উত্তরখানের ময়নারটেক থেকে মা ও ছেলে-মেয়ের যে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে যেকোনো একজন অপর দুইজনকে হত্যার পর নিজে আত্মহত্যা করেছেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর এমন আশঙ্কাই প্রকাশ করেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ।বুধবার দুপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সোহেল মাহমুদ বলেন, ময়নাতদন্তের পর যে আলামত পেয়েছি, সেগুলো কনফার্ম করার জন্য ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক বোর্ড সিন অব ক্রাইম ভিজিট করেছি। সেখানে ভিজিট করে অনেক তথ্য পেয়েছি। তিনি বলেন, আমরা গিয়েই প্রথমে বাসার দরজা পরীক্ষা করি। বাসার দরজার ছিটকিনি ভেতর থেকে লক ছিল, পুলিশ আমাদের জানিয়েছে তারা শাবল দিয়ে দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। ঘটনাস্থল ঘুরে আমরা শাবল দিয়ে দরজা ভাঙার আলামত দেখতে পেয়েছি। এরপর বাসার ভেতরে ঢুকতেই মেঝেতে প্রচুর রক্তের দাগ দেখতে পাই, যার ওপরে কিছু মাছি মরে পড়ে ছিলো।

সোহেল মাহমুদ আরো বলেন, আমরা যখন ডায়নিং টেবিলের ওখানে যাই, টেবিলের ওপরে একটা কীটনাশক বিষের খালি কৌটা পাই। আর ঘুমের ট্যাবলেটের পাতা পাই, যেখানে ১০টি ট্যাবলেট থাকার কথা, কিন্তু মাত্র দুইটি ট্যাবলেট ছিল, আর আটটি নাই। মা-মেয়ে যে বিছানায় মারা গেছে আমরা ওই বিছানাতেও রক্ত দেখতে পাই। ফ্লোরে বমি পড়ে ছিল, সেগুলো সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য সিআইডিকে দেয়া হয়। ঢামেক ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান বলেন, সব কিছু মিলিয়ে আমাদের মাথায় অনেক প্রশ্নের সূত্রপাত হয়েছে। সেসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই আমরা থানায় গিয়ে পুলিশের জব্দ করা আলামতগুলো দেখি। একটা বটি আর দুইটা রক্তাক্ত ছুরি পুলিশ জব্দ করেছে। সেগুলো থেকে ব্লাড সংগ্রহ করে সিআইডির কাছে ডিএনএ স্যাম্পলিংয়ের জন্য পাঠাই। তাদের বলেছি ছুরিতে আঙুলের ছাপ ও রক্তের ডিএনএ স্যাম্পল পরীক্ষা করতে। ওই রিপোর্ট পাওয়ার পর আসলে বোঝা যাবে তাদের মৃত্যু সুইসাইডাল নাকি হোমোসাইডাল।

যেকোনো একজন অন্য দুইজনকে হত্যার পর নিজে আত্মহত্যা করেছেন এমন আশঙ্কার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আপাত দৃষ্টিতে সুইসাইডাল কেস মনে হচ্ছে। যদিও ছেলের গলার কাটা চিহ্নটা আত্মহত্যার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তবে দরজা ভেতর থেকে বন্ধ থাকা, বিষের বোতল পাওয়া সব মিলিয়ে আত্মহত্যাই মনে হচ্ছে। সোহেল মাহমুদ বলেন, কেমিক্যাল এনালাইসিস করার পরই জানা যাবে কে বিষ খেয়েছিল। রিপোর্টে যদি মায়ের শরীরে বিষের আলামত পাওয়া যায়, তাহলে বলা যাবে মা নিজে মেয়ে-ছেলেকে হত্যার পর আত্মহত্যা করেছেন। আর তা না পাওয়া গেলে তাহলে বলা যাবে, ছেলেই মা-বোনকে হত্যা করে এমনটা করেছেন।

প্রসঙ্গত, গত রোববার রাতে উত্তরখানের চাপানেরটেক এলাকার ৩৪/ডি নম্বর বাড়ি থেকে মুহিব হাসান (২৮), তার মা জাহানারা খাতুন মুক্তা (৪৭) ও ছোটবোন তাসফিয়া সুলতানা মিমের (২০) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তাদের মরদেহের পাশ থেকে দুইটি চিরকুটও উদ্ধার করা হয়। তবে তাদের মৃত্যু কি আত্মহত্যা না হত্যাকাণ্ড সেটা নিয়ে রহস্য দেখা দিয়েছে। নিহতদের ময়নাতদন্তের পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের ডা. সোহেল মাহমুদ গত সোমবার বলেন, ছেলে মুহিব হাসানের গলায় যে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে, সেটি দেখে মনে হয়েছে তাকে গলাকেটে হত্যা করা হয়েছে। আর মা জাহানারার গলায় ও পেটে ছুরিকাঘাতের হালকা দাগ রয়েছে। তবে তার মৃত্যু হয়েছে শ্বাসরোধে। মেয়ে তাসফিয়া সুলতানা মিমের গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। অন্যদিকে মরদেহের পাশে পুলিশ যে দুইটি চিরকুট পেয়েছে, তাতে নিহত মা ও সন্তানেরা নিজেদের মৃত্যুর জন্য আত্মীয়-স্বজন ও নিজেদের ভাগ্যকে দায়ী করেছেন। সেই সঙ্গে তাদের রেখে যাওয়া সম্পত্তি কোনো দাতব্য প্রতিষ্ঠানে দান করে দেওয়ার জন্যও অনুরোধ করেছেন।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn