চট্টগ্রাম জেলার কর্নেল হাট এলাকার নালা থেকে উদ্ধার হওয়া শিশু একুশকে শাকিলা আক্তার ও ডা. জাকিরুল ইসলাম দম্পতিকে শিশুটির জিম্মা দেন। বুধবার  বিকেলে চট্টগ্রাম প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ও শিশু বিষয়ক বিশেষ আদালতের বিচারক জান্নাতুল ফেরদৌস  ১৩ জন আবেদনকারীর শুনানি শেষে ঐ দম্পতির কাছে শিশুটিকে জিম্মায় দেন। শিশু একুশকে জিম্মায় পেয়ে দুই নয়নে খুশির অশ্রু ঝড়ছিল  এই নিঃ সন্তান দম্পতির।

জানা যায়, গত ২১ ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারে ফুল দিতে যাচ্ছিলো কয়েকজন যুবক।  হঠাৎ  রাস্তার পাশে নালায় দেখতে পান ফুটফুটে এক শিশু নড়াচড়া করছে। পুলিশকে খবর দিলে তারা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় তারা। হাসপাতালে নিয়ে আসা নগরীর আকবর শাহ থানার ওসি আলমগীর মাহমুদ শিশুটির নাম রাখেন একুশ। কিন্ত  মা-বাবার পরিচয় না থাকায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে শিশু একুশের দায়িত্ব দেয় আদালত। মা-বাবাহীন শিশুটি হাসপাতালের ৩২ নং ওয়ার্ডের ডাক্তার নার্স, আয়ার আদর যত্নে একটু একটু করে বেড়ে উঠছিল। তবে হাসপাতালে অধিক সময় থাকা শিশুটির স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হওয়ায়, শিশুটিকে অভিভাবকের জিম্মায় দেয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নেয় আদালত। এদিকে শিশুটিকে জিম্মায় পেতে গত মঙ্গলবার  ১৬ জন আবেদন কারীর ১৩ জনের আবেদনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। বাকী তিন জন অনুপস্থিত থাকায় তাদের আবেদন বাতিল করে আদালত। এই ১৩ জন আবদেনকারীর মধ্যে ভবিষ্যতে যাদের মা  হওয়ার সম্ভাবনা নেই,যারা সন্তান লালন পালনে সক্ষম এবং নিঃসন্তান দম্পতি এমন  অভিভাবকদের গুরুত্ব দেয়া হয়েছে বলে জানান রাষ্ট্রপক্ষের কৌসুলি ও অতিরিক্ত মহানগর পিপি অ্যাডভোকেট এম এ ফয়েজ।

তবে একুশের জিম্মার বিষয়ে আদালত চারটি শর্ত দিয়েছে। তা হলো- ৫ এপ্রিলের মধ্যে শিশুটির জন্য ১০ লাখ টাকার শিক্ষা বীমা করা, ভবিষ্যতে কখনও বাবা-মা এলে ডিএনএসহ পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে শিশুটিকে ফেরত দেওয়া, জিম্মায় পাওয়ার তিন মাস ও ছয় মাসের সময়ে একবার করে এবং এরপর থেকে প্রতি বছর জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে আদালতকে শিশুটির বিষয়ে অবহিত করা এবং শিশুটির স্বার্থের পরিপন্থি কোনো কিছু না করা।১৯ বছর ধরে  নিঃসন্তান শাকিলা আক্তার ও ডা. জাকিরুল ইসলাম দম্পতি শিশু একুশকে জিম্মায় পেয়ে খুশিতে  কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেন। বারবার চোখের জল মুচছিলেন শাকিলা দম্পতি। একুশকে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন এই দম্পতি।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn