আ.লীগে চার বছরে ৩০ হাজার ‘হাইব্রিড’
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মাঠ এখন ‘হাইব্রিডদের’ দখলে। ‘বিশুদ্ধ’ নেতাদের ছাপিয়ে তাদেরই জয়-জয়কার। ত্যাগী নেতারা ভীষণ ক্ষুব্ধ ও হতাশ হয়ে পড়েছেন। এ কারণে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের এত উন্নয়নের পরও তৃণমূলে আওয়ামী লীগের জনসমর্থন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।গোয়েন্দা তথ্যমতে, সরকারের গেল চার বছরে গোটা দেশে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা দলে দলে যোগ দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল ও এর বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনে। অতীত অপকর্ম থেকে রেহাই পাওয়া, দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, আগামী নির্বাচনে জনগণ থেকে দলকে বিচ্ছিন্ন করার টার্গেট নিয়ে তারা আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছে। জামায়াত-শিবির-বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ে এসব নেতাকর্মী ও সমর্থকরা প্রকাশ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগে যোগদান করেছেন।শুধু তাই নয়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্থানীয় সংসদ সদস্যরাও (এমপি) নিজেদের আলাদা বলয় সৃষ্টি করতে বিএনপি-জামায়াত থেকে আসা নেতাকর্মীদের দলে গুরুত্বপূর্ণ পদও দিয়েছেন। এ কারণে দলের ক্ষমতার মাঠ এখন তাদের নিয়ন্ত্রণে।
বিষয়টি উপলব্ধি করেই সম্প্রতি কয়েকটি অনুষ্ঠানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ব্যঙ্গ ও শ্লেষ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘সংগঠনে কাউয়া (কাক) ঢুকছে। এসব অনুপ্রবেশকারীই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে।’ তিনি বলেন, ‘প্রচার লীগ, তরুণ লীগ, কর্মজীবী লীগ, ডিজিটাল লীগ, হাইব্রিড লীগ আছে। কথা হাছা, সংগঠনে কাউয়া ঢুকছে। জায়গায় জায়গায় কাউয়া আছে।’ ওবায়দুল কাদের ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘পেশাহীন পেশিজীবী দরকার নেই। ঘরের ভেতর ঘর বানানো চলবে না। মশারির ভেতর মশারি টানানো চলবে না।’
সূত্রমতে, গেল চার বছরে তৃণমূল আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ পদ লাভ করেছেন ‘দলবদল করা’ জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মীরা। উপজেলা থেকে ওয়ার্ড পর্যায়ে দলীয় পদ বেচা-কেনার ঘটনা একেবারেই ‘ওপেন সিক্রেট’ ছিল। আর অর্থের বিনিময়ে সেসব পদ কিনে নিয়েছেন প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাই। শুধু তাই নয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পুলিশে নিয়োগসহ স্থানীয় গুরুত্বপূর্ণ সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রেও কলকাঠি নেড়েছেন তারা। স্থানীয় এমপিদের ছত্রচ্ছায়ায় নেমপ্লেট ব্যবহার করে এসব অনুপ্রবেশকারী নানা বাণিজ্যে লিপ্ত হয়েছে। দেশব্যাপী মনিটরিং করে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা এসব তথ্য পেয়েছে। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অবিলম্বে এসব ‘হাইব্রিড’ ও ‘পরগাছা’ নেতাদের দল থেকে বের করে না দেয়া হলে ভবিষ্যতে দলে মারাত্মক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মীদের আওয়ামী লীগে প্রবেশের ক্ষেত্রে দলের হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা অধিকাংশ জেলার তৃণমূলে মানা হয়নি। বিষয়টিকে মোটেও ভালোভাবে নেননি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। বেশ কয়েকবার তিনি নেতাকর্মীদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, আওয়ামী লীগের যথেষ্ট নেতাকর্মী ও সমর্থক রয়েছে। নতুন করে দলে লোক নেয়ার দরকার নেই।
সূত্র জানায়, হাইকমান্ডের এমন নির্দেশনার পর নতুন কৌশল অবলম্বন করে জামায়াত। চিহ্নিত নেতাদের না ঢুকিয়ে যারা জামায়াতের কর্মী ও সমর্থক তাদের আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করিয়ে দেয়। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মীদের আওয়ামী লীগে যোগদানের জন্য তৃণমূল আওয়ামী লীগের উদ্যোগে যেসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল তাতে প্রধান অতিথি হিসেবে বিভিন্ন মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। দল শক্তিশালী করতে ২০১১ সালে সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু করে আওয়ামী লীগ। সারা দেশে দুই টাকা মূল্যের সদস্য ফরম পাঠানো হয়। কিন্তু পরে তা আর বেশি দূর এগোয়নি। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের অভিযোগ, অভিযান শুরুর পর তা বাস্তবায়নে আর আগ্রহ দেখাননি কেন্দ্রীয় নেতারা। এ পরিস্থিতিতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় এমপিদের মদদে জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মীদের দলে ভেড়ানো হয়।