নির্মাতা, অভিনেত্রী ও কন্ঠশিল্পী মেহের আফরোজ শাওন। অভিনয়, নির্মান এবং গায়কী দিয়ে সকলের মন জয় করেছেন তিনি। আজ (৮ মার্চ)  আন্তর্জাতিক বিশ্ব নারী দিবস। এ দিবসটি  নানা আয়োজনে পালিত হচ্ছে। নারী দিবস ও অন্যান্য প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেছেন এই গুনী শিল্পী। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নিপু বড়ুয়া

বিশ্ব নারী দিবস নিয়ে আপনার ভাবনা কেমন?

একটা সময় এই দিবসগুলোর খুবই প্রয়োজন ছিল, মনে করিয়ে দেবার জন্য। এখন নারীদের অনেক উন্নয়ন হয়েছে। নারীরা এখন সমঅধিকার চায়। আমার মনে হয়, যেসব নারীরা সমঅধিকার চায়, তারা আলাদা করে নারী দিবস চায় না। আমি আসলে সমঅধিকারে বিশ্বাসী। আমি একটা মানুষকে আলাদা করে নারী-পুরুষ হিসেবে দেখতে চাই না, দেখি না। যখন কৈশোরে ছিলাম, তখন আমার আশেপাশে ওই ধরনের মানুষকে দেখেছিলাম। হুমায়ুন আহমেদের মতো একজন প্রগতিশীল মানুষের সঙে থাকার কারনে, আমি নিজেকে একজন প্রগতিশীল মানুষ হিসেবে মনে করি। মানুষকে মানুষ হিসেবেই দেখতে বেশি পছন্দ করি।

শোবিজে নারী নির্মাতাদের অবস্থান কেমন?

আমাদের মিডিয়া যথেস্ট প্রগতিশীল হয়েছে। আমাদের সমাজে নারী নির্মাতারা অনেক ভালো গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। দেশ এবং বিদেশে পুরস্কৃত হচ্ছেন। এসব দেখে খুবই ভালো লাগে।অন্য মুসলিম দেশের তুলনায় আমাদের দেশে নারী নির্মাতাদের অবস্থান বেশ ভালোই।

কাজের ক্ষেত্রে নারীরা কেমন স্বাধীনতা পাচ্ছে?

কাজের ক্ষেত্রে নারীরা অনেক স্বাধীনতা পাচ্ছে। শুধু সাংসারিক ভাগটা বসে যায় নির্মানের ক্ষেত্রে। এছাড়া আর কোনো সমস্যা নেই। আমার ভালো লাগে-একজন নারী যেমন করে তার সংসার পরিচালনা করেন ঠিক তেমনিভাবে শুটিং স্পটটাও সামলে নিতে পারে। শুটিং স্পটে কোনো উচ্চবাচ্য নেই। খুব সুন্দর পরিবেশে কাজটা শেষ করতে পারে পুরো টিম। নারীরা অনেক সহনশীল। আমি যখন কাজ করেছি। তখন আমার কাছে কখনই  মানসিক চাপ মনে হয়নি কাজে। আমি বস্তিতে টানা তিনদিন সকাল থেকে রাত পযন্ত শুটিং করেছি। এমনকি সারারাত হাসপাতালে এবং রাস্তায় শুটিং করেছি। সেখানকার মানুষদের চোখে আমি দেখতে পাইনি আমি একজন নারী নির্মাতা। তবে একটা বিষয় উপলব্ধি করতে পারি।

বিষয়টি কেমন?

আমাদের দেশে শিক্ষিত মানুষ আছেন। পোষাকে-আশাকে চেহারায় যথেস্ট শিক্ষিত এবং যথেস্ট প্রগতিশীল। তাঁরা মানুষকে মানুষ না ভেবে নারী এবং পুরুষ ভাবতে পছন্দ করেন। দেখবেন বাংলা ভাষায় যাবতীয় গালি গালাজ নারীদের নিয়ে তৈরি হয়েছে। পুরুষদের নিয়ে কোনো গালি তৈরি হয় নাই। সামনে নারীকে নিয়ে কিছু না বললেও আড়ালে মুখের কন্ট্রোল একেবারেই নেই ।ইদানীং শুধু মুখই নয় কম্পিউটার কিংবা মুঠোফোনের কিবোর্ডে আঙুল চাপার সময় তাদের কন্ট্রোল নেই, একবারও ভাবেন না নারীদের প্রতি কি রকম ভাষা ব্যবহার করতে হবে? তারা এখনও কোনো গালি গালাজ করলে নারীদেরই ব্যবহার করছে। আমার মনে হয়, এক্ষেত্রে নারীরা এখন অবহেলিত আছে। ইদানীং স্কুল-কলেজের মেয়েদের নির্যাতন করে ভিডিও প্রকাশ করছে।

এ প্রসঙ্গে কিছু বলুন।

মানুষের কাছে এখন সহ্য ক্ষমতা কমে গেছে। আগে খবরে দেখতাম স্কুল ছাত্রী, গৃহবধু নির্যাতন হচ্ছে। এসব খবর দেখলে খুবই খারাপ লাগে। ইদানীং ছেলেরা মেয়েদের নির্যাতন করে ভিডিও করে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করছে। অবাক হয়ে যাই। এদের সাহস দেখে।

আমার মনে হয়, নাটক, সিনেমা থেকে ছেলেরা অনুপ্রাণিত হয় মেয়েদের উপর নির্যাতন করছে। এসব করে অনেকে সাজা পাচ্ছে। তারপরও নিজেদের সংশোধন করছে না। আসলে নারীদের সম্মান করতে পরিবার থেকেই ছেলেদের শিক্ষা দেয়া উচিত। নয়তো এটা দিনে দিনে এটা বড় আকার ধারণ করবে।

এর থেকে উত্তরণের উপায় কী?

ইদানীংকার কিছু অপরিপক্ক (!) নির্মাতা তাদের নাটকগুলোতে ভাষা এবং গল্পে যা দেখাচ্ছেন, তা দেখে মফস্বলের ছেলেরা নিজেদের স্মার্টনেস দেখাতে মেয়েদের সঙে অসভ্যতা করছে। নির্মাতাদের আরও সচেতন হতে হবে। সবকিছু দেখানো সম্ভব না। একটা সময় দেশে সচেতনার ওপর অনেক ডকুমেন্টরী প্রচার হতো। এখন সময় এসেছে নারী নির্যাতন বিষয়টি সচেতনার জন্য বেশি বেশি ডকুমেন্টরী প্রচার করা। তাহলে মাতা-পিতা তাদের ছেলেদের সর্তক করে দিতে পারবেন। এক্ষেত্রে নারী নির্যাতন কিছুটা হলেও কমবে।

এবার একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি। আপনার নতুন ছবির কাজ কতদূর?

হুমায়ুন আহমেদের  উপন্যাস নিয়ে ‘নক্ষত্রের রাত’ ছবিটি নির্মাণ করছি। এটা আমার দ্বিতীয় ছবি। ছবির স্ক্রিপ্ট এবং অন্যান্য কাজ গুছিয়ে এনেছি। এই ছবির শুটিং বৃটেনে হবে। তাই সেখানকার অনুমতি পত্রের অপেক্ষায় আছি। আশাকরছি, এ বছরের মাঝামাঝিতে ছবির কাজ শুরু করতে পারব।

‘ডুব’ প্রসঙ্গে কিছু বলুন।

আমি এখন এই ছবিটি নিয়ে কিছু বলতে চাচ্ছি না। সেন্সর বোর্ডে আপত্তি জানিয়ে চিঠি দিয়েছি। হয়তো খুব শিগগিরই ছবিটি আবার প্রিভিউ কমিটি দেখবেন। এরপর হয় তো কিছু বলতে পারব।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn