উপাচার্যকে ‘উদ্ধারে’ আন্দোলনকারীদের পেটাল ছাত্রলীগ
ছাত্রী নিপীড়নে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাদের বহিষ্কারের দাবিসহ চার দফা দাবিতে প্রশাসনিক ভবনে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের পিটিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানকে ‘উদ্ধার’ করেছে ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা। মঙ্গলবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ৪০ জন আহত হন। ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থী’ ব্যানারে মঙ্গলবার দুপুরে উপাচার্যের কার্যালয় ঘেরাও করে একদল শিক্ষার্থী, যাদের মধ্যে সক্রিয় ছিলেন বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতারা। বিকালে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইনের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের ২০-২৫ জনের একটি দল উপাচার্যকে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত করতে যায়। সরকার সমর্থক সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা সময় রড-লাঠি নিয়ে চড়াও হন বিক্ষোভকারীদের উপর; উপাচার্য ভবন থেকে থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরও বিভিন্ন স্থানে কয়েক দফায় হামলা হয়। এই হামলায় ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী, বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি তুহিন কান্তি দাশ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি ইভা মজুমদার, বিশ্ববিদ্যালয় নেতা প্রগতি বর্মন তমা, ছাত্র ফেডারেশনের বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি উম্মে হাবিব বেনজীর, ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থী’র সমন্বয়ক মাসুদ আল মাহদীসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।
হামলার শিকার হন কয়েকজন সাংবাদিকও।
এই হামলা করানোর জন্য উপাচার্যকে দায়ী করে এর প্রতিবাদে বুধবার সারাদেশে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর মোর্চা প্রগতিশীল ছাত্র জোট। এদিকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বিক্ষোভরতদের উপর হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, অছাত্রদের কবল থেকে উপাচার্যকে উদ্ধারে গিয়েছিলেন তারাসহ সাধারণ ছাত্ররা। হামলা শেষে মধুর ক্যানটিনে ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ বলেন, ‘ছাত্রলীগ উপাচার্যকে উদ্ধার করতে ও মীমাংসা করতে সেখানে গিয়েছিল। উপাচার্যের সম্মান রক্ষার্থে ছাত্রলীগ তাদের সরিয়ে দিয়েছে।’ “ছাত্রদল এবং জামায়াত-শিবির এবং কিছু বাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে অবরুদ্ধ এবং তার উপর হামলা করেছে শুনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে সেখানে গিয়েছিল ছাত্রলীগ।” উপাচার্য ও প্রক্টর কার্যালয়ের ফটক ভাংচুরকারী শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারের দাবি জানান ছাত্রলীগ সভাপতি। ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসাইন বলেন, “বাইরে থেকে অছাত্র, সন্ত্রাসীদের নিয়ে এসে ক্যাম্পাসে শিক্ষার পরিবেশ অস্থিতিশীল করার জন্য উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করার খবর শুনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা উপাচার্যকে উদ্ধার করতে গিয়েছিল।”
সন্ধ্যায় হাসপাতালে ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি ও প্রগতিশীল ছাত্র জোটের সমন্বয়ক ইমরান হাবিব রুম্মন এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, “ছাত্রলীগ নির্মমভাবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালিয়েছে। এতে অর্ধশত জন আহত হয়েছে।” ইমরান বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক হিসেবে উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম আমরা। তিনি কথা না শুনে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের দিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালিয়েছেন।”দিনের ঘটনার বর্ণনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কতিপয় সহিংস শিক্ষার্থী ও বহিরাগত যুবক রড, লোহার পাইপ, ইট, পাথর নিয়ে উপাচার্য ভবনের তিনটি ফটকের তালা ভেঙে উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে অশালীন বক্তব্য দিচ্ছিল। তাদের একটি প্রতিনিধি দলকে উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করতে বলা হলেও তারা শোনেনি। উপাচার্য বোর্ড অব অ্যাডভান্সড স্টাডিজ সভায় যাওয়ার জন্য বের হলে ‘উদ্ধত, উত্তেজিত ও উচ্ছৃঙ্খল আন্দোলনকারীরা’ তার পথ রোধ করে বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়। এতে বলা হয়, উপাচার্য তদন্ত সাপেক্ষে নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলেও আন্দোলনকারীরা তা প্রত্যাখ্যান করে অশালীন বক্তব্য দিতে থাকে। “এক পর্যায়ে উপাচার্যের প্রতি বলপ্রয়োগ ও আক্রমণ করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য ও শিক্ষার্থীরা মানব বলয় তৈরি করে উপাচার্য মহোদয়কে তার কার্যালয়ে ফিরিয়ে আনে।” রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ১৫ জানুয়ারি উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। সেখানে ছাত্রলীগ নেতারা ছাত্রদের হুমকি-ধমকি ও ছাত্রীদের ওপর নিপীড়ন করে আন্দোলন নস্যাৎ করে দেন। এর প্রতিবাদে নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীরা ১৭ জানুয়ারি প্রক্টর কার্যালয়ের ফটক ভেঙে প্রক্টরকে অবরুদ্ধ করেন। পরদিন অজ্ঞাতনামা ৫০-৬০ জনকে আসামি করে মামলা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এরপর থেকে টানা আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের অন্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে ছাত্র প্রতিনিধিসহ ছাত্রী নিপীড়নের ঘটনার তদন্ত করা, অভিযুক্ত ছাত্রলীগের নেতাদের বহিষ্কার করা ও প্রশাসনের করা মামলা তুলে নেওয়া।