এমআইটিতে বাংলাদেশি অভিবাসী তাফসিয়া
যুক্তরাজ্যের লন্ডনে বসবাসরত নিম্ন আয়ের একটি বাংলাদেশি অভিবাসী পরিবারের মেয়ে তাফসিয়া শিকদার। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি)-তে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। বোস্টনভিত্তিক এমআইটিতে তাফসিয়া প্রকৌশল ও পদার্থ বিদ্যায় অধ্যয়ন করবেন। ১৯৯০ সালে তাফসিয়ার পরিবার বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে আসেন। তার বাবা একজন আইটি কর্মী ও মা স্কুলের সুপারভাইজার। তার দুজন বড় ও একজন ছোট ভাই রয়েছে। ওয়েস্ট হামের তিন বেডরুমের একটি বাড়িতে বসবাস করে তাফসিয়ার পরিবার। শিগগিরই গণিত, উচ্চতর গণিত, পদার্থ, রসায়ন ও জীববিজ্ঞান বিষয়ে এ লেবেল পরীক্ষা দেবেন তাফসিয়া।কলেজ জীবনেই তাফসিয়া জাপানের নাগোয়া শহরে পরিবেশবিষয়ক কর্মসূচিতে অংশ গ্রহণ করেছেন।
এমআইটি বিশ্বের সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর একটি। র্যাংকিংয়ের দিক থেকে বিশ্বের সেরা ৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রয়েছে এমআইটি। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পড়াশোনা করেছেন অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি। নোবেল পুরস্কারজয়ী ৭৬ জন বিদ্বান লেখাপড়া করেছেন এমআইটিতে। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান ও চাঁদে প্রথম অবতরণ করা মানুষ বাজ আলড্রিনও এমআইটিতেই পড়াশোনা করেছেন। তাফসিয়া এসব বিখ্যাত ব্যক্তিদের পদাঙ্ক অনুসরন করবেন।
এমআইটিতে অধ্যয়নের বিষয়ে তাসফিয়া শিকদার বলেন, ‘এখানে অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি অধ্যয়ন করেছেন। বিখ্যাত এসব ব্যক্তিদের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে পারাই অনেক বড় অনুপ্রেরণা। এটা আপনাকে বিশেষ কিছু করতে পারার আত্মবিশ্বাস দেবে।’ তাফসিয়া আরও বলেন, ‘আমি অর্থবহ কিছু গবেষণা করতে চাই। পরিবেশগত বিষয় নিয়ে কাজ করার আগ্রহ রয়েছে আমার। দীর্ঘদিন ধরেই নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা আমার রয়েছে।’ যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর টিউশন ফি অনেক ব্যয়বহুল। তবে তাফসিয়ার পরিবারের আয় ৩০ হাজার ব্রিটিশ পাউন্ডের চেয়ে কম হওয়াতে তিনি টিউশন ফি, আবাসন ও বই কেনার জন্য ২ লাখ পাউন্ডের আর্থিক সহযোগিতা পাবেন। তাফসিয়া বর্তমানে ইস্ট লন্ডনের নিউহাম কলেজিয়েট সিক্সথ ফর্ম সেন্টারে পড়াশোনা করছেন। তিনি জানান, বড় স্বপ্ন দেখতে সংকোচ বোধ করা উচিত নয়। বলেন, “নিউহ্যামের বাসিন্দাদের মাথা থেকে একটি কথা ঝেড়ে ফেলা উচিত, তা হচ্ছে ‘আমি পারব না’। নিজেকে অনুপ্রাণিত করার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হচ্ছে সম্ভাব্য সবচেয়ে বড় স্বপ্ন দেখা। নিজেকে বলুন, ‘কেন আমি নই’। স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য শ্রম এবং প্রয়োজনীয় ধাপগুলো অতিক্রম করতে হবে। আপনি যদি জ্যোতির্বিদ হতে চান তাহলে পদার্থ বিষয়ে পড়াশোনা করতে হবে। এটাই হবে প্রথম পদক্ষেপ। যারা বিখ্যাত হয়েছেন তারা আপনার চেয়ে কোনও অংশে মহান কিছু না।”
সমস্যা সমাধানে অনন্য দক্ষতার কারণে ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটির উইম্যান ইন এসটিইএম সামার স্কুল-এ নির্বাচিত হন তাফসিয়া। প্রাক-বাছাইয়ে পদার্থ বিজ্ঞানে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছিলেন তিনি। এমআইটির পক্ষ থেকে ভর্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে তাফসিয়াকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাছাই প্রক্রিয়ায় ইনস্টিটিউটের ইতিহাসে আপনি সবচেয়ে প্রতিভাবান ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের একজন… আমরা মনে করি আপনি ও এমআইটির সেতুবন্ধন হবে উৎকৃষ্ট।’