ইতিহাস গড়া হলো না টাইগারদের
সাকিব আল হাসানের বিদায়ের পরই নিভে গিয়েছিল স্বপ্নের প্রদীপ। আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের বিদায়ের পর হার প্রায় নিশ্চিত। বাকি ছিল শুধু আনুষ্ঠানিকতা। তবে মাঝে মাশরাফি-মিরাজ-তাসকিনরা চেষ্টা করলেন। তবে তাদের সে চেষ্টায় কেবল হারের ব্যবধানই কমিয়েছে। শ্রীলঙ্কার মাটিতে ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ের মিশনে নেমে ৭০ রানের বড় ব্যবধানেই হারতে হলো টাইগারদের। তবে সিরিজ হারতে হয়নি। ১-১ ব্যবধানে সমতার স্বাদ নিয়েই মাঠ ছাড়লেন মাশরাফি বিন মর্তুজারা। ২৮১ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই কঠিন বিপর্যয়ের মুখে পড়ে বাংলাদেশ। ১১ রান তুলতেই আউট হয়ে যান বাংলাদেশের সেরা তিন ব্যাটসম্যান তামিম-সাব্বির-মুশফিক। ইনিংসের প্রথম ওভারের শেষ বলে কুলাসেকারাকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরে যান ওপেনার তামিম ইকবাল।
তামিম আউট হওয়ার পর সুরাঙ্গা লাকমালের ওভারটি কোনমতে কাটিয়ে দিলেন সৌম্য আর সাব্বির। পরের ওভারে বল করতে এসে আবারও বাংলাদেশের ইনিংসের ওপর আঘাত হানেন নুয়ান কুলাসেকারা। এবারও ওভারের শেষ বলে। বাইরে বেরিয়ে যাওয়া বলটিকে খোঁচা মারতে গিয়ে উইকেটরক্ষক দিনেশ চান্দিমালের হাতে ক্যাচ দিয়ে রানের খাতা খোলার আগেই ফিরে যান সাব্বির রহমান। এরপর সৌম্য সরকারের সঙ্গে এসে জুটি বাধেন মুশফিকুর রহীম। প্রয়োজন ছিল এ দু’জনের একটি ভালো জুটির; কিন্তু পরের ওভারেই সুরাঙ্গা লাকমালের তৃতীয় বলটিতে পুরোপুরি পরাস্ত মুশফিক। এলবিডব্লিউর আবেদন উঠতেই আম্পায়ার আঙ্গুল তুলে দিলেন। মুশফিক রিভিউ নিয়ে বাঁচার চেষ্টা করেছিলেন। তাতে লাভ কিছুই হয়নি। রানের খাতা খোলার আগে বিদায় নেন তিনিও।
১১ রানে ৩ উইকেট হারানো বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের হাল ধরেছিলেন ওপেনার সৌম্য সরকার এবং সাকিব আল হাসান। লঙ্কান বোলারদের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে এ দু’জন উইকেট ধরে রাখার পাশাপাশি চেষ্টা করছেন রানের চাকাও সচল রাখার। ৭৭ রানের জুটি গড়েন এ দুই ব্যাটসম্যান। তবে ১৬তম ওভারে বরাবরের মতই ভুলটা করে বসলেন সৌম্য সরকার। ভালো খেলতে খেলতে খেই হারিয়ে ফেললেন যেন তিনি। দিলরুয়ান পেরেরার অফস্ট্যাম্পের বাইরে করা ডেলিভারিটি এগিয়ে গিয়ে খেলতে যান সৌম্য। বল ব্যাটকে ফাঁকি দিয়ে চলে যায় উইকেটরক্ষকের গ্লাভসে। ফলে স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে পরে সাজঘরে ফেরেন এ ড্যাসিং ওপেনার। আউট হওয়ার আগে ৪৪ বলে ৩৮ রান করেন সৌম্য।
সৌম্যর বিদায়ের পর মোসাদ্দেককে নিয়ে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন সাকিব। ২৩ রান জুটি গড়ার পর বোল্ড হয়ে যান মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। এর দুই ওভার পর ফিরে যান সাকিবও। দারুণ এক হাফ সেঞ্চুরি করার পর দিলরুয়ান পেরেরার বলে গুনাথিলাকার হাতে সহজ ক্যাচ দেন এ অলরাউন্ডার। ৫৪ রানের ইনিংসি শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের জয়ের স্বপ্নও কঠিন করে দেন সাকিব। এরপর দলের শেষ ভরসা মাহমুদউল্লাহও হতাশ করেন। লেগ স্ট্যাম্পের বাইরে থাকা লাকমলের বাউন্সার খেলতে গিয়ে উইকেটরক্ষক চান্দিমালের হাতে ধরা পড়েন। ফলে কার্যত শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের আশা। তবে লড়াই চালিয়ে যান ক্যারিয়ারের তৃতীয় ওয়ানডে খেলা মেহেদী হাসান মিরাজ। অধিনায়ক মাশরাফির সঙ্গে ২৮ রানের জুটি গড়েন তিনি। প্রসন্ন বলে তার হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে আসেন অধিনায়ক।
এরপর নবম উইকেটে তাসকিন আহেমদকে নিয়ে দারুণ এক জুটি গড়েন মিরাজ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নবম উইকেটে ৫৪ রানের রেকর্ড জুটি গড়েন এ দুই ব্যাটসম্যান। তবে হাফসেঞ্চুরি করার পরই আউট হয়ে যান মিরাজ। কুলাসেকেরার বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে থারাঙ্গার হাতে ধরা পড়েন তিনি। আউট হওয়ার আগে খেলেন ৫১ রানের ইনিংস। ৭১ বলে ৬টি চারের সাহায্যে এ রান করেন তিনি। এর এক বল পর আউট হয়ে যান তাসকিনও। ফলে ২১০ রানেই অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ দল।
এর আগে শনিবার সকালে টস হেরে প্রথমে ব্যাটিং করতে নামে শ্রীলঙ্কা। অধিনায়ক উপুল থারাঙ্গা ও দানুশকা গুনাথিলাকারার দারুণ ব্যাটিং ৭৬ রানের জুটি গড়ে বড় স্কোরের ইঙ্গিত দেয় দলটি। ভয়ংকর হয়ে ওঠা এ জুটি ভাঙেন মেহেদী হাসান মিরাজ। মাহমুদউল্লাহর তালুবন্দি হয়ে সাজঘরে ফেরেন গুনাথিলাকারা। এরপর বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি থারাঙ্গাও। তাসকিনের বলে বোল্ড হন তিনি।
এরপর চান্দিমালকে নিয়ে দলের হাল ধরেন আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান কুশল মেন্ডিস। ৪৯ রানে জুটি গড়েছিলেন তারা। তবে চান্দিমালের নিজের ভুলে রানআউট হলে ম্যাচে ফিরে আসে বাংলাদেশ। এরপর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট তুলে নেয় টাইগাররা।
তবে ম্যাচের শেষ দিকে ভয় ধরিয়ে দিয়েছেন থিসারা পেরেরা। অষ্টম উইকেটে দিলরুয়ান পেরেরাকে নিয়ে ঝড়ো ব্যাটিং করতে থাকেন থিসারা। ৪৫ রানের দারুণ এক জুটি গড়লে ২৮০ রানের সংগ্রহ পায় স্বাগতিক শিবির। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫৪ রানের ইনিংস খেলেন কুশল মেন্ডিস। ৭৬ বলে এ রান করেন এই তরুণ। এছাড়া শেষ দিকে ঝড় তুলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন থিসারা পেরেরাও। ৪০ বলে ৫২ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। ৪টি চার ও ১টি ছক্কার সাহায্যে নিজের ইনিংস সাজান তিনি। এছাড়া থারাঙ্গা ৩৫ রান এবং গুনাথিলাকা ও গুনারাত্নে ৩৪ রান করে করেন। বাংলাদেশের পক্ষে ৬৫ রানের বিনিময়ে ৩টি উইকেট পান মাশরাফি। ৫৫ রানের বিনিময়ে ৫৫ রানের ২টি উইকেট নেন মোস্তাফিজুর রহমান। এছাড়া মিরাজ ও তাসকিন ১টি করে উইকেট নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ
বাংলাদেশঃ (তামিম ৪, সৌম্য ৩৮, সাব্বির ০, মুশফিক ০, সাকিব ৫৪, মোসাদ্দেক ৯, মাহমুদউল্লাহ ৭, মিরাজ ৫১, মাশরাফি ১৬, তাসকিন ১৪, মোস্তাফিজ ১*; কুলাসেকারা ৪/৩৭, লাকমল ২/৩৮, থিসারা ০/১৪, দিলরুয়ান ২/৪৭, গুনারাত্নে ০/১৬, প্রসন্ন ২/৩৩, সিরিবর্ধনা ০/২৩)
শ্রীলঙ্কা: ৫০ ওভারে ২৮০/৯ (গুনাথিলাকা ৩৪, থারাঙ্গা ৩৫, মেন্ডিস ৫৪, চান্দিমাল ২১, সিরিবর্ধনা ১২, গুনারত্নে ৩৪, থিসারা ৫২, প্রসন্ন ১, দিলরুয়ান ১৫, কুলাসেকারা ১*, লাকমল ২*; মাশরাফি ৩/৬৫, মুস্তাফিজ ২/৫৫, মিরাজ ১/৪৯, তাসকিন ১/৫০, মাহমুদউল্লাহ ০/৫, সাকিব ০/৪১, মোসাদ্দেক ০/১৩)