আমি পালাবো না-ওমর ফারুক
ক্যাসিনোকাণ্ডের ঝড় বইছে যুবলীগে। ঢাকা মহানগর যুবলীগের কয়েকজন নেতার নিয়ন্ত্রণে ক্যাসিনোপাড়া গড়ে ওঠার চিত্র প্রকাশের পর থেকে চাপে ঐতিহ্যবাহী এ সংগঠনের শীর্ষ নেতারা। ক্যাসিনো সম্রাজ্যের আয় যেতো তাদের পকেটেও। গ্রেপ্তার নেতাদের মুখে প্রকাশ পেয়েছে এমন তথ্য। এরপর থেকে নজরদারিতে শীর্ষ নেতারাও। যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর ব্যাংক হিসাব তলব করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সর্বশেষ তার দেশত্যাগেও নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে তিনি মানবজমিনকে জানিয়েছেন, দেশ ছেড়ে পালাবেন না।অপরাধ করলে প্রচলিত বিচারের মুখোমুখি হয়ে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে চান। তিনি বলেন যদি অপরাধ করে থাকি তাহলে আইনশৃংখলা রক্ষাকারি বাহিনী আমাকে গ্রেপ্তার করবে। আমার কাজ হবে বিচারিক আদালতে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করা। ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, একেক সময় একেক খবর পাচ্ছি। আর বুকটা ভেঙ্গে ছয় টুকরো হয়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় এখন মানুষের অনুকম্পা পাওয়ার চেয়ে ঈর্ষা পাওয়ায় শ্রেয় মনে হচ্ছে। এখন যে অবস্থা তাতে নিজেকে এখন ঘৃণিত ব্যক্তি বলে মনে হচ্ছে। অনেকের কাছে আমি এখন ঘৃণার পাত্র। এখন আসলে সবকিছুর উত্তর দেয়া বা তর্কের সময় নয়। এখন আমি হাজারো কথা বললেও তা মিথ্যায় পরিণত হবে। এদিকে গতকাল যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করে কর্তৃপক্ষ। এজন্য বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনে সর্বোচ্চ সর্তকতা জারি করা হয়েছে। বেনাপোল ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহাসিন খান পাঠান জানান, ঢাকা পুলিশের এসবি ( স্পেশাল ব্রাঞ্চ) থেকে তাদের কাছে মৌখিক নির্দেশনা এসেছে। যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী ও নেপালের নাগরিক যাতে কোনোভাবেই দেশ ত্যাগ করতে না পারেন তার জন্য বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। ক্যাসিনো কাণ্ডে যুবলীগের বেশ কয়েকজন নেতার নাম আসার পর থেকে আলোচনায় যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী।
গতকাল টেলিফোনে মানবজমিনকে সাক্ষাৎকার দেন ওমর ফারুক চৌধুরী। তিনি বলেন, যদি অপরাধীও হই তারপরও দেশ ছেড়ে আমাকে কেন পালাতে হবে? রাজনীতি করি। রাজনীতি করতে গেলে ভুলভ্রান্তি থাকতেই পারে। এখন যে অভিযান চলছে তা আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত, দলের সিদ্ধান্ত। যদি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাই তাহলে তো আমাকে শাস্তি দেয়া বিচারকের জন্য সহজ হয়ে যাবে। অপরাধ হচ্ছে প্রমাণের বিষয়। বিচারিক আদালতে নিরপরাধের জন্য লড়তে হবে। আপনি কি গ্রেপ্তার আতংকে আছেন-এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বিষয়টি আতংকের নয়। বিষয়টি প্রক্রিয়ার। অপরাধ করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী আমাকে গ্রেপ্তার করতেই পারে। বর্তমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাজনীতি করার কারণে দলের সাংগঠনিক কাজগুলো দেখভালের দায়িত্ব ছিলো আমার। দলীয় কর্মসূচি কে কিভাবে করছে, ভালোবেসে করছে কিনা সেগুলো দেখেছি। এর বাইরে কে টাকার পেছনে ছুটলো কিংবা অন্য কোন দিকে গেলো তা দেখার সুযোগ আমার ছিলো না। দলের মধ্যে অনেক ধরনের মতাবলম্বী নেতা-কর্মী থাকেন।
তাদের সবার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে হয়ে। এখন অনেক কিছুই জানতে পারছি। মিডিয়ার মাধ্যমেও অনেক কিছু বেরিয়ে আসছে। আগে অজানা অনেক বিষয় ছিলো। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের গ্রেপ্তার ও বহিষ্কার প্রসঙ্গে ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, সম্রাটের গ্রেপ্তারের বিষয়টি দল বা রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত। সে অপরাধের সঙ্গে জড়িত এমন অভিযোগ থাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আটক করেছে। এখন তার বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী দেখছে। আর আমাদের দলীয় সিদ্ধান্ত আছে-যদি কেউ অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয় তাহলে তাকে সঙ্গে সঙ্গে দল থেকে বহিস্কার করা হবে। শুধু সম্রাট নয় আরও যদি কেউ একইভাবে আটক হন তাহলে তাকেও গ্রেপ্তার করা হবে। শুদ্ধি অভিযান শুরুর পর দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে কি না প্রশ্নে তিনি বলেন, না উনার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়নি। তার পক্ষ থেকে কোন নির্দেশনা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই যে কেউ আটক হলে তাকে বহিষ্কার করতে হবে এটা তারই সিদ্ধান্ত। আমাদেরও সিদ্ধান্ত। চলমান অভিযানে যুবলীগে কি ধরণের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে জানতে চাইলে ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, অভিযানটা হচ্ছে দলের সিদ্ধান্তে। তাই এটা এখনই বলা যাবে না। সময়ই সবকিছু জানিয়ে দেবে।