-রোমেনা লেইস
কথা সাহিত্যিক আনিসুল হকের বইমেলায় প্রকাশিত একটা বই পড়তে চেয়ে ফেব্রুয়ারি মাসে স্টেটাস দিয়ে ছিলাম ফেসবুকে ।কিছুদিন পর আমার কাছে ডিএইচএলে পার্সেল আসলো।সেই বই পাঠিয়েছিলি তুই ।ডিএইচ এলে ইউএসএ বই পাঠানোর খরচত কম না।বই এর ওজন বেশী।তুই সেটা পরোয়া করিসনি।পাঠিয়ে তারপর জানিয়েছিস আমাকে।
নিউইয়র্ক আসলে হাডসন ,ইস্ট রিভার , জ্যামাইকা তুমুল আড্ডা আর ঘুরাঘুরি ।সবার সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ ।সব স্তব্ধ হয়ে গেলো ।সব কোলাহল ,সব আড্ডা থেমে গেলো।
মৃত্যু এক কঠিন সত্য ।সব বন্ধন তুচ্ছ করে চলে যেতে হয়।চলে যাওয়াই সবচেয়ে ধ্রুব সত্য। একদিন সবাই চলে যাবো।মৃত্যুর দিকে ধাবিত জীবনই সত্য।মৃত্যু কি পারে সবকিছু কেড়ে নিতে? মানুষের কর্ম বেঁচে থাকে অথবা বলা যায় মানুষ তার সৃষ্টিশীলতার মধ্যে বেঁচে থাকে ।হ্যা পীর হাবীবের কথা বলছিলাম ।এই যে এতো এতো আর্টিকেল লিখলি , টক শো করলি ।একজন মানুষ যতো বছর বেঁচে থাকে এই সময়ে যা যা করে সেটাই তার অর্জন ।বিনিময়ে এই যে মানুষের ভালবাসা এই তার প্রাপ্তি ।কিন্তু যারা বেঁচে থাকে সেই আত্মীয় স্বজন তারা মৃত্যুকে মেনে নিতে পারে না সহজে।কষ্ট হয় তাদের মেনে নিতে এই বিয়োগ ব্যথা।
২০১৮ সালের ডিসেম্বরের তিনতারিখে আমার আম্মা মধ্য রাতে মারা গেলেন।ছোটবোন রুনার কাছে শুনলাম সবার আগে হাবীব আর মিসবাহ ছুটে এসেছিলো ।হাবীব ছিলো এমনি।রুনার হাজবেন্ড শাহীনের হার্ট এটাক হলো।ব্লক ধরা পড়লো।হাবীবকে ফোন করতেই আমাকে শাসন করলো আমরা আছি এখানে।তোমার বিদেশে বসে চিন্তা করা লাগবে না।শাহীনের সর্বোচ্চ চিকিৎসা হবে ।শাহীন আমার ভাই।ওর পাশে আমরা আছি।এবং তা শুধু মুখে বলে খালাস না।ছিলোও।
আজ লাইভে দেখলাম রাতের সিলেট সুনামগঞ্জ সড়কে ছুটে চলেছে হাবীবের নিথরদেহ নিয়ে ফ্রীজার কনটেইনার ট্রাক।সাইরেন বাজছে।আহসানমারা,নীলপুর,মল্লিকপুর,বাসস্ট্যান্ড। জামাইপাড়া দিয়ে কালীবাড়ি রোড ধরে গার্লস স্কুলের পাশ দিয়ে চলে গেলো ওদের বাসায় ।মাত্র দুই সপ্তাহ আগেই ঘুরে এসেছিলো সুনামগঞ্জ থেকে।
আমি দেশে যাবার আগেই হাবীবের পরিকল্পনা শুরু হতো। এয়ারপোর্টে নামলেই আপা আমার অফিসে আসো।বাসায় আসো।সুনামগঞ্জে চলো এবার হাওরে নৌকাভ্রমণে যাবো ।গানের আসর হবে।ও যেতে না পারলেও মনিভাবী দীনা আর মুনমুনভাবীর নেতৃত্বে অন্তরসহ আমরা নৌকাভ্রমণে যাই।মতিভাই আর মিসবাহর আমন্ত্রণে রাতে টেবিল ভর্তি খাবারসহ ডিনার করি।আড্ডা আর আলাপে মত্ত সময় কাটে।আমাদের কফির কাপের আড্ডায় ফোনে যোগ দেয় হাবীব ।
সুনামগঞ্জের কোন ভাবীর বাসায় গিয়ে কী জ্বালাতন করা যাবে।কে কী ভাল রাঁধতে পারেন।শিউলিভাবীর পিঠাপুলীর স্বাদ নিয়ে কতো কথা।কতো খুনসুটি।মুনমুনভাবীকে নিয়ে কতো মন্তব্য ।এতো দুষ্টামি করতে পারতি।হাওরে গানের আসর করতে হবে।কতো পরিকল্পনা।কিছুই করা হলো না।ক্যান্সার বাঁধিয়ে বসলি।ক্যান্সার সারলো।একটু রয়ে সয়ে ধীর স্থির হয়ে চললে কী হতো রে ভাই? করোনাকে ভয় না পেলে চলে? তুই দাওয়াত,অফিস, জনসমাবেশ সবখানেই যেতে শুরু করলি।আমার একটুও ভাল লাগেনি।মনে কু ডাকছিলো। তবু গ্রুপ কলে যেদিন সাবেরিন বললো তুই ভাল আছিস মনে স্বস্তি পেয়েছি।লাস্ট গ্রুপকল আমি ধরিনি একটু ব্যস্ত ছিলাম ।কিন্তু এরপর যে আর কোনদিন কথা হবে না তা কি জানতে পেরেছি।
গতবছর ১লা মার্চে তোর বাসায় দেখা ।এই যে শেষ দেখা ছিলো তা বুঝতে পারিনি ।সেদিন সেন্টুর বাবার জন্য দোয়া খায়ের ছিলো ।ডায়ানা অন্তরকে যেতে বলছিলো বারবার ।তোর দেয়া জামদানী শাড়ি এখনো পরিনি।তার আগেই চলে গেলি কোন দূরের আকাশে ।সেখান থেকেতো আর উপহার বিনিময় হবে নারে পাগল।ধুমপান আর শারীরিক অযত্ন একটু কম করলে নাতিপুতির মুখ দেখে যেতে পারতি।নিদেন পক্ষে বৌমার মুখ দেখে যেতে পারতি।কারো কথাই শুনলি না।এখন?এখন সবার কান্না দেখ।অন্তর আর চন্দ্রস্মিতার কান্না মুছাতেও পারবি না।কান্না ছাড়া ওদেরতো আর কিছুই রইলো না রে।
হাবীব তুই টেনে এনে লেখালেখির প্রকাশনা শুরু করিয়ে ছিলি।আজ পাঁচদিন তুই চলে গেছিস কিছুই লিখতে পারছি না।আমাদের স্মল টাউনে কতো কিছু করার কথা,আলোড়ন তোলার কথা।কতো পরিকল্পনা সব শেষ হয়ে গেলো।সব থেমে গেলো ।
‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস
দম ফুরাইলে ঠুস
তবুতো ভাই কারোরই নাই
একটু খানি হুশ।’
মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থণা করি পরলোকে
মঙ্গলালোকে থাকিস।
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
১৬০ বার