মারুফ খান মুন্না :: নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডে বছরজুড়েই আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল সিলেটের নগর ভবন। সিটি কর্পোরেশনের নানা কর্মকান্ড ছাপিয়ে ফুটপাত ইস্যুতে নগরবাসীর ভোগান্তিতে আলোচনার মধ্যবিন্দু ছিলেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। কারামুক্তি, মেয়র পদ থেকে বরখাস্ত, আইনী লড়াই, কর্মকর্তাদের সাথে মতবিরোধ, গাড়ী গায়েব এগুলো নগরভবন কেন্দ্রীক সমস্যা হওয়ায় সাধারণ জনগনের এসব বিষয়ে সম্প্রৃক্ততা নেই বললেই চলে। তবে বছরজুড়েই সিলেটবাসী ভোগান্তিতে ছিলেন সিলেটের ফুটপাত নিয়ে। ফুটপাত নিয়ে নগরবাসীর ভোগান্তি আর আরিফের ‘ব্যর্থতা’য় শেষ পর্যন্ত বিষয়টি আদালত পর্‍্যন্ত গড়ায়। ফুটপাত দখলমুক্ত করতে মেয়র আরিফ এবং কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গৌছুল হোসেনকে নিয়ে কমিটিও গঠন করা হয়।  বছরজুড়ে পুরো নগরীর ফুটপাতগুলো ছিলো হকারদের দখলে। কিছু কিছু জায়গায় ফুটপাত ছাড়িয়ে রাস্তার দখল ছিলো হকারদের। মেয়র আরিফ হকার্সদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিলেও উচ্ছেদ করতে পারেননি হকার্সদের। একদিকে মেয়রের তাড়া খেয়ে, কিছুক্ষণ পর তারা আবার ফুটপাত দখল করে নেয়। এটাকে মেয়রের ‘ব্যর্থতা’ হিসেবে দেখেছেন সিলেটবাসী। ফুটপাতকে দখলমুক্ত করার দাবীতে কয়েকটি সামাজিক সংগঠন সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মানববন্ধন করেছে, তারা জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপিও প্রদান করেছেন। মেয়র আরিফও ফুটপাতকে দখলমুক্ত করতে প্রশাসনের পাশাপাশি নগরবাসীর সহায়তা চেয়েছিলেন।

ফুটপাত দখলমুক্ত করতে আরিফের উদ্যোগঃ ফুটপাত দখলমুক্ত করতে সারা বছরজুরেই মাঠে ছিলেন মেয়র আরিফ। কখনো রোদে পুড়ে, কখনোবা বৃষ্টিতে ভিজেও ফুটপাত দখলমুক্ত করার অভিযানে নেমেছিলেন তিনি। হাতে লাঠি নিয়ে তাড়িয়েছেন অবৈধ হকারদের। কিন্তু আরিফের তাড়া খেয়ে একদিকে তারা সরে গেলেও অন্যদিকে দখল করে বসেছে ফুটপাত।  আরিফকে আদালতের নির্দেশঃ সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হোসেন আহমদ ফুটপাত দখলমুক্ত করতে আবেদন করেন আদালতের কাছে। এ আবেদনের প্রেক্ষিতে সিলেটে জেলা জজ কোর্টের মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক মো. সাইফুজ্জামান হিরো সিলেট নগরীর ফুটপাতের অবৈধ দখলদার ও দখলের নেপথ্যে থাকা প্রভাবশালীদের নাম জানাতে সিলেট সিটি করপোরেশনরে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে নির্দেশ দেন। একাজে মেয়রকে তদন্তকাজে সক্রিয় সহযোগিতা করার কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন আদালত। কমিটি গঠনঃ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী সিলেটের আদালত প্রাঙ্গণসহ জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও সিটি কর্পোরেশন কার্যালয় সংলগ্ন ফুটপাতে অবৈধ দখলদার, নেপথ্যে থাকা দখলদার পক্ষের ব্যক্তিদের নাম, ঠিকানা ও পরিচয় সনাক্তকরণের লক্ষ্যে সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে সভাপতি এবং কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গৌছুল হোসেনকে সদস্য সচিব করা হয়। এছাড়া কমিটিতে সদস্য হিসেবে সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, সিটি কাউন্সিলর, জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি, বার এসোসিয়েশনের প্রতিনিধি, সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধি, গণমাধ্যম প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।

২৬ জন দখলদারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানাঃ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী শেষপর্যন্ত মেয়র আরিফ এবং গৌছুল হোসেন আদালতে ২৬জন প্রভাবশালী এবং দখলদারের নাম আদালতে জমা করলে আদালত তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করে। যে ২৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয় তারা হচ্ছেন- সিলেট মহানগর হকার্স কল্যাণ সমবায় সমিতির সভাপতি রকিব আলী, সহ-সভাপতি আতিয়ার রহমান, শফিক আহমদ, মো. আব্দুল বাশার, রুহুল আমিন রুবেল, মখলেছুর রহমান, মো. আব্দুল আহাদ, সাধারণ সম্পাদক খোকন ইসলাম, জিন্দাবাজার অটোরিক্সা স্ট্যান্ডের আহ্বায়ক কামরুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক মো: ইসলাম উদ্দিন, শফিক উদ্দিন, আহ্বায়ক কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রুমন আহমদ, সদস্য সচিব ইউসুফ আলী, মধুবন পয়েন্ট ইমা-লেগুনা স্ট্যান্ডের সভাপতি সোহাগ মিয়া, সহ-সভাপতি মো: আদিল, সাধারণ সম্পাদক মো: কবির মিয়া, অর্থ সম্পাদক মো: বাবুল মিয়া, রংমহল টাওয়ার অটোরিকশা সিএনজি স্ট্যান্ডের সভাপতি মো: আজমল হোসেন, সহ-সভাপতি মো: মুরাদ হোসেন, তামাবিল ইমা লেগুনা স্ট্যান্ডের সভাপতি মো: সাহাব উদ্দিন সাবু, সহ-সভাপতি ফয়জুল মিয়া, কার্যকরী সভাপতি মো: নাজিম উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক মো: বদরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক আ: নুর হিরন, কোষাধক্ষ্য মো: আব্দুর রশিদ এবং অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন আম্বরখানা-সালুটিকর শাখার নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য তেরা মিয়া।

অবশেষে গ্রেফতার হকার্স লীগ নেতাঃ সিলেট মহানগর হকার্স কল্যাণ সমবায় সমিতির সভাপতি ও হকার্স লীগের পদধারী নেতা রকিব আলীকে নভেম্বরে গ্রেফতার করে পুলিশ। রকিব আলী সিলেট নগরীর ফুটপাত দখলদারদের আশ্রয়দাতা হিসেবে গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি ছিলেন। এতোকিছুর পরেও নগরবাসীর ভোগান্তি কমেনি, দখলমুক্ত হয়নি নগরীর ফুটপাত। মাঝেমধ্যে প্রশাসন নিয়ে মেয়র আরিফ অভিযান চালালেও অভিযানের দুই একদিন পর সেই আগের অবস্থা। নগরবাসীসহ সংশ্লিষ্টরা মনে করেন হকারদের পূনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে তাদের উচ্ছেদ করাটা অনেক কঠিন। তারা হকারদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে ফুটপাত দখলমুক্ত করে নগরবাসীর ভোগান্তি কমাতে মেয়র আরিফের কাছে আহবান জানান।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn