বার্তা ডেস্কঃঃউন্মত্ত এক যুদ্ধের নেশায় মেতেছে ইসরাইল। কোনো বাছবিচার নেই। উন্মত্তের মতো বেপরোয়াভাবে হামলা চালিয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিচ্ছে মুসলিমদের বাসভূমি গাজা। সেখানে রক্ষা পাচ্ছে না আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোও। এরই মধ্যে তারা আকাশচুম্বী একটি ভবনে হামলা চালিয়েছে। সেখানে আল জাজিরা, এপি সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের অফিস ছিল। আল জালা নামের ওই ভবনটিতে বোমা হামলা চালিয়ে তা মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে ইসরাইলিরা। এ থেকে স্পষ্ট ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু কোনো কিছুর পরোয়া না করে যথেচ্ছ বোমা হামলা চালাচ্ছেন।
তিনি যখন এই উল্লাসে মেতে উঠেছেন তখন আন্তর্জাতিক দুনিয়া থেকে জোরালো কোন প্রতিবাদ নেই। উল্টো বলা হচ্ছে ‘ইসরাইলেরও আত্মরক্ষার অধিকার আছে’। নেতানিয়াহুকে আস্কারা দেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে মার্কিন প্রশাসনের বিরুদ্ধে। কংগ্রেসে প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য, ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত রাশিদা তৈয়ব মার্কিন প্রশাসনের তুখোড় সমালোচনা করেছেন। কোনো কিছুর পরোয়া না করে নেতানিয়াহু যখন হত্যাযজ্ঞ, ধ্বংসযজ্ঞে মেতেছেন, তখন বিশ্ববিবেক নিশ্চুপ। যা-ও বা দু’চারজন বিশ্বনেতা এর প্রতিবাদ জানাচ্ছেন, তা-ও জোরালো নয়। আজ শনিবারও গাজায় নিরবচ্ছিন্নভাবে বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। আজও কমপক্ষে ১০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে আটটি শিশু ও দু’জন নারী। সব মিলে গাজায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ১৪০। এ অবস্থার মধ্যে ইসরাইলের দখলদারিত্ব এবং গাজায় বোমা হামলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে পশ্চিমতীরে সমবেত হয়েছিলেন ফিলিস্তিনিরা। নাকবা বা বিপর্যয়কে চিহ্নিত করে সারাবিশ্বে হয়েছে সংহতি র্যালি।
ইসরাইলে জায়নবাদী জঙ্গিরা কমপক্ষে সাত লাখ ৫০ হাজার জাতিগত ফিলিস্তিনিকে উচ্ছেদ করে প্রতিষ্ঠা করেছিল ইসরাইল রাষ্ট্র। সেই দিনটিকে নাকবা দিবস বা দ্য ক্যাটাস্ট্রফ হিসেবে পালন করা হয়। গাজায় ইসরাইলের সহিংসতা বৃদ্ধির ফলে সেখানে মানবিক সঙ্কট সৃষ্টি হচ্ছে। হাজার হাজার ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছেন জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুলগুলোতে। জাতিসংঘের হিসাবে প্রায় ১০ হাজার ফিলিস্তিনি ইসরাইলের নৃশংসতা থেকে রক্ষা পেতে ঘরবাড়ি ছেড়েছেন। ওদিকে আজ আল জাজিরা, এপির অফিস গুঁড়িয়ে দেয়ার কড়া নিন্দা জানিয়েছেন এথিক্যাল জার্নালিজম নেটওয়ার্ক। আইদান হোয়াইট বলেছেন, মিডিয়া ভবন ধ্বংস করে দেয়া সবচেয়ে নিন্দনীয় এবং সবচেয়ে বেপরোয়াপনার সর্বনিম্ন স্তরের কাজ। তিনি বলেন, বেসামরিক জনজীবনের ওপর হুমকি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। যুদ্ধক্ষেত্রে সাংবাদিকরা এবং মিডিয়া যে কি ভয়াবহতার মুখোমুখি তা আর একবার প্রকাশ পেয়েছে এ ঘটনায়। এ ঘটনায় আমার মনে হয়েছে এই ধ্বংসলীলা চালানো হয়েছে মিডিয়াকে স্তব্ধ করে দিতে এবং সমালোচনার কণ্ঠকে রুদ্ধ করতে।
গাজায় কোনো স্থানই এখন আর নিরাপদ নয় বলে জানিয়েছেন গাজার সাংবাদিক ইউমনা আল সাঈদ। তিনি গাজা সিটির আল শিফা হাসপাতাল থেকে রিপোর্ট দিচ্ছিলেন। বলেছেন, এখন রিপোর্ট করার জন্য একমাত্র স্থান হলো হাসপাতাল। আমাদের জানামতে, এটাই নিরাপদ স্থান। শিফা এর আগে টার্গেট করা হয়েছিল। তা সত্ত্বেও গাজায় আমরা এটাকেই নিরাপদ স্থান হিসেবে বেছে নিয়েছি। এখান থেকেই খবর সম্প্রচার করছি। আল জালা ভবনকে টার্গেট করার আগেই আমরা সেখান থেকে সবকিছু সরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। ওই ভবনটির মালিক সবাইকে নিরাপদে সরে যেতে মাত্র এক ঘন্টা সময় দিয়েছিলেন।
এ সময়ে ইসরাইলিরা তাকে বার বার ফোন করছিল। জবাবে তিনি তাদেরকে বলেছেন, আর ৩০ মিনিট সময় দিতে, যাতে স্টাফগুলো ভবনটি থেকে বেরিয়ে যেতে পারেন। কিন্তু আর সময় দেয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন ইসরাইলি সেনা মুখপাত্র। তারা সাফ জানিয়ে দেয় মাত্র এক ঘন্টার মধ্যে হামলা চালাবে তারা। এ সময়ে আর কেউ যাতে ওই ভবনের ভিতরে প্রবেশ না করেন। গাজায় এই ধ্বংসলীলা ভয়াবহ। ওই ভবন থেকে কয়েক শত পরিবারকে উদ্ধার করা হয়েছে। আল জাজিরার পাশাপাশি আল জালা ভবনে অফিস ছিল বার্তা সংস্থা এপির। এর প্রেসিডেন্ট এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা গ্যারি প্রুইত ইসরাইলের এই হামলায় হতাশা এবং ভীতি প্রকাশ করেছেন। বলেছেন, অবিশ্বাস্যরকম হতাশাজনক হামলা এটা।
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
৮৬ বার