ইমরান ইবনে আরজ-এর ৩টি কবিতা
সুখে থেকো ভোজনকারী-
———————————-
–ইমরান ইবনে আরজ-
কোনো একদিন সুগন্ধিকারক চিকন বাসমতী চালের মুখরোচক বিরিয়ানি এবং দোপিঁয়াজি মাছেরডিম, কালো ভুনা গোস্তের মত
সুস্বাদযুক্ত খাবার হয়ে ছিলাম তোমার কাছে…
তুমি ইচ্ছেমত আমায় চেটেপুটে খেয়ে তৃপ্তিকর স্বস্তির ঢেঁকুর তুলে যারপরনাই খুশি হয়ে, প্রাণখোলা প্রশংসায় পঞ্চমুখ হতে
অহর্নিশ এই আমাকে নিয়ে…
কতরকমভাবে প্রচারণা চালাতে তোমার আশেপাশের সকল বন্ধু মহলে তার হিসেব নেই…
আজকাল তোমার কাছে নাকি নানারকম মনোলোভা ফাস্টফুড আর চাইনিজের আহার্য পছন্দসই হয়ে উঠেছে?
আমি নাকি এখন স্বাদহীন অখাদ্য হয়ে গেছি? তোমার নাকি প্রায়শই পেটফাঁপা হয় আমাকে আহার করলে?
আমি যখন অখাদ্য অরুচিকর, অপুষ্টিকর এক খাবারের আতঙ্ক হয়ে গেছি তোমার কাছে ;
তখন অযথা অনীহা করে তুমি আমার কাছে কেন আসবে হে ভোজনকারী?
তোমাকে আমি প্রাণভরে আশীর্বাদ করছি
তুমি নতুন আইটেমের খাবার খেয়ে
পরিতৃপ্ত হও প্রতিনিয়ত!
আর আমাকে ডাস্টবিনে নিক্ষিপ্ত করে
সুখে থেকো তুমি অনেক সুখে ।
—– কুয়েত, ২৮/০৪/২০১৮
অন্তিমসময়ের আত্মপীড়ন-
———————————–
চরমরূপ অযত্ন আর নিরেট অবহেলায়
মুখগহ্বরের দাঁতগুলো হারিয়ে-
আজ আমার সম্মানে সামনে সাজান
লোভাতুরা মুখরোচক খাদ্যের পসরা অবলোকনে
বুঝতে পারছি, ওই কর্মকাণ্ড গুলো-
আমার জন্য কতটা নির্বুদ্ধিতাপনা ছিলো…
যৌবনের সম্ভাবনাময় সোনালি দিনগুলো খামখেয়ালিপনা মনোভাবে অবমূল্যায়নে,
এখন এ বয়োবৃদ্ধ পর্যায় এসে উপলব্ধি করছি,
ওই কর্মকাণ্ড কত মস্ত বড় বোকামি ছিল…
ভাগ্যগুণে অঢেল সম্পত্তি দু’হাতের নাগালে পেয়েও -তার অপব্যবহারে এক ফুঁৎকারে!
অপাত্রে নষ্ট করে, আজ প্রায় রিক্তহস্ত হয়ে উপলব্ধি করছি, ওই কর্মকাণ্ড —
আমার জন্য কতটা আহাম্মকপনা ছিলো…
শতভাগ প্রাণপণ উজাড় করা অম্লমধুর ভালোবাসার ছোঁয়া দিয়ে, যে প্রিয়তমা
আমায় তার বাহুডোরে বাধঁতে চেয়েছিলো-
তাকে নর্দমার কীটপতঙ্গ ভেবে, সামান্য অপরাধে তুচ্ছতাচ্ছিল্যে নির্বাসিতা করে, আজ এ ভবঘুরে
একাকীত্ব জীবনে পদে পদে টের পাচ্ছি!
ওই উন্মাদী সিদ্ধান্ত আমার জন্য
কত মস্ত বড় সর্বনাশা ছিলো…
এ পোড়া অপরিণামদর্শী আহাম্মকী জীবনের কৃত কর্মকাণ্ডের শাপমোচন হয়তো, এ জনমে হবে না।
তবুও জীবনের এ শেষ সায়াহ্নে এসে
একটাই মিনতি রাখছি–
ভবিষ্যৎকালে কেউ যেন, আমার মত
এরকমভাবে আহাম্মকী দুষ্টুচক্র কর্মকাণ্ডের পাতানো মরণদশা ফাঁদে জড়িয়ে না যায় ।
—-কুয়েত, ২৪/০৩/২০১৮
আয়েশ আলীর খায়েশ-
———————————
এক আকাশের সব তারকারাজি এনে
আয়েশ আলীর দু’চোখের স্বপ্নে বসিয়ে দে,
বিশ্ব মোড়লের মুকুটখানি
তার মাথাতে পড়িয়ে দে…
আরব সাগরের সব পানি এনে
তার তৃষ্ণা নিবারণ করিয়ে দে,
আফ্রিকার সব সোনার খনির
মালিক তারে বানিয়ে দে…
সুইস ব্যাংকের সব অর্থ এনে
তার দু’হাতে তুলে দে,
তামাম দুনিয়ার খাদ্যাদি সব
তার খাদক পেটে ঢুকিয়ে দে…
এতসব পেয়েও খায়েশ না পুরিলে
তারে সুন্দরবনের বাঘের সামনে ছেড়ে দে..!
—–কুয়েত, ০৭/০৩/২০১৮