ওয়েছ খছরু- আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে এবার চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগ। বর্তমান কমিটি ভোটের প্রথম চ্যালেঞ্জে জয় দেখেছে। সিলেট-৩ আসনে নির্বাচনে জয়লাভ করেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান। এখন ইউনিয়ন নির্বাচনেও জয় চান তারা। আশঙ্কা আছে; ভোটের মাঠে বিএনপি’র স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা নিজ দলের শক্তিশালী বিদ্রোহী প্রার্থীর মুখোমুখি হতে হবে নৌকার প্রার্থীদের। এমন আভাস এরই মধ্যে ভোটের মাঠে পাওয়া গেছে। এ কারণে প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল করতে চান না সিলেটের নেতারা। সরাসরি তৃণমূলের নেতাদের ভোটে তারা প্রতিটি ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী বাছাই করতে চান।
শুক্রবার রাত থেকে সিলেট আওয়ামী লীগের নেতারা এই প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। আর গতকাল সিলেটের বর্ধিত সভায় সিদ্ধান্তটি আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করা হয়েছে। দলের তৃণমূলে বিভক্তি, নেতাকর্মীদের পরস্পরবিরোধী অবস্থানের কারণে গেল ইউনিয়ন নির্বাচনে সিলেটে তেমন সুবিধা করতে পারেনি আওয়ামী লীগ। ১০৭টি ইউনিয়ন নির্বাচনের মধ্যে অর্ধেকটিই তাদের হাতছাড়া হয়। আর এর অন্যতম কারণ ছিল; মাঠ পর্যায়ের নেতাদের পরস্পরবিরোধী অবস্থান।
সিলেটে এবার নতুন করে সাজানো হয়েছে আওয়ামী লীগকে। নেতৃত্বে আনা হয়েছে পরিবর্তন। এ কারণে পরিবর্তিত এই নেতৃত্ব নির্বাচনকেন্দ্রিক ভোটের রাজনীতিতে বিজয়ী হতে সবাইকে নিয়ে একাট্রা হয়ে মাঠে নামছে। জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন, প্রতিটি উপজেলায় গিয়ে তারা তৃণমূলের নেতাকর্মীদের ভোটের রায়ের মাধ্যমে ইউনিয়ন নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীদের চূড়ান্ত করছেন। শুক্রবার রাতে তারা সিলেট সদর উপজেলার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। সদরের চারটি ইউনিয়নে ভোটের মাধ্যমে চারজন প্রার্থীকে চূড়ান্ত করা হয়েছে। তবে তৃণমূলের ভোটের পরও জেলা নেতৃবৃন্দের পুনরায় প্রার্থীদের চূড়ান্তকরণের বিষয়টি বিবেচনায় নেবেন। বিতর্কিত কেউ তৃণমূলের ভোটে চূড়ান্ত হলেও তাকে বাদ দিয়ে নতুন প্রার্থী দেয়া হবে।
সিলেট সদরের চারটি ইউনিয়নের মধ্যে কান্দিগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন তৃণমূলের মতামতে চূড়ান্ত হতে পারেননি। তার জায়গায় অপর আরেকজনকে চূড়ান্ত করা হয়েছে। জেলার নেতারা বিষয়টি পুনরায় বিবেচনায় নিতে পারেন বলে জানিয়েছেন নেতারা। এ ছাড়া, জালালাবাদ ইউনিয়নে ওবায়দুল ইসহাক, হাটখোলা ইউনিয়নে মশাহিদ আলী, মোগলগাঁও ইউনিয়নে হিরণ মিয়া তৃণমূলের সমর্থন পেয়েছেন বলে জানা গেছে। উপজেলার নেতারা জানিয়েছেন, প্রতিটি ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং থানা কিংবা উপজেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ভোট দিয়েছেন।
মোট ২০টি ভোটের মাধ্যমে প্রার্থী নির্বাচন করা হচ্ছে। তাদের ভোটের মাধ্যমে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হচ্ছে। যদি তৃণমূলের ভোটের বাইরে প্রার্থীদের মনোনয়ন দেয়া হয় সেখানে দলের ভেতরে বিদ্রোহ দেখা দিতে পারে। এ জন্য তারা জেলার নেতাদের চিন্তাভাবনা করে মনোনয়ন চূড়ান্ত করার দাবি জানান উপজেলার নেতারা। এদিকে- গতকাল রাতে কোম্পানীগঞ্জের ৫টি ইউনিয়নে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে বৈঠকে বসেছেন জেলার নেতারা। দিনে নগরীর জেলা পরিষদ মিলনায়তনে বর্ধিত সভা করে রাতে কোম্পানীগঞ্জে ছুটে গেছেন তারা। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী সেখানেও ভোটের মাধ্যমে প্রার্থী চূড়ান্তকরণের প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে। কারণ একেকটি ইউনিয়নে নৌকার টিকিট পেতে ৪-৫ জন প্রার্থী প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। এতে করে ভোটাররাও বিব্রত হচ্ছেন। তবে জেলার নেতারা সার্বিক বিষয়ে উপজেলার নেতাদের সহযোগিতা করছেন। আজ বালাগঞ্জে প্রার্থী বাছাইয়ে জেলার নেতাদের যাওয়ার কথা রয়েছে।
বালাগঞ্জের ৬টি ইউনিয়নে ভোটের মাধ্যমেই প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান গতকাল সন্ধ্যায় মানবজমিনকে জানিয়েছেন, সরাসরি তৃণমূলের নেতাদের মতামতের ভিত্তিতেই প্রতিটি ইউনিয়নে প্রার্থী বাছাই করা হবে। সে প্রক্রিয়া এরই মধ্যে শুরু করা হয়েছে। সিলেট সদর ও কোম্পানীগঞ্জে প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। এখন বালাগঞ্জে প্রার্থীদের চূড়ান্ত করা হবে। তিনি জানান, তৃণমূলের ভোটের পর যদি চূড়ান্ত হওয়া প্রার্থীদের নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয় তখন জেলার নেতারা এ নিয়ে পুনরায় বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেবেন। বিদ্রোহী প্রার্থী ঠেকাতে ও শক্তিশালী প্রার্থী নির্বাচনে এই প্রক্রিয়া কাজ করছে বলে জানান তিনি।
এদিকে গতকাল সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় ইউনিয়ন নির্বাচনের ফাঁকে ফাঁকে ১৩ উপজেলায় নতুন করে বর্ধিত সভার আয়োজন করা হবে বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। উপজেলা বর্ধিত সভার মাধ্যমে নেতাকর্মীদের ঐক্য ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা চালানো হবে। এ ছাড়া, আওয়ামী লীগের সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনের কর্মকাণ্ড ও সাংগঠনিক কাজের খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
১৩৩ বার