ঈদের আগে মুক্তি পাচ্ছেন না খালেদা জিয়া
এ প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের আইনজীবীরা মনে করছেন, আইন প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়ার জামিন সম্ভব নয়। সরকারের সদিচ্ছা না থাকলে তার মুক্তির বিষয়টি দীর্ঘায়িত হবে। আবার উচ্চ আদালত যদি ‘জুডিশিয়াল মাইন্ডে’ দেখেন তাহলে দ্রুতই খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুবু হোসেন বলেন, খালেদা জিয়া আইনি প্রক্রিয়ায় জামিন পাবেন এটা অবাস্তব কথা। যে পর্যন্ত না সরকারের সদিচ্ছা হবে ততক্ষণ তাকে জেলেই কাটাতে হবে। তিনি বলেন, বর্তমান বিচার ব্যবস্থায় খালেদা জিয়ার মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। কারণ আমরা একটা মামলায় জামিন পেলে অন্য একটি মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে কারাবাস দীর্ঘায়িত করবে। দলের আরেক ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা অধিকাংশ মামলা আমরা জামিন করিয়েছি। জিয়া অরফানেজ ও চ্যারিটেবল মামলায় উচ্চ আদালত যদি জুডিশিয়াল মাইন্ডে বিচারটা দেখেন তাহলে খালেদা জিয়া খুব দ্রুতই জামিন পেতেন। তবে, খালেদা জিয়ার এক আইনজীবী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জিয়া চ্যারিটেবল মামলায় নথি তলবে হাইকোর্টের আদেশ এখনও নিম্ন আদালতে পৌঁছায়নি। সময় দিয়েছে দুই মাস। ঈদের আর বেশি বাকি নেই। সুতরাং কোনো মতেই ঈদের আগে নথি আসা সম্ভব দেখি না। ঈদের পর দেখা যাবে। এর চেয়ে বেশি কিছু বলা যাচ্ছে না।
গত ৩০ এপ্রিল জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাত বছরের সাজা ও অর্থদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার করা আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে তাকে ওই মামলায় বিচারিক আদালতে দেওয়া জরিমানার আদেশ স্থগিত করা হয়েছে। সম্পত্তি জব্দের আদেশে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে বলেছেন আদালত। একই সঙ্গে বিচারিক আদালতে থাকা ওই মামলার নথিপত্র দুই মাসের মধ্যে উচ্চ আদালতে পাঠাতে বলা হয়েছে। খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বলছেন, জিয়া চ্যারিটেবল মামলায় নথি তলব করে আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। নথি আসার পর জামিনের শুনানি হবে। সময় দেওয়া হয়েছে দুই মাস। এখন (১২ মে, দুপুর ২টা পর্যন্ত) নিম্ন আদালতে আদেশের কপি পৌঁছাইনি। এছাড়া জিয়া আরফানেজ ট্রাস্ট মামলার শুনানির জন্য খালেদা জিয়ার পক্ষে আবেদন দেয়া আছে। উচ্চ আদালত শুনানির জন্য দিন ঠিক করলে শুনানিতে অংশ নিবেন তার আইনজীবী। এদিকে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা দুইটি মানহানী মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা আছে। কিন্তু আদেশ তামিল প্রতিবেদনের রিপোর্ট আদালতে এখনও আসেনি। রিপোর্ট না আসলে খালেদা জিয়ার পক্ষে জামিনে আবেদন করতে পারছেন না তার আইনজীবীরা। অথবা জামিন আবেদন করতে পারলেও শুনানি করতে পারছেন না তারা।
বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, জিয়া চ্যারিটেবল মামলায় নথি তলব করে আদেশ নিম্ন আদালতে দেয়া হয়েছে। নথি আসার পর জামিনের শুনানি হবে। এছাড়া জিয়া আরফানেজ ট্রাস্ট মামলার শুনানির জন্য আবেদন দেয়া আছে। যথা সময় শুনানিতে অংশ নেব। মানহানি মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মানহানির দুটি মামলা নিম্ন আদালতেই জামিন যোগ্য। কবে নাগাদ মুক্তি পেতে পারেন এমন প্রশ্নের জবাবে খালেদা জিয়ার এই আইনজীবী বলেন, সরকার যদি বিচারকাজে হস্তক্ষেপ না করে, তাহলে খালেদা জিয়ার মুক্তি আসন্ন। আমরা গত বছরের ১২ মার্চের পর থেকেই মুক্তির জন্য অপেক্ষা করছি। খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার একেএম এহসানুর রহমান বলেন, আমরা আইনি প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছি। জিয়া চ্যারিটেবল মামলায় নথি তলব করা হয়েছে। উচ্চ আদালতে নথি পৌঁছালে তারপর শুনানি হবে। মানহানির দুই মামলার জামিন আবেদন শুনানির পর্যায় আসেনি বলেও জানান তিনি।দুর্নীতির এই দুটি মামলা ছাড়াও খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আরও ৩৪টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ১১টি মামলা নাশকতার। সেই সাথে রয়েছে মানহানি এবং রাষ্ট্রদ্রোহের বেশ কিছু মামলা। ১৫ আগস্টে তার জন্মদিনটি ভুয়া- এই অভিযোগেও একটি মামলা রয়েছে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে।
নাইকো মামলা
কানাডীয় প্রতিষ্ঠান নাইকোর সাথে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের চুক্তি করে রাষ্ট্রের প্রায় ১০,০০০ কোটি টাকা লোকসান করার এই মামলাটি হয় ২০০৮ সালে সেনা-সমর্থিত সরকারের সময়। মামলায় শেখ হাসিনাকেও আসামি করা হয়েছিল, কারণ এই চুক্তিটি প্রথম করা হয়েছিল ১৯৯৬ সালে যখন তিনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। পরে ২০০৯ সালে সরকার প্রতিষ্ঠা করার পর শেখ হাসিনা আদালতের মাধ্যমে এই মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়ে যান। তবে মামলাটি রয়ে যায় এবং আসামি হিসাবে থেকে যান খালেদা জিয়া। এ মামলায় আগামী ১৯ মে অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য দিন ঠিক রয়েছে।
গ্যাটকো মামলা
ঢাকার কমলাপুরে কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণের কাজ যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে গ্যাটকো নামে একটি কোম্পানিকে দেওয়ার অভিযোগে এই মামলাটিও হয় ২০০৭ পরবর্তী সেনা-সমর্থিত সরকারের সময়।
বড় পুকুরিয়া কয়লা খনি মামলা
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ২০০৮ সালে দায়ের করা এই মামলার অভিযোগ ছিল- চুক্তিবদ্ধ কোম্পানি শর্ত ভেঙে সরকারের চোখের সামনে অতিরিক্ত এলাকায় কয়লা খনন করে রাষ্ট্রের ক্ষতি করেছে, এবং খালেদা জিয়া রাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছেন। নাইকো, গ্যাটকো এবং বড়পুকুরিয়া দুর্নীতি মামলায় পুলিশ এখনও চার্জশিট দেয়নি। বিএনপি সবসময় অভিযোগ করে, এই সব দুর্নীতি মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং হয়রানিমূলক। আগামী ১৬ মে এ মামলার অভিযোগ গঠনের দিন ঠিক করছেন আদালত।