উৎপল ফিরে না এলে কঠোর আন্দোলন
অনলাইন নিউজ পোর্টাল পূর্বপশ্চিম বিডি ডট নিউজের সিনিয়র রিপোর্টার উৎপল দাসের সন্ধান চেয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন সহকর্মীরা। এ সময় তাকে ফিরে পেতে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা। অন্যথায় প্রেসক্লাবের সামনে রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলনের ঘোষণাও দিয়েছেন তারা। মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ কর্মসূচিতে সর্বস্তরের সাংবাদিকরা অংশ নেন। এসময় সাংবাদিক নেতারা বলেন, আজকের মধ্যেই উৎপল দাসের সন্ধান দিতে হবে। নইলে আগামীকাল ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে থেকে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন, পূর্বপশ্চিম বিডি ডট নিউজের প্রধান সম্পাদক পীর হাবিবুর রহমান, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক মহাসচিব আবদুল জলিল ভূঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব পুলক ঘটক, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) একাংশের সভাপতি শাবান মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা, সাধারণ সম্পাদক মুরসালিন নোমানি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ, জাতীয় প্রেসক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক শাহেদ চৌধুরী ও ইলিয়াস খান, বৈশাখী টেলিভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, ঢাকা সাব এডিটর কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, সাংবাদিক উম্মুল ওয়ারা সুইটি, তাসকিনা ইয়াসমিনসহ অনেকে।
কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, এতদিন সাংবাদিকেরা অন্যদের নিখোঁজ হওয়ার সংবাদ লিখে আসছেন। এখন তারা নিজেরাই এর শিকার। সাংবাদিক সমাজ উৎপলকে অক্ষত অবস্থায় ফিরে পেতে চান। তারা উৎপলকে ফিরে পেতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
উৎপলকে অক্ষত অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে বুধবার বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) বিক্ষোভ সমাবেশ করবে। পূর্বপশ্চিম বিডি ডট নিউজের প্রধান সম্পাদক পীর হাবিবুর রহমান বলেন, উৎপলের বাবা মাকে কি জবাব দিবো তার ভাষা আমার জানা নেই। সে এমন কোন ধর্ণাঢ্য পরিবারের সন্তান নয় যে; কেউ তাকে অপহরণ করে তার কাছে মুক্তিপণ চাইবে। সে এমন কোন কাজ করেনি, যে সন্ত্রাসীরা তাকে তুলে নিয়ে যাবে। কিন্তু এতদিন ধরে তাকে কেন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।তিনি বলেন, আমি কাউকে দোষারোপ করতে চাই না। কারো দিকে সন্দেহের তীর ছুঁড়তে করতে চাই না। রাষ্ট্রের দায়িত্ব তাকে ফিরিয়ে দেওয়া। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কেনো উৎপলের সন্ধান দিতে পারছে না তা অামার বোধগম্য নয়। এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকেও কোন বক্তব্য দেয়া হচ্ছে না। উৎপলকে ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত সারা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শাবান মাহমুদ বলেন, উৎপল নিখোঁজ, কিন্তু প্রশাসন যখন ব্যর্থ হয় তথন সন্দেহের তীর অন্যদিকে চলে যায়। আমরা সন্দেহের মাঝে খাকতে চাই না। আমরা ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই উৎপলকে ফিরে পেতে চাই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তথমন্ত্র্রী ও প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী যদি সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ হন তাহলে অামরা বুঝব তারা আমাদের সহযোগিতা করছেন না।ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী বলেন, আশার কথা হলো উৎপল দাসের ফেসবুক থেকে ম্যাসেজ আসছে, তার ফোন থেকে কল আসছে। কিন্তু অাবার নিরাশার কথা হলো, পুলিশ, র্যাব, গোয়েন্দা সংস্থা ব্যর্থ। কিন্তু অামাদের দক্ষ বাহিনীর এ ব্যর্থতা কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না।তিনি সকল শক্তিকে চ্যালেঞ্জ করে বলেন, সাংবাদিক সমাজ চ্যালেঞ্জ ঘোষণা করছে। যতবড় শক্তি হোক আমাদেরকে রুখে দেওয়ার কোন শক্তি নেই।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা বলেন, উৎপলের জন্য আমাদেরকে মানববন্ধন করতে হবে এটা আমরা চাইনি। সকল সাংবাদিককে আহ্বান করবো, সাংবাদিক সমাজকে রাজপথে নামতে হবে। সাংবাদিক সমাজ রাজপথ ছাড়ার কারণে আজ সাংবাদিকদের উপর হামলা হচ্ছে, মামলা হচ্ছে। সাংবাদিকের গাড়িবহরে হামলা হচ্ছে, সাংবাদিক খুন হচ্ছে। সংবাদ পত্র বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সরকার যদি সংবাদ মাধ্যমকে স্বাধীন বলে তাহলে সকল সাংবাদিকদের স্বাধীনতা দিতে হবে, নিরাপত্তা দিতে হবে।
৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়ে তিনি বলেন, উৎপলকে আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ফিরিয়ে দিতে হবে। নইলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবো, রাজপথ বন্ধ রাখবো। এ জন্য অামরা সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত আছি।
বৈশাখী টেলিভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বলেন, উৎপলের জন্মদিনে তাকে ফিরে পেতে গতকালের কর্মসূচিতে সহকর্মীদের অশ্রুভেজা অবস্থান দেখেছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহনীর দায়িত্ব তাকে খুঁজে বের করা। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই, দ্রুততম সময়ে তাকে আমদের মাঝে ফিরিয়ে দিন।জাতীয় প্রেসক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক ইলিয়াস খান বলেন, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা হয়েছে। অনেক সাংবাদিক হামলা মামলার স্বীকার হচ্ছে। আজ উৎপল নিখোঁজ। কিন্তু তথ্যমন্ত্রী এ বিষয়ে কোন বক্তব্য দিচ্ছেন না। সাগর-রুনির হত্যাকারীদের বিচার চাই। উৎপলকে ফিরে পেতে চাই।জাতীয় প্রেসক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক শাহেদ চৌধুরী বলেন, উৎপলের সন্ধানের জন্য সরকারের সব মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। একজন সাংবাদিক হারিয়ে যাচ্ছে কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কোন বক্তব্য নেই। তথ্যমন্ত্রীর কোন বক্তব্য নেই, এর নিন্দা জানাচ্ছি। সাংবাদিক উৎপলের কোন খোঁজ না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
ঢাকা সাব এডিটর কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ বলেন, উৎপল কেন নিখোঁজ, কি কারণে নিখোঁজ জানি না। তবে উদ্বেগ উৎকন্ঠা বিরাজ করছে সাংবাদিক সমাজে। আমি এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছি।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ বলেন, উৎপলের মত তরুণ, সক্রিয় সাংবাদিক হারিয়ে যাওয়ায় তার সহকর্মীরা প্রেসক্লাবের সামনে এভাবে মানববন্ধন করবে এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা শুনেছি বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা নাকি অনেক দক্ষ। কিন্তু সাংবাদিক উৎপল দাসকে খুঁজে পেতে তাদের দক্ষতার কোন পরিচয় পায়নি। উৎপলকে খুঁজে দিতে পারলে আমরা বুঝবো আমাদের গোয়েন্দারা দক্ষ।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রচার সম্পাদক অাখতার হোসেন বলেন, বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ২৪ ঘন্টার মধ্যেই যে কোন অপরাধীকে খুঁজে বের করতে পারে। কিন্তু একজন সাংবাদিককে খুঁজে বের করতে পারে না। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয়।ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের জনকল্যাণ সম্পাদক উম্মুল ওয়ারা সুইটি বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাচ্ছি আমাদের উৎপলকে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করুন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাই তুহিন বলেন, আমাদের দাবি একটাই এতদিন উৎপলকে হারিয়ে আমাদের মাঝে যে কষ্ট, যে হাহাকার তাকে ফিরে পেয়ে একটু স্বস্তি পেতে চাই।
আওয়ামী লীগ বিটের সংবাদকর্মী উৎপল দাস গত ১০ অক্টোবর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন। তাকে খুঁজে পেতে পূর্বপশ্চিম বিডি ডট নিউজের সম্পাদক খুজিস্তা নূর-ই-নাহারিন মুন্নি ও তার পিতা চিত্তরঞ্জন দাস মতিঝিল থানায় পৃথক সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। পরে সংবাদ সম্মেলনে প্রিয় সন্তানকে খুঁজে পেতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিও অনুরোধ জানান তার পরিবারের সদস্যরা। পুলিশ ও র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা উৎপলের হদিস বের করতে চেষ্টা চালাচ্ছেন। উৎপলের বন্ধু ও সহকর্মীদের কাছে ফোন করে প্রায়ই কান্নাকাটি করেন উৎপলের বাবা চিত্তরঞ্জন দাস। কিন্তু কেউই কোনো হদিস দিতে পারছেন না।