সিলেটের আলোচিত-সমালোচিত ব্যবসায়ী রাগীব আলীর বিরুদ্ধে আরেকটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। ঢাকার মূখ্য মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক মো. শাহিনুর রহমান এ পরোয়ানা জারি করেন। চেক ডিজঅনারের একটি মামলায় গত গত রোববার (১৭ জানুয়ারি) এ পরোয়ানা জারি করেন বলে জানান মামলার বাদিপক্ষের আইনজীবী মো. গোলাম রব্বানী। মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) এই পরোয়ানা সিলেটের পুলিশ সুপার বরাবরে পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি। ২০ লাখ টাকার চেক দিয়ে প্রতারণার অভিযোগে গত বছরের ৬ ডিসেম্বর ঢাকা মূখ্য মহানগর হাকিম আদালতে এ মামলা দায়ের করেন জাফর সাদিক।মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, আলী ফারকাদ ট্রেড নামে জাফর সাদিকের মালিকানাধীন একটি প্রতিষ্ঠানকে ২০ লাখ টাকার চেক প্রদান করেন রাগীব আলী।
কিন্তু চেকের সাক্ষরে অমিল থাকায় ব্যাংক তা ফিরিয়ে দেয়। এ ব্যাপারে ফারকাদ ট্রেডের পক্ষ থেকে রাগীব আলীকে উকিল নোটিশ পাঠানো হলে তিনি কোনো উত্তর দেননি। এরপর গত ৬ ডিসেম্বর আদালতে মামলা করেন জাফর সাদিক। গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় রাগীব আলীর ঠিকানা হিসেবে সিলেটের মালনীছড়া চা বাগানের বাংলোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সিলেট পুলিশ সুপার বরাবরে প্রেরিত পরোয়ানার উল্লেখ করা হয়েছে- ‘এতদ্বারা আদেশ করা যাইতেছে যে আপনি আসামিকে ধরিয়া আমার নিকটে উপস্থিত করিবেন। ইহাতে ত্রুটি না হয়।’সিলেটের এক আলোচিত সমালোিচত ব্যবসায়ী রাগীব আলী। সিলেটের দেবোত্তোর সম্পত্তি তারাপুর চা বাগান প্রতারণার মাধ্যমে দখল করে তিনি ব্যাপকভাবে সমালোচিত হন। তারাপুর সংক্রান্ত দুটি মামলায় ১৪ ও ৭ বছরের সাজা হয়েছে রাগীব আলীর। এসব মামলায় প্রায় একবছর জেল খেটে বর্তমানে জামিনে রয়েছেন তিনি। আদালত সূত্রে জানা যায়, দেবোত্তর সম্পত্তির তারাপুর চা-বাগান জালিয়াতি ও প্রতারণা করে বাগান দখল নেওয়ার অভিযোগ ওঠে রাগীব আলীর বিরুদ্ধে। এ অভিযোগে ১৯৯৯ সালে ভূমি মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি রাগীব আলীর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। ২০০৫ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক (চিঠি) জালিয়াতির অভিযোগে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন তৎকালীন ভূমি কমিশনার (এসিল্যান্ড) এস এম আবদুল কাদের।
মামলায় ৪২২ দশমিক ৯৬ একর জায়গায় গড়ে ওঠা সিলেটের দেবোত্তর সম্পত্তি তারাপুর চা-বাগানের জমি আত্মসাতের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক (চিঠি) জাল করার অভিযোগ আনা হয়ে রাগীব আলী ও তার ছেলের বিরুদ্ধে। তবে রাগীব আলীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলা উচ্চ আদালতে নিষ্পত্তি হয়। কিন্তু সরকারপক্ষ আপিল করলে প্রায় এক যুগ পর প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ ২০১৬ সালের ১৯ জানুয়ারি রাগীব আলীর বিরুদ্ধে মামলা পুনরায় চালুর নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে তারাপুর চা-বাগান প্রকৃত মালিকের জিম্মায় দেওয়া ও দখল করে গড়ে ওঠা সব স্থাপনা ছয় মাসের মধ্যে সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়।ওই আদেশের পর ২০১৬ সালের ১৫ মে চা-বাগানের বিভিন্ন স্থাপনা ছাড়াও ৩২৩ একর ভূমি দেবোত্তর সম্পত্তির সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্তকে বুঝিয়ে দেয় জেলা প্রশাসন। ২০১৬ সালের ১০ জুলাই পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্ত করে দুটো মামলায় রাগীব আলী ও তার ছেলেকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। এরপর ২০১৭ সালের ১০ আগস্ট গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে রাগীব আলী ছেলেকে নিয়ে সিলেটের জকিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে সপরিবারে ভারতে পালিয়ে যান।
পালিয়ে ভারতে অবস্থানকালে ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে ওই বছরের ১২ নভেম্বর জকিগঞ্জ ইমিগ্রেশন হয়ে বাংলাদেশে এলে আবদুল হাই গ্রেপ্তার হন। ২৪ নভেম্বর ভারতের করিমগঞ্জ পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন রাগীব আলী। ওই দিনই বিয়ানীবাজারের সুতারকান্দি সীমান্ত দিয়ে তাকে দেশে এনে কারাগারে পাঠানো হয়। ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক (চিঠি) জালিয়াতির করে তারাপুর চা-বাগান দখলের মামলায় ২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি সিলেটের তৎকালীন মুখ্য মহানগর হাকিম মো. সাইফুজ্জামান হিরো রাগীব আলী ও তার ছেলে আবদুল হাইকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন। ওই বছরের ৬ এপ্রিল তারাপুর চা-বাগান দখল করে সরকারের হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অপর আরেক মামলার রায়ে রাগীব আলী ও ছেলেমেয়েসহ পাঁচজনের সাত বছরের কারাদণ্ড হয়।
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
৪৯ বার