রাশিদুল ইসলাম:খুলনা জুড়ে এখন একটি আলোচিত নাম দরবেশ। হঠাৎ করে তার ডাকে সাড়া দিয়ে খুলনায় আসেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তিনি তিন ঘণ্টার ঝটিকা সফরে হেলিকপ্টারে খুলনায় এলেন। দরবেশকে কেক কেটে খাইয়ে মিডিয়ার সামনে মেয়র প্রার্থী ঘোষণা করলেন। কিন্তু তার আসার আগের রাতে জাতীয় পার্টি খুলনা মহানগর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ নগরীর ৫ থানার অধিকাংশ ক্ষুব্ধ নেতাকর্মী দল ত্যাগ করেন। দলীয় প্রধানের অভিনব এই কেক কাটা অনুষ্ঠান বর্জন করেন মহানগর জাপা নেতাকর্মীরা। দরবেশ এসএম মুশফিকুর রহমানকে এরশাদ মেয়র প্রার্থী ঘোষণা দেয়ায় লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে খুলনা জাতীয় পার্টি। সিনিয়র নেতাদের হটিয়ে তিনি হয়েছেন খুলনা সিটির মেয়র প্রার্থী। দলের একসময়কার শীর্ষ নেতা, খুলনা মহানগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আবুল শেখ কাশেম হত্যা মামলার আসামি হয়েও দলে প্রবেশ করায় গণপদত্যাগ  করেছেন নেতাকর্মীরা। তার কারণে যারা দল ত্যাগ করেছেন তাদের আর দলে প্রবেশ করতে দেবেন না- এমন ঘোষণাও দিয়েছেন এসএম মুশফিকুর রহমান ওরফে দরবেশ। খুলনা সিটি করপোরেশন এলাকার ভোটার না হয়েও মেয়র প্রার্থী ঘোষণা দেয়ার রহস্য খুঁজছেন সবাই। সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালের ২৫শে এপ্রিল সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হন তৎকালীন মহানগর জাপার সাধারণ সম্পাদক শেখ আবুল কাশেম। ওইদিন নগরীর ব্যস্ততম পিকচার প্যালেস মোড় এলাকায় দিনদুপুরে শেখ আবুল কাশেমকে প্রকাশ্যে গুলি করা হয়। তখন নগরজুড়ে মানুষের মুখে মুখে শোনা যায় মুশফিকের গুলিতেই কাশেম নিহত হয়। সেই হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি হন এসএম মুশফিকুর রহমান। এরপর তিনি দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমান। দীর্ঘ সময় বিদেশে অবস্থান করায় খুলনার মানুষ প্রায়ই তাকে ভুলতে বসেছিলেন। আলোচিত দরবেশ মুশফিক একসময় ছিলেন খুলনা আর্ট কলেজের ছাত্র। ছাত্রদলের ব্যানারে নির্বাচিত হয়েছিলেন জিএস। বেশ কিছুদিন ভাস্কর্যশিল্পী হিসেবে ছিলেন পরিচিত। লম্বা চুল ঘাড়ে ব্যাগ নিয়ে যাযাবরের মতো চলাফেরা করতেন। কাশেম হত্যাকাণ্ডের পর রং তুলি ছেড়ে চলে যায় পর্দার অন্তরালে। আবার দুই দশক পরে লম্বা জুব্বা, মাথায় পাগড়ি, মুখে লম্বা দাড়ি রেখে দরবেশবেশে ভয়ঙ্কর এই সন্ত্রাসী ফিরে আসে জনসম্মুখে। মাঝে মাঝে তাকে দেখা যায় রমণীবেষ্টিত।
সর্বশেষ তিনি স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। যার ফেস্টুন ও প্যানা এখনো খুলনা মহানগরীর অলিগলিতে ঝুলছে। বিএনপির রাজনীতি করার কারণে ২০০৭ সালের উপনির্বাচনে বাগেরহাট-১ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান। তখনও খুব বেশি আলোচনায় আসতে পারেননি তিনি। জনশ্রুতি রয়েছে, সে সময় তিনি বাগেরহাট সদর আসনের সংসদ সদস্য এমএইচ সেলিম (সিলভার সেলিমের) ছত্রছায়ায় রাজনীতি করতেন। তখন কাশেম হত্যাকাণ্ডকে পুঁজি করে খুলনা-বাগেরহাটসহ দক্ষিণাঞ্চলজুড়ে চাঁদাবাজিতে তার নাম ছড়িয়ে পড়ে। এরপর তিনি আওয়ামী লীগের  বাগেরহাট অঞ্চলের একজন প্রভাবশালী সংসদ সদস্যের ছত্রছায়ায় চলে যান। গত ২৪শে জানুয়ারি তিনি ঢাকায় এরশাদের হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেন। আর তাতেই জাতীয় পার্টির খুলনার নেতাকর্মীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। এমনকি তারা  দল ত্যাগের কথাও জানিয়ে দেন হাইকমান্ডকে। তবে খুলনার নেতাকর্মীদের সকল চাপ ও মতামত উপেক্ষা করে পার্টির চেয়ারম্যান আলোচিত এই দরবেশকে দলে নেয়ায় নেতাকর্মীদের মাঝে দল-ত্যাগের হিড়িক পড়ে যায়। এদিকে মুশফিকুর রহমান জাতীয়তাবাদীর রাজনীতি ছেড়ে ক্ষমতাসীন দলের ওই শীর্ষ নেতার ছত্রছায়া ত্যাগ করে জাতীয় পার্টিতে যোগ দিলেন এবং খুলনার মেয়র প্রার্থী হলেন- সেই রহস্য থেকে গেছে অনুদঘাটিত।
সর্বশেষ বিস্ফোরণটি ঘটে ১৪ই মার্চ। এদিন পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ খুলনায় আসেন। তার আসার উদ্দেশ্য ছিল মুশফিকুর রহমানকে খুলনা সিটি মেয়র প্রার্থী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়া। তবে এসএম মুশফিকুর রহমান জানান, তিনি কখনো কারো ছত্রছায়ায় ছিলেন না। তার কাছে জাতীয় পার্টির রাজনীতি ভালো লেগেছে তাই তিনি যোগ দিয়েছেন। শেখ পরিবারের সবার সঙ্গেই তার রয়েছে সখ্য। ফলে ছত্রছায়ায় থাকার প্রশ্নই আসে না। তিনি আরো বলেন, যারা দল ত্যাগ করেছে তাদের আর ফিরিয়ে আনা হবে না। কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এদের মধ্যে উৎপাদনশীলতা বলতে কিছু নেই। নতুন নেতৃত্ব এলে দল চাঙ্গা হয়। জনবল বৃদ্ধি হয়। কাশেম হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মামলাটি এখনো বিচারাধীন। আসামি হলেই কেউ দোষী হয় না।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn