বার্তা ডেস্ক :: শরীয়তপুরের সাথী আক্তার বাণীর (২২) সঙ্গে বছরখানেক আগে মোবাইল ফোনে পরিচয় হয় রাজশাহীর তরুণ সোহাগ হোসেনের (২৬)। এরপর বন্ধুত্ব, সাক্ষাৎ থেকে সম্পর্ক গড়ায় প্রেমে। একপর্যায়ে বিষয়টি পরিবারকে জানালে মেয়েকে ওই যুবকের সঙ্গে বিয়ে দিতে রাজি হন অভিভাবকরা। সে অনুযায়ী গত ৩ জানুয়ারি বিয়ের দিন ঠিক করা হয়েছিল। কিন্তু সোহাগ কিংবা তার পরিবারের কেউই সেদিন মেয়ের বাড়িতে আসেনি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার জাজিরা উপজেলার পাচুখারকান্দি গ্রামের দরিদ্র ভাঙারি ব্যবসায়ী মালেক চৌকিদারের মেয়ে সাথী আক্তার। বছরখানেক আগে মোবাইল অ্যাপস ইমোর মাধ্যমে ওই যুবকের সঙ্গে পরিচয়ের সূত্রে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে তার। নিজেকে পুলিশ সদস্য পরিচয় দিয়ে সোহাগ জানান, তার বাড়ি রাজশাহী শহরে। পুলিশ সদস্য হিসেবে কর্মরত আছেন শরীয়তপুরের নড়িয়া থানায়।
প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে সোহাগ বিয়ের প্রস্তাব দিলে ওই তরুণী বিষয়টি অভিভাবকদের জানান। পরে তার অভিভাবকরা সোহাগ ও তার চাচা পরিচয়ে এক ব্যক্তির সঙ্গে মোবাইল ফোনে আলাপ-আলোচনার পর বিয়েতে মত দেন। গত ৩ জানুয়ারি বিয়ের দিন ঠিক করা হয়। অনুষ্ঠানে ৪০ জন বরযাত্রীর আসার কথা। এরই মধ্যে একদিন সোহাগ জানান, আইডি কার্ড হারিয়ে যাওয়ায় তিনি বেতনের টাকা তুলতে পারছেন না। তাই বিয়ের খরচের জন্য মেয়েটির পরিবারের কাছে এক লাখ টাকা দাবি করেন তিনি। জানান, বিয়ের আগে দাবিকৃত টাকা না পেলে বিয়ে করা সম্ভব না।
এসব কথার পরিপ্রেক্ষিতে মেয়েটির বাবা চার শতাংশ জমি বিক্রি করেন এবং আরও এক লাখ টাকা ঋণ করেন। বিয়ের এক সপ্তাহ আগে তারা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ওই যুবককে ৭০ হাজার টাকা পাঠান। বিয়ের আগের রাত পর্যন্ত সাথী ও তার পরিবারের সঙ্গে সোহাগের ফোনে যোগাযোগ ছিলো। ৩ জানুয়ারি সকাল থেকে বাড়িতে বিয়ের আয়োজন চলতে থাকে এবং যথারীতি অতিথিরাও আসতে থাকেন। এরইমধ্যে বরযাত্রী কতদূর, তা জানার জন্য বাণীর পরিবার সোহাগের মোবাইল ফোনে কল করলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এরপর তার দেয়া একাধিক নম্বরে বার বার কল করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এ ঘটনায় সাথীর বাড়ির সবাই চিন্তিত হয়ে পড়েন। শুরু হয় নানা গুঞ্জন। থেমে যায় বিয়ের আয়োজন ও কোলাহল। দিশেহারা হয়ে পড়ে মেয়েটির পরিবার। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী তরুণী বলেন, ‘আমার পরিবার গরিব তাই বেশি পড়ালেখার সুযোগ হয়নি। ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি। সোহাগের সঙ্গে প্রথম পরিচয় ইমো গ্রুপের মাধ্যমে। তারপর মোবাইল ফোনে কথা হতো, পরে আমার সঙ্গে সম্পর্ক হয়। ও আমাকে বলেছে, ওর বাড়ি রাজশাহী শহরে এবং সে নাকি নড়িয়া থানায় পুলিশে চাকরি করে। নড়িয়াতে আমি তার সঙ্গে দুইবার দেখা করেছি। সে আমাকে বিয়ে করবে বলেছিল। তাকে বিশ্বাস করে আমার পরিবার ৭০ হাজার টাকা পাঠিয়েছে এবং বিয়ের আয়োজন করে। কিন্তু সে আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। আমাদের সর্বনাশ হয়ে গেছে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।’
তিনি বলেন, ‘আমার মোবাইলে সোহাগের একটি ছবি আছে। ছবিতে তিনি সিকিউরিটি গার্ডের ইউনিফর্ম পড়ে আছেন। তিনটি মোবাইল নম্বরে তার সঙ্গে আমার কথা হতো।’ বাণীর বাবা মালেক চৌকিদার বলেন, ‘ওই যুবকের সঠিক পরিচয়ও কেউ জানেন না। আমি গরিব মানুষ। লেখাপড়া জানি না। সহায়-সম্পত্তি তেমন কিছুই নাই। দিন আনি, দিন খাই। চার ছেলে-মেয়ের মধ্যে বাণীই সবার বড়। দুই কড়া জমি ছিলো, তাও মেয়ের বিয়ের জন্য বিক্রি করে দিছি। টাকা-পয়সা খুইয়ে শেষ পর্যন্ত মেয়ের বিয়ে দিতে পারলাম না। আমাদের মানসম্মান সব গেছে। এখন আমার মেয়ের কী হবে?’
এ ব্যপারে জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজহারুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘এ বিষয়ে ভুক্তভোগী পরিবার এখনও কোনো অভিযোগ নিয়ে আসেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ যোগাযোগ করা হলে নড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘ওই ঘটনার বিষয় আমার জানা নেই। নড়িয়া থানায় গত তিন বছরে সোহাগ নামের কোন পুলিশ সদস্য ছিল না। এখনও নাই।’ জাজিরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ আশ্রাফুজ্জামান ভূইয়া বলেন, ‘ভুক্তভোগী পরিবার যদি লিখিত অভিযোগ করে, তাহলে মোবাইল ট্র্যাকিং করে ওই যুবকের তথ্য জানা যেতে পারে। এটা একটা দুঃখজনক ঘটনা।’ জাগো নিউজ
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
৫৫ বার