আবজালের স্ত্রী রুবিনা লাপাত্তা
মারুফ কিবরিয়া–আবজাল হোসেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মচারী। দুর্নীতির মাধ্যমে হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। দেশে-বিদেশে রয়েছে বাড়িসহ নানা সম্পদ। তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হওয়া সত্ত্বেও অধিদপ্তরে খাটাতেন একচেটিয়া প্রভাব। সম্প্রতি দুর্নীতির অভিযোগে একাধিক মামলার আসামি ওই আবজাল আত্মগোপন থেকে আত্মসমর্পণ করেন। তবে তার স্ত্রী রুবিনা এখনো লাপাত্তা। নানা চেষ্টার পরও তার কোনো হদিস মিলছে না। দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক) খুঁজে বেড়াচ্ছে রুবিনাকে। তবে কোথায় আছেন এ ব্যাপারে কোনো তথ্য নেই সংস্থাটির কর্মকর্তাদের কাছে। এদিকে কয়েকটি সূত্রে জানা যায়, গত বছর মামলা হওয়ার আগেই স্বামীর সঙ্গে দেশ ছেড়ে অস্ট্রেলিয়ায় পালিয়েছিলেন রুবিনা। তখন থেকেই তারা সপরিবারে সেখানে অবস্থান করছেন। তবে সম্প্রতি আবজাল হোসেন প্রকাশ্যে এসে আত্মসমর্পণ করায় এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম হয়। কেউ বলছেন- দেশেই আছেন রুবিনা। আবার কেউ বলছেন- অস্ট্রেলিয়াতে। এদিকে গেল বছর দুদকের অনুসন্ধানের শুরুতেই এ দম্পতির বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়।এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুদকের এক কর্মকর্তা মানবজমিনকে বলেন, রুবিনা কোথায় আছে কেউ বলতে পারে না। তার ব্যাপারে কোনো তথ্য এখন পর্যন্ত নেই। রুবিনাকে খোঁজার ব্যাপারে তৎপরতা চলমান কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা তো খুঁজছি। এখন আর কিছু বলা যাচ্ছে না।
আবজালের অবৈধ টাকায় দেশ- বিদেশে অঢেল সম্পদের মালিক হওয়ার তথ্য গত বছরই ফাঁস হয়। তৃতীয় শ্রেণির এক কর্মচারী হয়ে এত সম্পদ কীভাবে হলো সে তথ্য বেরিয়ে আসতেই হইচই পড়ে যায়। ধারাবাহিকতায় নাম উঠে আসে তার স্ত্রী রুবিনার। স্ত্রীর নামেই আবজাল গড়েন কোটি কোটি টাকার সম্পদ। রাজধানীর উত্তরায় পাঁচটি বাড়িই রুবিনার নামে। ঘুষ, টেন্ডার ও নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অবৈধ পন্থা অবম্বন করে উপার্জিত অর্থের বেশির ভাগই আবজাল তার স্ত্রীর নামে রেখেছেন। আর দেশ-বিদেশে বাড়ি, প্লট, ফ্ল্যাট অধিকাংশই রুবিনার নামে। তাই তো সারাজীবন চাকরি করে সর্বসাকুল্যে ১৭ লাখ টাকার মালিক আবজালের স্ত্রী কীভাবে শত শত কোটি টাকার মালিক তা বেশ অবাক হওয়ার মতোই। দুদক সূত্র জানায়, আবজালের সঙ্গে স্ত্রী রুবিনা খানমও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের শিক্ষা ও জনশক্তি উন্নয়ন শাখায় স্টেনোগ্রাফার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২০০০ সালে স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দেন রুবিনা। অবশ্য চাকরি ছাড়েন গৃহিণী হওয়ার লক্ষ্যে নয়। স্বামীর অবৈধ অর্থে সে বছরই রহমান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে কাজ শুরু করেন রুবিনা। এখানেই গড়ে ওঠে টাকার খনি। আবজাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে টেন্ডার বাগিয়ে এনে রুবিনার দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠানে দিতেন। সেগুলো দেখভাল করতেন তার স্ত্রী। দুদকের অনুসন্ধান সূত্র বলছে, উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর সড়কেই তাদের ৪টি পাঁচতলা বাড়ি ও একটি প্লট রয়েছে। ১১ নম্বর সড়কের ১৬, ৪৭, ৬২ ও ৬৬ নম্বর বাড়িটি তাদের নামে। সড়কের ৪৯ নম্বর প্লটটিও তাদের। মিরপুর পল্লবীর কালশীর ডি-ব্লকে ৬ শতাংশ জমির একটি, মেরুল বাড্ডায় আছে একটি জমির প্লট। মানিকদি এলাকায় জমি কিনে বাড়ি করেছেন, ঢাকার দক্ষিণখানে আছে ১২ শতাংশ জায়গায় দোতলা বাড়ি।
এ ছাড়া আরেকটি বাড়ি আছে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে। রাজধানী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকায় আছে অন্তত ২৪টি প্লট ও ফ্ল্যাট। দেশে-বিদেশে আছে বাড়ি-মার্কেটসহ অনেক সম্পদ। এসবের বেশির ভাগই রুবিনার নামে কেনা। এদিকে দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে আরো চাঞ্চল্যকর তথ্য। আবজালের স্ত্রী রুবিনা একাই ২৮৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন। গত বছর ২৭শে জুন দুদকের দায়ের করা মামলার এজাহার বলছে, রুবিনার বিরুদ্ধে ২৬৩ কোটি ৭৬ লাখ ৮১ হাজার টাকার মানি লন্ডারিংসহ ২৮৫ কোটি ২৭ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। ৫ কোটি ৯০ লাখ ২৮ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য গোপনসহ ৩১ কোটি ৫১ লাখ ২৩ হাজার টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ দুদকের অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়। মামলার এজাহারে আরো বলা হয়েছে, রুবিনা তার স্বামী আবজালের অবৈধ আয়কে বৈধ করার পূর্ব পরিকল্পনায় নিজ নামে ও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট রহমান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ও রুপা ফ্যাশনের নামে তফসিলি ব্যাংকের ২৭টি হিসাবের মাধ্যমে ২৬৩ কোটি ৭৭ লাখ ৬৪ হাজার টাকা স্থানান্তর, হস্তান্তর ও মানি লন্ডারিং করেন, যা ২০১২ সালের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ২ (য) ধারায় বর্ণিত সন্দেহজনক অস্বাভাবিক লেনদেন হিসেবে প্রমাণ হয়।