আবু দিস হবে ফিলিস্তিনের রাজধানীঃ একি করছে সৌদি আরব!
ইউরোপ যখন বলছে জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণার স্বীকৃতি দেবে না তখন সৌদি আরব বলছে, আবু দিস গ্রামটি ফিলিস্তিনের ভবিষ্যত রাজধানী হবে। মালয়েশিয়া যখন বলছে জেরুজালেম ইস্যুতে দেশটি সেনাবাহিনী পাঠাবে তখন ইয়েমেনে সৌদি আগ্রাসন আরো তীব্র হচ্ছে। জাতিসংঘের মহাসচিব এ্যান্তোনিও গুতরেস বলেছেন, সৌদি আরবকে এ বোকামিপূর্ণ যুদ্ধ বন্ধ করতে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ইউরোপকে ট্রাম্পের ঘোষণা অনুসরণ করতে। ইইউ পররাষ্ট্রনীতি প্রধান ফেদেরিকা মোঘেরিনি যখন বলছেন, জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী মেনে নেবেন না তখন ফিলিস্তিনের বিকল্প রাজধানী হিসেবে আবু দিস গ্রামের কথা কেন বলছে সৌদি আরব। এখানেই শেষ নয়, ইসরায়েলের টেলিভিশন নিউজ টেন বলছে, সৌদি আরব ও মিসরের সবুজ সংকেত পেয়েই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। এজন্যেই কি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানের মত সৌদি বাদশা সালমান বলতে পারছেন না যে ট্রাম্পের ঘোষণা বাস্তবায়ন অত সহজ হবে না। মুখে বাদশাহ সালমান বলছেন ট্রাম্পকে তার ঘোষণা থেকে ফিরে আসতে, তাহলে সৌদি রয়াল কোর্ট ডিক্রি জারি করে জেরুজালেম নিয়ে ট্রাম্পের ঘোষণা সম্পর্কিত খবরাখবর বিস্তারিত প্রচার না করে ইরান ও আঞ্চলিক খবর প্রচারের কথা বলছে কেন? কেন সৌদি ও জর্ডানের দূতাবাস তার নাগরিকদের ট্রাম্পের ঘোষণা নিয়ে কোনো রকমের বিক্ষোভ প্রতিবাদ না করার নির্দেশ দিয়েছে।
ট্রাম্পের এ ঘোষণা চীন, রাশিয়া, ফ্রান্স, ব্রিটেন সহ সারাবিশ্ব যখন মেনে নিতে পারছে না সেখানে সৌদি আরবের নেতৃত্বে কতিপয় আরব দেশগুলো বিক্ষোভতো দূরের কথা ইয়েমেনের মত গরিব দেশে চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধ কেন বন্ধ করছে না। সৌদি আরব যদি ইসরায়েলে গোপনে গোয়েন্দাদের প্রশিক্ষণে না পাঠাত তাহলে কি বাহরাইন এসময় ইসরায়েলে প্রতিনিধিদল পাঠাতে সাহস পেত। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী, জাতিসংঘে নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত প্রকাশ্যে বলছেন সৌদি আরব সহ ডজনখানেক আরব দেশের সঙ্গে গোপন সম্পর্ক আছে। এধরনের গোপন সম্পর্ক বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর কি ধরনের স্বার্থ রক্ষা করছে তা কি আলেম ওলামারা ভেবে দেখবেন। মিসরের কপটিক চার্চের পোপ যখন বলছেন, তিনি মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট পেন্সের সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত বৈঠকে আর বসছেন না তখন সৌদি আরব ও আরব দেশগুলোর ইসরায়েল-মার্কিন প্রীতি নিঃশেষ হয় না কেন? ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া, আফগানিস্তান, সোমালিয়া, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান সহ একের পর এক মুসলিম দেশগুলোতে যখন সন্ত্রাস ছড়িয়ে দিয়ে, যুদ্ধ বাঁধিয়ে দেশগুলো শেষ করে দেওয়া হচ্ছে, যখন প্রথমে ৭টি ও পরে ৬টি মুসলিম দেশগুলোর নাগরিকদের দরজা ট্রাম্প বন্ধ করে দিচ্ছেন তখন বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ ও পবিত্র দুই মসজিদের খাদেম বাদশাহ সালমান একি করছেন? মুসলমানদের প্রথম কিবলা বায়তুল মুকাদ্দাস বা জেরুজালেমে ইসলামের তৃতীয় মসজিদ (মক্কায় কাবা শরীফ ও মদিনায় মসজিদে নববীর পরেই) নিয়ে এত অনীহা কেন? সৌদ বংশ ও সৌদি আরব প্রতিষ্ঠায় তুরস্ককে হটিয়ে ব্রিটিশরা কেন অস্ত্র দিয়েছিল, কিভাবে সৌদি আরবের গোড়া পত্তন ঘটেছিল তা ইতিহাসের অংশ হয়ে আছে। কিন্তু বর্তমানে মুসলিম দেশগুলোয় যখন একটি আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয়ের অভাব তখন ক্রাউন প্রিন্স কেন সাড়ে চার’শ মিলিয়ন ডলার খরচ করে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির পেইন্টিং মা মেরির ছবি আর সাড়ে পাঁচশ মিলিয়ন ডলার দিয়ে প্রমোদতরী কিনছেন। লাখ লাখ রোহিঙ্গারা যখন মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে তখন এই বিলাসবহুল জীবন যাপন ও অপচয়কারীদের কি ইসলামে শয়তান হিসেবে অ্যাখ্যা দেয়নি।
প্রশ্ন ওঠা কি খুব স্বাভাবিক নয় যে কি ধরনের জীবিকার সঙ্গে ক্রাউন প্রিন্স জড়িত যে এত বিলাসবহুল জীবন যাপন করতে পারেন। তেলের টাকা, পবিত্র হজে বিশ্বের মুসলমানরা যে কষ্টার্জিত টাকা খরচ করেন সেই টাকা নাকি ক্রাউন প্রিন্সের খাটনির মাধ্যমে অর্জিত কোনো টাকা। তিনি যদি স্বাভাবিক আয় থেকে করেন তাহলেও বিশ্ব মুসলিমের পিচ্চি খাদেম হিসেবেও ইসলাম তাকে এধরনের অর্থ খরচের অনুমোদন দেয় না এটা যে কেউ বুঝবেন। এটা বুঝতে সৌদি আরব না গেলেও চলে। কারণ ইসলাম কি তা সারা বিশ্বের মুসলমানরা বুঝতে শিখেছে। ইসরায়েলের সাংবাদিক জেভি ইয়েহেজকেলি যখন বলেন, ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার আগে তার আরব মিত্রদের সঙ্গে শলাপরামর্শ করেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তখন মুসলমানদের চোখে ট্রাম্প ও সৌদি বাদশাহর তরবারী নৃত্যের কথা মনে পড়ে যায়। তাহলে এটা পরিস্কার কার্যত কোনো উদ্যোগ ট্রাম্পের ঘোষণার পর কেন সৌদি আরব ও তার মিত্র আরব দেশগুলো নিচ্ছে না। সৌদি আরব ও তার মিত্রদের মনে রাখা উচিত ফিলিস্তিন প্রশ্নে ইসরায়েলের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কখনোই তাদের পক্ষ নেবে না। ইয়েমেনে যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়ে অস্ত্র বিক্রি করছে কেন ব্রিটেন, এটা সৌদি আরবকে বুঝতে হবে।
সৌদি আরবকে এও বুঝতে হবে সিনেমা হল চালুর আগে ভালো সিনেমা আগে তৈরি করতে হবে। নাহলে হলিউড মার্কা পশ্চিমা ভালগার আর যৌনতার সুরসুরি সৌদি আরবের তরুণ তরুণীর মধ্যে রপ্ত করা যা টুকু বাকি ছিল তা আর অবশিষ্ট থাকবে না। এজন্যে সংস্কৃতি চর্চার পীঠস্থান তৈরি করে নিয়ে সিনেমা হল চালু করলে ভাল করত সৌদিরা। কারণ এখনো বিশ্বের অনেক দেশই মনে করে যা কিছু করে সৌদি আরব তা করাই যেন ইসলামের অনুসরণ, আশার কথা সে ভুল খোদ সৌদি আরবই ভেঙ্গে দিচ্ছে।আস