কাতারভিত্তিক টেলিভিশন নেটওয়ার্ক আল জাজিরায় ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার্স ম্যান’ শিরোনামে প্রচারিত প্রতিবেদনকে ভ্রান্ত ও ভিত্তিহীন বলে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ সেনা সদর দপ্তর। আলজাজিরার প্রতিবেদনটিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট দাবি করে সকল বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও।

মঙ্গলবার (২ ফেব্রুয়ারি) রাতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) সহকারী পরিচালক রাশেদুল আলম খানের স্বাক্ষর করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রকৃতপক্ষে এটি এক স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর একটি সিক্যুয়েল যা সাম্প্রতিক সময়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এই প্রতিবেদনের মন্তব্যকারীরা হলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাজা ভোগ করা ডেভিড বার্গম্যান, মাদকাসক্তির অভিযোগে বাংলাদেশ সামরিক একাডেমি থেকে বহিষ্কার হওয়া প্রাক্তন ক্যাডেট জুলকারনাইন সের খান (প্রতিবেদনে সামি হিসাবে চিত্রিত) এবং অখ্যাত নেত্রা নিউজের প্রধান সম্পাদক তাসনিম খলিল।

এটি স্পষ্ট নয় যে, কীভাবে আল-জাজিরার মতো একটি আন্তর্জাতিক নিউজ চ্যানেল দাগী অপরাধীদের সাথে নিজেদের এই ধরণের উদ্দেশ্যমূলক সংযুক্ত করতে পারে। অশুভ-অনুপ্রাণিত এবং অর্পিত ব্যক্তিত্বদের সংযোগ তাদের অতীতের প্রমাণপত্রাদি স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান হয়েছে। ভিডিওটি প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন সরকারী, সামাজিক এবং ব্যক্তিগত ইভেন্টগুলির ক্লিপ দিয়ে একসঙ্গে তৈরি করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি সংযোগ বিচ্ছিন্ন ইভেন্ট ব্যাকগ্রাউন্ডে ভয়েস দিয়ে একসাথে এডিট করা হয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ইসরায়েল থেকে মোবাইল ইন্টারসেপ্টর ডিভাইস সংগ্রহের বিষয়ে প্রতিবেদনে প্রদত্ত ভ্রান্ত তথ্যের নিন্দা জানিয়েছে। সত্যটি হ’ল জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে মোতায়েনের কারণে সেনাবাহিনীর অন্যতম এক জঙ্গির জন্য হাঙ্গেরি থেকে সরঞ্জাম সংগ্রহ করা হয়েছিল।

সরঞ্জামগুলির মধ্যে কোথাও লিখিত ছিল না যে এগুলি ইসরায়েলি উৎস। ইসরায়েলের কাছ থেকে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা সংগ্রহের সুযোগ নেই যেহেতু বাংলাদেশের সাথে এই দেশের কোনও আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। দেশের বিকাশ ও বিকাশের পথে বাধা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রতিবেদককে বিভিন্ন সরকারী সংস্থাগুলির মধ্যে সম্প্রীতি ভঙ্গ করার একটি গোষ্ঠীর প্রয়াস হিসাবে বিবেচনা করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। বর্তমানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী চেইন অফ কমান্ডের অধীনে সবচেয়ে সুশৃঙ্খল এবং সংবিধান ও সরকারের অনুগত। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সর্বদা বাংলাদেশ সরকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিল এবং থাকবে এবং আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির দেশ গঠনের প্রয়াসে অবদান রাখবে।

গতকাল সোমবার ওই প্রতিবেদনটি প্রচার করে আল জাজিরা। এর পরই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান সম্পর্কে জানানো হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার করা “অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার’স মেন” শিরোনামে একটি মিথ্যা ও মানহানিকর প্রতিবেদন সম্পর্কে অবগত হয়েছে। প্রতিবেদনটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিভ্রান্তিকর সিরিজ ছাড়া আর কিছুই নয়, যা মূলত উগ্রবাদী সংগঠন জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে কুখ্যাত ব্যক্তিদের যোগসাজশে তৈরি রাজনৈতিক অপপ্রচার। সংগঠনটি (জামায়াতে ইসলামী) ১৯৭১ সালে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রগতিশীল ও ধর্মনিরপেক্ষ নীতির বিরোধিতা করে আসছে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

এতে আরো বলা হয়, প্রতিবেদনটি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ভয়াবহ গণহত্যার কথা উল্লেখ করতে ব্যর্থ হয়েছে, যেখানে লাখ লাখ বাঙালিকে হত্যা ও দুই লাখ নারীকে ধর্ষণের ঘটনায় জামায়াত অপরাধীর ভূমিকায় ছিল। প্রতিবেদনটি আল জাজিরার রাজনৈতিক পক্ষপাতমূলক প্রচারণার প্রতিচ্ছবি। এ ছাড়া প্রতিবেদনটির প্রধান ভাষ্যকার ছিলেন ডেভিড বার্গম্যান, যাকে মুক্তিযুদ্ধে সরকারি হিসাব মতে মৃত্যুর সংখ্যাকে চ্যালেঞ্জ করার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

এটি লক্ষ্যণীয়, আল জাজিরার করা অভিযোগের মূল ‘উৎস’ একজন আন্তর্জাতিক অপরাধী, যাকে আল জাজিরার পক্ষ থেকেই ‘মানসিক রোগী’ বলে দাবি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশের অন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে ওই ব্যক্তির যোগসাজশের কোনো প্রমাণও নেই। মানসিকভাবে অপ্রকৃতস্থ কোনো ব্যক্তির কথার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের পক্ষে অত্যন্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ বলে মনে করে মন্ত্রণালয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই বিবৃতিতে আরো উল্লেখ করা হয়, এ ছাড়া এতে অবাক হওয়ারও কিছু নেই যে, জামায়াতে ইসলামীর পৃষ্ঠপোষকতায় কিছু পলাতক আসামি ও নিন্দিত ব্যক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচারের সঙ্গে প্রতিবেদনটি সামঞ্জস্যপূর্ণ। সংগঠনটি আন্তর্জাতিক উগ্রবাদী দল ও সংবাদমাধ্যম, বিশেষ করে আল জাজিরার সঙ্গে মিলে ষড়যন্ত্র করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়, উগ্রপন্থি ও তাদের মিত্র—যারা লন্ডন ও অন্য জায়গায় তৎপর, তাদের মাধ্যমে প্ররোচিত এই অপপ্রচার প্রত্যাখ্যান করছে বাংলাদেশ সরকার। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির প্রমাণ রয়েছে। আফসোস এই যে, আল জাজিরা অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ সরকারকে অস্থিতিশীল করার উদ্দেশ্যে অপপ্রচারকারীদের ‘দূষিত রাজনৈতিক নকশার উপকরণ’ হওয়ার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে।-পূর্বপশ্চিমবিডি

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn