‘আমাকে আরেকবার সুযোগ দিন’
২০০৪ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ডরমিটরিতে বসে ফেসবুক প্রতিষ্ঠা করেন জাকারবার্গ। সাংবাদিকদের জাকারবার্গ বলেছেন, ‘বিশাল এক ভুল হয়ে গেছে। এটা আমার ভুল।’ জাকারবার্গ বলেছেন, ‘মানুষমাত্রই ভুল করে এবং এভাবেই শেখে। আমিই প্রথম স্বীকার করছি যে আমাদের দায়িত্ব সম্পর্কে বিশাল দৃষ্টিভঙ্গি ছিল না। ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়ার জন্য আমাদের সুযোগ দেওয়া উচিত।’ তথ্য কেলেঙ্কারির ঘটনায় ফেসবুক পরিচালনা পর্ষদ থেকে তাঁকে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে কি না, সে বিষয়ে তিনি কিছু শোনেননি। জাকারবার্গ বলেন, ‘আমি এ নিয়ে কিছু শুনিনি। এ কেলেঙ্কারিতে কাউকে চাকরিচ্যুত করা হয়নি। কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা পরিস্থিতির জন্য কেউ আমাকে পদত্যাগ করতে বলেনি। আমরা পরিস্থিতি ঠিক করতে কাজ করছি। দিন শেষে এটা আমারই দায়িত্ব। এ ঘিরে অনেক প্রশ্ন আছে। আমি এটা শুরু করেছিলাম। আমি এটা পরিচালনা করি। এখানে যা ঘটে, সবকিছুর জন্য দায়ী আমি। আমরা এখানে যে ভুল করেছি, তার জন্য কাউকে বাসের নিচে ছুড়ে ফেলছি না।’
কেলেঙ্কারির ঘটনায় ব্যবসায় খুব বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে বলে স্বীকার করেন না জাকারবার্গ। তিনি বলেন, ‘আমাদের পর্যবেক্ষণে কোনো অর্থপূর্ণ প্রভাব দেখি না। কিন্তু এটা যে ভালো না, সেটা বুঝি। মানুষের অনুভূতিতে এটা আঘাত করবে। বড় ধরনের বিশ্বাসভঙ্গের ঘটনা বলে মনে হবে। এটা ঠিক করতে আমাদের অনেক কাজ করতে হবে।’ এ সমস্যা কত দিনে ঠিক হবে? জাকারবার্গ বলেছেন, সমস্যা রাতারাতি ঠিক হবে না। এটা ঠিক করতে কয়েক বছর লেগে যাবে। জাকারবার্গ বলেন, ‘ভুয়া তথ্যের বিরুদ্ধে লড়াই আসলে কখনো শেষ হওয়ার নয়। তবে আমি আত্মবিশ্বাসী যে এ ধরনের প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে আমরা উন্নতি করছি, কিন্তু এগুলো খুবই জটিল। এ ধরনের সমস্যা পুরোপুরি সমাধান করার আশা করা যায় না।’ কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার ঘটনাকে কেন্দ্র করে মার্ক জাকারবার্গকে ১১ এপ্রিল ইউএস হাউস এনার্জি অ্যান্ড কমার্স কমিটির সামনে শুনানিতে অংশ নিতে হবে। ওই কমিটির চেয়ারম্যান গ্রেগ ওয়ালডেন বলেছেন, শুনানিকে জটিল গ্রাহক তথ্য প্রাইভেসির ওপর আলোকপাতের গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ বলে মনে করা হচ্ছে। অনলাইনে ব্যক্তিগত তথ্যের কী হচ্ছে, সে সম্পর্কে ভালোভাবে জানার সুযোগ পাবেন সব আমেরিকান।
কমিটির সামনে হাজির হওয়া ও শুনানিতে অংশ নেওয়ার আগ্রহ দেখানোয় জাকারবার্গের প্রশংসা করেছেন তাঁরা। একই সঙ্গে জাকারবার্গের কাছ থেকে সব প্রশ্নের উত্তর চান তাঁরা। বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, তথ্য বেহাত হওয়ার ঘটনায় ফেসবুক আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়েছে। এর আগে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ফেসবুকের তথ্য বেহাত হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরা হচ্ছিল। ২ লাখ ৭০ হাজার মানুষ ব্যক্তিত্ব পরীক্ষামূলক একটি কুইজ অ্যাপ ডাউনলোড করে তাতে নিজের ও বন্ধুদের তথ্য দিয়েছিল। গবেষণার কাজে ওই তথ্য নেওয়ার কথা থাকলেও পরে তা কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার কাছে চলে যায়। এটি ফেসবুকের নীতিবিরুদ্ধ বলে দাবি করেছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার কাছে তথ্য গেছে কি না, সে বিষয়ে ৯ এপ্রিল থেকে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের নিউজফিডের ওপরে একটি নোটিশ দেখা যাবে। ফেসবুক তাঁদের প্রাইভেসি নীতিমালায় পরিবর্তন আনার ঘোষণাও দিয়েছে। নতুন নীতিমালায় ব্যবহারকারীর তথ্য সংগ্রহ করার বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়েছে। এ ছাড়া ফেসবুকের ঘটনা নিয়ে অভ্যন্তরীণ অডিট করার কথাও বলেছেন জাকারবার্গ।