ইসরাইলি বর্বরতার নিন্দায় জাতিসংঘ ও মুসলিম
অধিকৃত জেরুজালেমের আল আকসা মসজিদে ইসরাইলের আগ্রাসী তৎপরতার নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ ও মুসলিম বিশ্ব। ওই মসজিদের প্রধান প্রবেশদ্বারে ইলেকট্রুনিক গেট এবং নিরাপত্তা ক্যামেরা বসায় ইসরাইল। এছাড়া শুক্রবার সেখানে নামাজের জন্য ৫০ বা তদূর্ধ্ব বয়সী পুরুষদের প্রবেশে বাধা দেয় ইসরাইলি সেনাবাহিনী। এতে প্রতিবাদে ক্ষোভে ফেটে পড়েন ফিলিস্তিনিরা। দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে শুক্রবার ইসরাইলি পুলিশের গুলিতে ৩ ফিলিস্তিনি নিহত ও ২ শতাধিক আহত হন। এ ঘটনায় ইসরাইলের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। শনিবার অধিকৃত পশ্চিম তীরে এক ফিলিস্তিনি যুবকের ছুরিকাঘাতে তিন ইসরাইলি নিহত হয়েছে। ফলে সেখানে আরও সেনা পাঠিয়েছে ইসরাইল। খবর বিবিসি ও আল জাজিরার। গত ১৪ জুলাই সন্দেহভাজন ফিলিস্তিনি বন্দুকধারীদের গুলিতে ইসরাইলের দুই পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আল আকসা মসজিদের প্রধান ফটকে ইলেকট্রুনিক গেট এবং নিরাপত্তা ক্যামেরা বসায় ইসরাইল। প্রতিবাদে ক্ষোভে ফেটে পড়েন ফিলিস্তিনিরা। শুক্রবার ইসরাইলি পুলিশ এ মসজিদে ৫০ বছরের কম বয়সী ব্যক্তিদের প্রবেশে বাধা দিলে বিক্ষোভ আরও তীব্র হয়ে ওঠে। এর মাধ্যমে মসজিদটিকে কার্যত একটি সেনা ঘাঁটিতে পরিণত করেছে বলে অভিযোগ ফিলিস্তিনিদের। ইসরাইলি সেনারা ফিলিস্তিনি মুসলিমদের এ মসজিদে নামাজ আদায় করতে দিতে চায় না।
অন্যদিকে ফিলিস্তিনিরা যে কোনো মূল্যে তাদের প্রথম কেবলার এই মসজিদে নামাজ আদায় করতে বদ্ধপরিকর। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জুনের গোড়ার দিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তেল আবিব সফরে গিয়ে ইসরাইলি সরকারের প্রতি যে নিঃশর্ত সমর্থন ঘোষণা করেছেন, তার ফলে দখলদার সরকারের ঔদ্ধত্য অনেক বেড়ে গেছে। ইসরাইলের শুক্রবারের বর্বরোচিত কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস। তিন ফিলিস্তিনি হত্যার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। শনিবার এক বিবৃতিতে এ ঘটনার তদন্তের আহ্বান জানিয়ে গুতেরেস বলেন, এমন হত্যাকাণ্ড খুবই নিন্দনীয়। শিগগিরই এর তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। বিদ্যমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতি যেন আরও উত্তপ্ত হয়ে না ওঠে, সেজন্য উভয়পক্ষের নেতাদের সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব। কারণ ধর্মীয় স্থাপনা সহিংসতার জায়গা নয়। জাতিসংঘের ডেপুটি মুখপাত্র ফারহান হক বলেন, জাতিসংঘ মনে করে, এখানে নিরাপত্তার বিষয়ে বৈধ উদ্বেগ রয়েছে। তবে একই সঙ্গে এখানকার স্থিতাবস্থা বজায় রাখাটাও গুরুত্বপূর্ণ।
ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে এ ধরনের আগ্রাসী সংঘাতের জন্য ইসরাইলের নিন্দা জানিয়েছে আরব লীগ। সংস্থাটির প্রধান আহমেদ আবদুল ঘেইত বলেন, ফিলিস্তিনি মুসলিমদের বিরুদ্ধে ইসরাইলি বাহিনীর অতিরিক্তি নিরাপত্তা বাহিনী ব্যবহার এবং বেসামরিক লোকদের ওপর গুলি চালিয়ে হত্যার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। চলমান উত্তেজনায় ফিলিস্তিনসহ আরব ও মুসলিম দেশের জনগণের পক্ষ থেকে ইসরাইলের বিরুদ্ধে নতুন পদক্ষেপ গ্রহণের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। মিসরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ সংঘাত বন্ধে ইসরাইলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
ইসরাইলের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ ঘোষণা ফিলিস্তিনের : ইসরাইলের সঙ্গে রাজনৈতিকসহ কোনো ধরনের যোগাযোগ করা হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। শুক্রবার টেলিভিশনে দেয়া এক সংক্ষিপ্ত ভাষণে আব্বাস এ ঘোষণা দেন। আল আকসা মসজিদে নিরাপত্তায় কড়াকড়ির আরোপের পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার দিনভর ইসরাইলের নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের সংঘর্ষে তিন ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার পর আব্বাস এ ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ‘আল আকসা মসজিদে নেয়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাতিল না করা হলে এবং স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে না আনা পর্যন্ত আমি ইসরাইলের সঙ্গে সর্বস্তরের যোগাযোগ বন্ধের ঘোষণা দিচ্ছি।’
ছুরিকাঘাতে ৩ ইসরাইলি নিহত : পশ্চিম তীরে এক ফিলিস্তিনি যুবকের ছুরিকাঘাতে তিন ইসরাইলি নিহতের খবর দিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। শুক্রবার রামাল্লায় ইহুদি বসতির কাছে হওয়া এ ঘটনায় আরও এক ইসরাইলি আহত হয়েছে। ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানায়, হামলাকারী হালামিশ এলাকার একটি বাড়িতে ঢুকে ইসরাইলিদের ছুরিকাঘাত করে। হামলাকারী যুবকের নাম ওমর আল আবেদ। তাকে গুলি করে আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ইসরাইলি গণমাধ্যম তার সর্বশেষ অবস্থা নিশ্চিত করতে পারেনি। নিহতদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। বিবিসি জানায়, আহতরা হলেন ৬০ বছর বয়সী এক পুরুষ এবং তার ছেলে ও এক মেয়ে। আহত ৬০ বছরের আরেক ইসরাইলি নারীকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় পশ্চিম তীরে আরও সেনা পাঠিয়েছে ইসরাইল। ইসরাইলের সামরিক বাহিনী শনিবার বাড়তি সেনা পাঠানোর এ ঘোষণা দিয়েছে। ঘোষণায় বলা হয়, ছুরিকাঘাতে হত্যাকাণ্ড ঘটানোর পর পশ্চিম তীরে সেনা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে এ নিয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি ইসরাইলি সেনাবাহিনী।