরী ও পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোর বাসিন্দা। এদিকে, এ রিপোর্ট লেখা (রাত ১১টা) পর্যন্ত প্রায় ১২ ঘণ্টা নগরী বিদ্যুৎহীন হওয়ায় এরই মধ্যে পানির জন্য প্রতি বাসায় শুরু হয়েছে হাহাকার। কোথাও কোথাও পাড়ার দোকানগুলোতে পয়সা দিয়েও মিলছে না পানি। প্রতি ওয়াক্তের আজানের সময় মসজিদগুলো পানিশূন্যতার কথা মাইকে ঘোষণা দেয়া হচ্ছে। কোনো কোনো মসজিদে অনেকে ব্যক্তিগতভাবে দোকান থেকে পানি কিনে সরবরাহ করছেন।এছাড়া অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়েছে পুরো নগরী। দেখা দিয়েছে মোমবাতির সঙ্কট। এই সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বাড়িয়ে দিয়েছেন মোমবাতির দাম। এতে বিপাকে পড়েছেন মানুষজন। কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান, নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ৫ টাকার মোমবাতি বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১২ টাকায়। ১০টাকার মোমবাতি বিক্রি হচ্ছে ২০-২৫ টাকা। দেখা দিয়েছে মোমবাতির সংকট। মানুষজন বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া মোমবাতি ক্রয় করে না। তাই অনেক ব্যবসায়ী মোমবাতি দোকানে রাখেন না, রাখলেও কম। কিন্তু দুর্ঘটনার কারণে অন্ধকারে নিমজ্জিত হওয়া নগরবাসী দৈনন্দিন কাজের প্রয়োজনে প্রতি দোকানে হুমড়ি খেয়ে ভিড় করছেন মোমবাতি ক্রয় করতে। এ সুযোগে মোমবাতির দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী।
অপরদিকে, নগরীর প্রতিটি ঘরে পানি ও আলো স্বল্পতায় সাংসারিক কাজকর্ম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। পানির অভাবে অনেক গৃহিনী চুলায় রান্না বসাতে পারেননি। দোকান থেকে শুকনো খাবার কিনে নিয়ে এসে রাত পার করছেন। নগরীর তালতলা এলাকার এক চাকিরজীবি মহিলা এ প্রতিবেদককে জানান, হঠাৎ যেন আদিমযুগে এসে পড়লাম। আলো নেই, পানি নেই। চারদিকে অন্ধকার। যেন ভুতুড়ে পরিবেশ। এভাবে আরও দু-একদিন থাকলে মনে হচ্ছে দম বন্ধ হয়ে মারা যাবো।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (১৭ নভেম্বর) সকাল সোয়া ১১টার দিকে সিলেটের কুমারগাঁওয়ে বাংলাদেশ পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি (পিজিসিবি)-এর নিয়ন্ত্রণাধীন গ্রিড লাইনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ফায়ার ব্রিগেডের ৫টি ইউনিট প্রায় দেড়ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। আগুন নেভাতে গিয়ে জয়ন্ত কুমার নামে দমকলবাহিনীর এক সদস্য দগ্ধ হন। তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের দায়িত্বশীল একটি সূত্র মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সিলেটভিউ-কে জানায়, অগ্নিকাণ্ডের কারণে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া সিলেটের এলাকাগুলোতে ২৪ ঘণ্টার ভেতরে সরবরাহ দিতে দ্রুত কাজ চলছে। তবে একসঙ্গে সব এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়তো সম্ভব হবে না। তবে দুইদিনের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত সকল এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ দেয়ার চেষ্টা করা হবে। ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স সিলেটের উপ-পরিচালক শওকত হোসেন বলেন, ট্রান্সমিটারের জ্বালানি তেল থেকে এই আগুনের সূত্রপাত বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর বিদ্যুৎ উন্নয়ন ও বিতরণ বিভাগের সিলেট কার্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী মোকাম্মেল হোসেন বলেন, বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করতে অনেক সময় লাগবে। আগুনে গ্রিড লাইন ও ট্রান্সমিটার অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেশকিছু যন্ত্রপাতি পুড়ে গেছে। পিডিবি ও পিজিসিবি একসাথে এগুলো সংস্কারে কাজ করছে। ক্ষতিগ্রস্ত যন্ত্রপাতি সংস্কার ও পরিবর্তন করতে হবে।