ঈদের আগে শতাধিক পোশাক কারখানায় অসন্তোষের আশঙ্কা
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দাখিল করা ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,বেতন বোনাসের দাবিতে রাজধানীর অদূরে আশুলিয়া, সাভার ও টঙ্গী এলাকার শতাধিক গার্মেন্টস কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষের আশঙ্কা করছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। আশঙ্কা করা হচ্ছে,এবারের ঈদেও রাজধানীর আশুলিয়া, টঙ্গী, নারায়নগঞ্জ ও চট্টগ্রামের শতাধিক তৈরি পোশাক কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের শ্রমিকদের বেতন ভাতা পরিশোধ করতে সমস্যায় পড়তে পারেন। এর ফলে শ্রমিকরা ঈদের আগেই বেতন বোনাসের দাবিতে আন্দোলন সংগ্রাম নামতে পারে। এর ফলে ওই এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। সম্প্রতি বাংলাদেশ শিল্প পুলিশ আরও একটি প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে। ওই প্রতিবেদনেই এ আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে বলে জানা গেছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, প্রতিবেদন পাওয়ার আগে থেকেই সংশ্লিষ্ট এলাকার পুলিশসহ কর্মরত গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের সতর্ক করা হয়েছে। শ্রমিকরা যাতে কোনও আন্দোলন সংগ্রাম না করতে পারে সে বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কারখানার মালিকদেরও এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। বিজিএমইএ সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়,কারখানা মালিকদেরকে আগামী জুন মাসে একসঙ্গে প্রায় তিন মাসের বেতন পরিশোধ করতে হবে। জুন মাসেই পরিশোধ করতে হবে মে মাসের বেতন। এর পর দিতে হবে ঈদের বোনাস। একই সঙ্গে জুন মাসের পুরোটা না হলেও আংশিক বেতন দিতে হতে পারে। এর ফলে মালিকদের ওপর এক ধরনের অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিবছরের মতো এবারও এই সময়ে সব কারখানায় কাজ কম থাকবে। তারপরেও যে কোনও ধরনের অসন্তোষ ঠেকাতে মালিকদের এই চাপ সামলাতে হবে বলে জানিয়েছেন তারা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাশিয়ায় অবস্থানরত বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান অবশ্য শ্রমিক অসন্তোষের সম্ভাবনা নাকচ করে দেন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, কোনও ধরনের শ্রমিক অসন্তোষের সম্ভাবনা নাই। তার পরেও আমাদের তৎপরতা রয়েছে। মালিকদেরকে বলেছি, আগে থেকেই যে কোনও ধরনের সংকট নিরসন করতে। তবে সবাইকে মনে রাখতে হবে যে দেশের সব গার্মেন্টস কারখানা বিজিএমইএ-র সদস্য নয়। তাই সব কারখানার দায়িত্ব বিজিএমইএ নিতে পারবে না। অপর এক প্রশ্নের জবাবে সিদ্দিকুর রহমান বলেন,‘ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জ, জিঞ্জিরাসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে দর্জির দোকানকেও এখন গার্মেন্টস বলে পরিচয় দেওয়া হয়। এধরনের এমন অনেক কারখানা আছে যারা বিজিএমইএ-র সদস্য নয়। সারাদেশের এসব কারখানা বা দর্জির দোকানের মালিকরা তাদের শ্রমিকদের কীভাবে ম্যানেজ করেন বা চালান সে সবের দায়িত্ব তো আর বিজিএমইএ নেবে না। নিতে পারবেও না। এ ছাড়া দেশের অধিকাংশ মানুষই এ সব পোশাক কারখানা কীভাবে চলে বা আমরা কীভাবে কারখানা চালাই তা জানেন না। জানতেও চান না। তারা না জেনেই এ শিল্প সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন। তারাই এ শিল্প সম্পর্কে বিভ্রান্তি ছড়ান।’
বাংলাদেশ রফতানিকারক সমিতির সভাপতি ও বিজিএমইএ-র সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, কিছু কারখানায় ছোটখাটো সমস্যা হয়তো থাকতে পারে। তবে যতো সদস্যাই থাকুক ঈদের আগে তা সমাধান করা হবে। আশা করছি এবছরও কোনও গার্মেন্টস কারখানায় বেতন বোনাসের দাবিতে শ্রমিক অসন্তোষ হবে না। এ বিষয়ে আশুলিয়া থানা পুলিশ কর্তৃপক্ষ বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছে, এলাকায় কোনও প্রকার শ্রমিক আন্দোলন নাই। গার্মেন্টস কারখানাগুলো তাদের শ্রমিকদের দেনাপাওনা কী মিটিয়েছে বা মিটায়নি তা পুলিশের জানার কথা নয়। আইন-শৃঙ্খলার বিষয়টি পুলিশের নজরে আছে। পুলিশ সার্বক্ষণিক বিষয়টি তদারকি করছে।