উড়োজাহাজ লিজ নিয়ে মাসে ১০ কোটি টাকা ‘গচ্চা’, তথ্য চেয়েছে মন্ত্রণালয়
-ইজিপ্টএয়ারের কাছ থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনন্সের লিজ নেওয়া ২টি উড়োজাহাজ সংক্রান্ত সব তথ্য চেয়েছে বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়। মিশর থেকে আনা এ ২টি উড়োজাহাজের জন্য মাসে ১০ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, উড়োজাহাজ ২টি লিজে আনার চুক্তির শর্ত, লোকসানের কারণ, এর পেছনে কারও সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা, খতিয়ে দেখতে বিমানের কাছে সব তথ্য চাওয়া হয়েছে। জানা গেছে, দায়িত্ব নেওয়ার পর বেসামরিক বিমান পরিবহন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী গত ২০ জানুয়ারি প্রথমবারের মতো বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কার্যালয়ে যান। এ সময় তিনি লিজে আনা উড়োজাহাজের জন্য লোকসান হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বৈঠকে বিমান সচিব মহিবুল হক লিজে আনা উড়োজাহাজের চুক্তির শর্ত জানতে চান। তবে বৈঠকে সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেনি বিমান কর্তৃপক্ষ। সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার (২৪ জানুয়ারি) ফের বিমান কার্যালয়ে যান বিমান সচিব মহিবুল হক। বিমানের সেবার মান বৃদ্ধি, লোকসানসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন বিমান কর্মকর্তাদের সঙ্গে।
বিমান সূত্রে জানা গেছে, ইজিপ্টএয়ার থেকে ৫ বছরের জন্য ড্রাই লিজে দুটি ২টি বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর উড়োজাহাজ সংগ্রহ করে বিমান। ২০১৪ সালের মার্চে একটি উড়োজাহাজ (রেজিস্ট্রেশন নং এস ২-এএইসএল, কনস্ট্রাকশন নং ৩২৬৩০) বহরে যু্ক্ত হয়। অপর উড়োজাহাজটি (রেজিস্ট্রেশন নং এস২-এএইসকে, কনস্ট্রাকশন নং ৩২৬২৯) যুক্ত হয় একই বছর মে মাসে। চুক্তি অনুসারে উড়োজাহাজ ২টি যাত্রী পরিবহন করুক, না-করুক মাসে প্রতিটির জন্য ৫ লাখ ৮৫ হাজার ডলার (৪ কোটি ৭০ লাখ ১৬ হাজার টাকা) দিতে হবে। এ ছাড়া সব ধরনের রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বহন করতে হবে বিমান কর্তৃপক্ষকে। ৫ বছরের আগে চুক্তি বাতিল করা যাবে না। লিজের মেয়াদ শেষে উড়োজাহাজ দুটি আগের অবস্থায় (ভাড়া নেওয়ার সময় যে অবস্থায় ছিল) ফেরত দিতে হবে।
বিমান সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের বিমান বহরে যু্ক্ত হওয়ার এক বছর পরেই বোয়িং ৭৭৭-২০০ উড়োজাহাজটির (রেজিস্ট্রেশন নং এস২-এএইসএল, কনস্ট্রাকশন নং৩২৬৩০) একটি ইঞ্জিন বিকল হয়। পরবর্তীতে ইজিপ্টএয়ার থেকে প্রতি মাসে ৮ লাখ টাকায় (১০ হাজার ডলার) ভাড়ায় আনা ইঞ্জিন দিয়ে সচল করা হয় উড়োজাহাজটি। নষ্ট ইঞ্জিনটি মেরামতের জন্য পাঠানো হয় লন্ডনভিত্তিক ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সে। সেটি মেরামত করে ফেরত আনার আগেই ৩ বছরের মাথায় আবারও নষ্ট হয়। ফের ইজিপ্টএয়ার থেকে প্রতি মাসে ৮ লাখ টাকায় (১০ হাজার ডলার) ভাড়ায় আনা হয় আরেকটি ইঞ্জিন। বিকল ইঞ্জিনটি মেরামতের জন্য পাঠানো হয় ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের কাছে। বার বার ইঞ্জিন নষ্ট হওয়ায় বিপত্তির মধ্যে পড়ে বিমান। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ৫ বছর না হওয়ায় চুক্তিও বাতিল করা যাচ্ছে না। ফলে উড়োজাহাজ ২টি ব্যবহার না করেই ভাড়া দিতে হচ্ছে বিমান কর্তৃপক্ষকে। বিমান ২টি ফেরত দিতে হলে লিজ নেওয়ার সময় যে অবস্থায় ছিল, সে অবস্থায় ফেরত দিতে হবে। ফলে বিমানগুলো ব্যবহার না করেও মেরামত করতে বিপুল অর্থ ব্যয় করতে হবে। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, উড়োজাহাজ দুটি আনার ক্ষেত্রে বিমান কর্তৃপক্ষের গাফলতি আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখবে মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে বিমানের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় বিবেচনা না করে ব্যক্তিগত সুবিধায় লিজে আনা হয়েছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হবে। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে সমস্যার সমাধান না করে লোকসানের কারণও অনুসন্ধান করবে মন্ত্রণালয়। জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিমান ও সিএ) মো. মোকাব্বির হোসেন বলেন, ‘বিমানের সঙ্গে সেবার মান বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। লোকসানের কারণ খতিয়ে দেখতে বিভিন্ন তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে।’