এমিলিয়ানো মার্টিনেজ পাখির মতো বাম দিকে উড়ে গিয়ে আটকে দিলেন কলম্বিয়ান মিডফিল্ডার এডউইন কারডোনার শট। তারপর পোস্টের পাশেই নির্বিকার দাঁড়িয়ে রইলেন। বিজয়োল্লাসে তখন আর্জেন্টিনার ফুটবলাররা তার দিকে দৌঁড় দিলেন। সবার আগে লিওনেল মেসি গিয়ে গভীর আবেগে জড়িয়ে ধরলেন গোলরক্ষককে। এমিলিয়ানোর চোখে পানি। মেসির চোখেরও আনন্দাশ্রু।
কোপা আমেরিকার সেমিফাইনালে টাইব্রেকারে আর্জেন্টিনা ৩-২ গোলে কলম্বিয়াকে হারানোর পর ব্রাজিলের ব্রাসিলিয়ায় এমনই এক আবেগঘন মুহূর্তই দেখল ফুটবলবিশ্ব। নির্ধারিত সময়ে খেলা ১-১ ড্র হওয়ায় কলম্বিয়ানরা যে বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছিলেন, সেটা তাদের শরীরী ভাষায় ফুটে উঠছিল। কারণ, কলম্বিয়ার গোলপোস্টে রয়েছেন বিশ্বসেরা গোলরক্ষক ডেভিড অস্পিনা। টাইব্রেকারে তিনি এক নম্বর! কিন্তু সেমিফাইনালে ক্যারিশমা দেখালেন এমিলিয়ানো। এ ম্যাচে তিনি একে একে তিনটি শট আটকে দিয়েছেন দুর্দান্ত ড্রাইভে। এমিলিয়ানো যেন রক্তে মাংসে মানুষ নন, ‘এলিয়েন’! আর্জেন্টিনার এই জয়ে ফুটবলপ্রেমীরাও খুশি।
১৪ বছর পর আবার কোপায় ‘আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল’ স্বপ্নের এক ফাইনাল দেখবে বিশ্ব। ফুটবল দুনিয়ার দুই সেরা তারকা লিওনেল মেসি ও নেইমারের লড়াই। এর আগেও লাতিন আমেরিকার এ প্রতিযোগিতায় ১০ বার মুখোমুখি হয়েছিল দুই দল। এর মধ্যে ৮ বারই (১৯২১, ১৯২৫, ১৯৩৭, ১৯৪৫, ১৯৪৬, ১৯৫৭, ১৯৫৯ ও ১৯৯১) চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। তবে ব্রাজিলের জন্য সুখবর হচ্ছে শেষ দুই ফাইনালেই (২০০৪ ও ২০০৭) তারা আর্জেন্টিনাকে হারিয়েছে। আর্জেন্টিনা এর আগেও ২৮ বার ফাইনাল খেলেছে কোপা আমেরিকায়। ১৪ বার শিরোপাও জিতেছে আলবেসিলেস্তোরা।
অন্যদিকে এ আসরে ব্রাজিল ৯ বার চ্যাম্পিয়ন হয়। সবমিলে তারা এর আগে ফাইনাল খেলেছে ২০ বার। লাতিন এই সেরা দুই দলই এবারের কোপায় আবার মুখোমুখি হচ্ছে। সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সে মেসির আর্জেন্টিনা যেমন দুরন্ত তেমনি নেইমারের যেমন ব্রাজিলও দুর্বার। তবে এবারের আর্জেন্টিনা অন্যরকম। তার মানে দল হিসেবে যে প্রতি ম্যাচেই চোখ ধাঁধানো ফুটবল খেলছে এমন নয়। কিন্তু আকাশী-সাদা জার্সিতে পায়ের জাদু দেখাচ্ছেন লিওনেল মেসি। চার ম্যাচে তিনি সেরা ফুটবলার হয়েছেন। টুর্নামেন্টে এ পর্যন্ত চারটি গোল এবং চারটি গোলে সরাসরি সহযোগিতা করেছেন। কলম্বিয়ার বিরুদ্ধে পেতে পারতেন দুর্দান্ত একটি গোল। কিন্তু ৮৩ মিনিটে তার শট পোস্টে লেগে ফিরে আসে।
এই ম্যাচে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে -‘মেসির পায়ে রক্ত’! এই ছবিই নির্দেশ করে এবার আর্জেন্টিনার জাসিতে জয়ের জন্য কতটা মরিয়া তিনি। এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ফুটবলে পাঁচবার ফাইনালে উঠেছে মেসির আর্জেন্টিনা। কিন্তু একবারও শিরোপা জিততে পারেনি। আসলে ১৯৯৩ সালের পর থেকে কোনো শিরোপাই জেতেনি আলবেসিলেস্তোরা। ১১ জুলাই-ই কেটে যেতে পারে আর্জেন্টাইনদের হতাশা। কেননা, পুরো টুর্নামেন্টে যেমনই খেলুক ফাইনালের ‘টেম্পারমেন্ট’ আলাদা। যে দলটির ফরোয়ার্ডে মেসির মতো মহাতারকা, ডিফেন্সে ওটামেন্ডির মতো মহাপ্রাচীর ও গোলপোস্টে এমিলিয়ানোর মতো ‘এলিয়েন’ গোলরক্ষক আছে তাদের শিরোপা না জিতে উপায় আছে! কিন্তু প্রতিপক্ষ দলটির নামও ব্রাজিল। তারা পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। নেইমারের মতো সুপারস্টার আছেন দলে। তবে আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল যে দলই চ্যাম্পিয়ন হোক না কেন এবারের কোপায় ফুটবল বিশ্ব দেখতে যাচ্ছে একটি নান্দনিক ফাইনাল।