মঞ্চে উপস্থিত সাবেক অর্থমন্ত্রী ও লেখক আবুল মাল আবদুল মুহিত এবং কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক মোস্তফা কামাল। মঞ্চের সামনে উপস্থিত বিভিন্ন বয়সের লেখক, সংস্কৃতিকর্মী, পাঠকসহ নানা বয়সী মানুষ।দুই বিশিষ্টজন শোনালেন ইতিহাসভিত্তিক সাহিত্যচর্চার কথা, ইতিহাসের আশ্রয়ে সাহিত্য রচনার গুরুত্ব। পাশাপাশি ছিল প্রশ্নোত্তর পর্ব। অতিথি দুই জন জানান, ইতিহাস ও সাহিত্য আলাদা হলেও তাদের মধ্যে গভীর সম্পর্ক আছে। ঐতিহাসিক ইতিহাসের ঘটনা লিপিবদ্ধ করেন, সাহিত্যিক ইতিহাস ও সময়ের বাঁকে বাঁকে আলো ফেলে তাকে জীবন্ত করেন। ভিন্নধর্মী ‘লেখক-পাঠক সংলাপ’ শিরোনামের এ আয়োজন অনুষ্ঠিত হল শুক্রবার রাজধানীর বাংলামোটরের বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ভবনের মেগা বুকস্টল বাতিঘর মিলনায়তনে। লেখক-পাঠকঘিরে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ঢাকা ইনিশিয়েটিভ। সহযোগিতা করে অয়ন প্রকাশন।

সকাল ঠিক সোয়া ১০টায় শুরু হয় এ আয়োজন। শুরু হতে না হতেই উপস্থিত হন প্রধান অতিথি আবুল মাল আবদুল মুহিত। এর আগেই বিশেষ অতিথি মোস্তফা কামালের কাছেও পাঠকরা প্রশ্ন রাখতে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তাদের ঘিরে প্রাণবন্ত আড্ডা-আলোচনায় মুখর হয়ে ওঠে ছোট মিলনায়তন। রাজনীতি ও আমলা জীবনের বাইরে আবুল মাল আবদুল মুহিত শোনান শিল্প-সাহিত্যসংশ্লিষ্ট জীবনের কথা। তিনি বলেন, কবিতা লিখতে চেয়েছিলাম। বহু চেষ্টা করেও জীবনে একটা কবিতা লিখতে পারিনি। আমার কাজ আসলে গবেষণাধর্মী। মননশীল প্রবন্ধ-নিবন্ধ লিখেছি। আমার লেখা প্রবন্ধ ৩৫টি। প্রবন্ধ মানেই গবেষণা। দীর্ঘ সময় ভয়ঙ্কর ব্যস্ত জীবন পার করেছি। ব্যস্ততার মধ্যেও যে ৩৫টি প্রবন্ধ লিখেছি, তা কম নয়। কারণ আমার প্রতিটি লেখাই অনেক কষ্ট করে লেখা, অনেক গবেষণার ফসল। ইতিহাসের আলোয় লেখা আমার প্রবন্ধ-নিবন্ধ গুরুত্ব পাবে আশা করি। তিনি বলেন, আমি লেখালেখি শুরু করি যখন আমার বয়স ১০ বছর। ১৯৪৪ সালে একটি রচনা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে আমার লেখালেখি শুরু। পরবর্তীতে, ব্যাপকভাবে লেখালেখি শুরু করি ১৯৪৬-৪৭ সালে।

সিলেটে ১৯৩০ সাল থেকে নিয়মিত প্রকাশিত প্রথমে সাপ্তাহিক, পরে দৈনিক যুগভেরী পত্রিকার সম্পাদক আমাকে পত্রিকাটির অর্ধেক দিয়ে দেন লেখালেখির জন্য। আমি তখন পত্রিকাটির কিশোর মজলিশ নামের পাতায় লিখতাম। অর্ধেক পত্রিকায় লেখার জন্য কার কাছে যাব, কী করব? তার থেকে আমি নিজেই বিভিন্ন নামে নানা কিছু লিখতাম। শুধু কবিতা লিখতে পারতাম না। নিজের অভিনয় জীবনের কথা কথা উল্লেখ করে আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, মার্চেন্ট অব ভেনিস নাটকে একটা ভূমিকায় অভিনয়ে সিলেকশনের জন্য যাই। স্কুলে থাকতে নাটক করেছিলাম। তবে এখানে নাটকের সিলেকশনে ফেল করি। সেই যে ফেল করেছি, আর কোনোদিন অভিনয়ের ধারে-কাছে যাইনি। কিন্তু সেই থেকেই নাটকের অর্গানাইজার হয়ে যাই।

বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক, দৈনিক কালের কণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক মোস্তফা কামাল বলেন, নিয়মিতভাবে লিখি ১৯৯১ সাল থেকে, প্রতিদিনই লেখি। কেননা লেখালেখি আমার কাছে প্রার্থনার মতো। আমি সবসময় চেয়েছি, দীর্ঘ ক্যানভাসে উপন্যাস লিখব। আমার অধিকাংশ বই ইতিহাসভিত্তিক ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গল্প-উপন্যাস। ইতিহাসের বই থেকে ইতিহাস জানা যায়। তবে তরুণ প্রজন্মের কাছে এটা কাঠখোট্টা বিষয় মনে হতে পারে। আমি মনে করি, ইতিহাস যদি স্ট্রাকচার হয়, আর তাতে যদি রক্ত-মাংস, জীবন দেয়া যায়, তাহলে এটি কথা বলতে পারে। ইতিহাসবিদ ইতিহাস রচনা করেন, কিন্তু একজন সাহিত্যিক ও ঔপন্যাসিক ইতিহাসকে প্রাণ দেন। তখন ইতিহাস কথা বলে, হাঁটতে শেখে। ইতিহাস তখন সত্যের জায়গায় চলে যায়। ঢাকা ইনিশিয়েটিভের সমন্বয়ক, সাংবাদিক পার্থ সারথি দাস বলেন, সামনের পথে এগিয়ে যেতে অতীতের কাছ থেকে উৎসাহ দরকার। লেখক-পাঠক সংলাপে আরও অংশ নেন সাহিত্যিক ও অধ্যাপক হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও ঔপন্যাসিক ইসমাইল হোসেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কলামিস্ট ড. মিল্টন বিশ্বাস, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও লেখক মামুন উর রশিদ, সাংবাদিক মুস্তফা মনোয়ার সুজন, বাতিঘরের কর্ণধার দীপঙ্কার দাশ, প্রকাশক মিঠু কবীর প্রমুখ।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn