আলীশান বিয়ের আয়োজন করে কোটি কোটি টাকার ইয়াবাপাচার
বার্তা ডেস্ক :: কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রামের এক ইয়াবা কারবারির ভাইয়ের বিয়ে উপলক্ষে জমকালো অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকার ইয়াবা পাচার করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সীমান্তের দুর্গম এলাকা রত্না পালং ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের করইবনিয়া গ্রামের ইকবাল নামের ওই ইয়াবা কারবারির বাড়ির বিয়ে অনুষ্ঠানটি নিয়ে সীমান্ত এলাকায় তোলপাড় চলছে।
এলাকাবাসী জানিয়েছে, বিয়েবাড়ির অনুষ্ঠানটি নিয়ে গেট থেকে স্টেজ পর্যন্ত কেবল ডেকোরেশনের সাজ-সজ্জায় ব্যয় করা হয়েছে পাঁচ-ছয় লাখ টাকা। বিয়ে অনুষ্ঠানে রাতভর চলেছে গানের অনুষ্ঠান। সেই গানের অনুষ্ঠানে শিল্পীদের মাঝে ইয়াবা কারবারি ইকবালের পক্ষে ছিটানো হয়েছে ৫০০ ও এক হাজার টাকার অগণিতসংখ্যক নোট। বিয়েবাড়ির অনুষ্ঠানটিতে উপহার হিসেবে পাওয়া গেছে ১০টি গরু, ২৪টি ছাগল ও আনুষঙ্গিক অন্যান্য জিনিস। বিয়েবাড়ির মাইক দিয়ে এলাকার লোকজনকে খাবারের দাওয়াতও দেওয়া হয়।
গত শুক্রবার (২২ জানুয়ারি) রাতের এই অনুষ্ঠানটি নিয়ে এলাকায় চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। বিয়ের অনুষ্ঠানটি হয়েছে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আলী আহমদের বাড়িতে। আলী আহমদের জ্যেষ্ঠপুত্র মোহাম্মদ ইকবালের বিরুদ্ধেই রয়েছে ইয়াবা কারবারের অভিযোগ। ইকবাল একাধিকবার ইয়াবাসহ ধরা পড়ে কারাবরণও করেছেন। তার বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় কয়েকটি মামলা রয়েছে।
সীমান্তের একজন ইয়াবা কারবারির জমকালো বিয়ের অনুষ্ঠান নিয়ে উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহমেদ সনজুর মোরশেদ জানান, ‘বিষয়টি এত দিনেও আমার কানে কেউ দেননি। আমি আজই খোঁজখবর নিয়ে পরবর্তী সময়ে যা-ই করার তা-ই করব।’ ওসি দুঃখের সঙ্গে বলেন, রাষ্ট্রের স্বার্থে এলাকার সচেতন লোকজনের উচিত অস্বাভাবিক কোনো কিছু চোখে পড়লেই তা পুলিশকে জানানো। কিন্তু এ বিষয়টি নিয়ে অবাক হতে হচ্ছে-এলাকার লোক কিভাবে পারে মুখ না খুলে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইকবাল হচ্ছেন- মিয়ানমার-বাংলাদেশের মধ্যে ইয়াবার বড় ধরনের একজন ডিলার। মিয়ানমারে যেমনি তার সিন্ডিকেটের সদস্য রয়েছে, তেমনি বাংলাদেশেও রয়েছে সিন্ডিকেটের বহু সদস্য। অত্যন্ত ধূর্ত প্রকৃতির লোক কারবারি ইকবাল। ইকবাল ইয়াবা সিন্ডিকেটের কারণে বিপুল টাকার মালিক হলেও চালাকি করে তিনি এখনো ভাঙ্গা ঘরেই থাকেন। তারই ছোট ভাই নুরুল আমিন ভুট্টোর বিয়ের অনুষ্ঠানটি জমকালোভাবে আয়োজের নেপথ্যেও ছিল ইয়াবার বড় বড় চালান পাচার। বিয়ের অনুষ্ঠানে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা থেকে শুরু করে চেয়ারম্যান-মেম্বারদের নিয়ে যেতে ইকবাল অনেক তদবির করেছেন। তিনি সফলও হয়েছেন এ ক্ষেত্রে। বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগদানকারী উখিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মকবুল হোসাইন মিথুন এ বিষয়ে বলেন, ‘আমি কুঁড়ে ঘরে জমকালো বিয়ের আয়োজন দেখে হতবাক হয়ে গেছি। সেই বিয়ের অনুষ্ঠানে কি পরিমাণ টাকা খরচ করা হয়েছে না গেলে বুঝতাম না।’
তিনি বলেন, বর নুরুল আমিন ভুট্টোর চাচাতো ভাই মুবিন ছাত্রলীগ নেতা হওয়ায় মুবিনের অনুরোধে ছাত্রলীগের একঝাঁক নেতা-কর্মী সহকারে বিয়েবাড়িতে তার যাওয়া। ছাত্রলীগের সভাপতি মকবুল হোসাইন মিথুন আরো জানান, তিনি ইয়াবা কারবারি ইকবাল সম্পর্কে আগে জানতেন না। তাকে তারই সহকর্মী মুবিন ভুল বুঝিয়ে নিয়ে গেছেন। তবে বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়েই তিনি ইকবালের কাজ-কারবার নিয়ে বুঝতে পেরেছেন সীমান্তের এই দুর্গম এলাকার আলীশান আয়োজন দেখে। মকবুল হোসাইন মিথুন জানান, ‘আমরা যাওয়ার সময়ই অনেক নেতাকে বিয়ে থেকে খেয়েদেয়ে ফিরতে দেখেছি। তবে হতবাক হয়েছি- সেই অনুষ্ঠানে সরকারি চাকরিতে নিয়োজিত থাকা কতিপয় সদস্যদের উপস্থিতি দেখে।’