দীর্ঘদিন মামলা-মোকদ্দমা আর হয়রানির পর অবশেষে এমপিওভুক্ত হলেন ডিগ্রি কলেজের তৃতীয় শিক্ষকরা। তাদের এমপিওভুক্তির আদেশ দিয়ে সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) প্রজ্ঞাপন জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিষয়টি নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতি পেয়ে এই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
এসকল শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করায় বছরে ২৫ কোটির বেশি টাকা খরচ হবে। তবে এক দশকের বেশি সময় বিনা বেতনে চাকরি করা শিক্ষকদের মানবেতর জীবন যাপনের অবসান হবে।nশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপ-সচিব মো. কামরুল হাসান স্বাক্ষরিত এ প্রজ্ঞাপনে ৪ শর্তে এই ৮৪১ শিক্ষকের এমপিওভুক্তির আদেশ জারি করা হয়েছে।
যেসব শর্তে এমপিওভুক্ত হলেন তারা
* সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ডিগ্রি স্তরটি সরকারি এমপিওভুক্ত হতে হবে।
* এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী তৃতীয় শিক্ষক নিয়োগকালীন যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা থাকতে হবে
* নিয়োগকালীন বিধি মোতাবেক নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে কর্মরত হতে হবে।
* ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখের মধ্যে নিয়োগপ্রাপ্তদের এমপিওভুক্ত করতে হবে এবং আগে তৃতীয় শিক্ষক নিয়োগ করা হয়নি এমন কোনো প্রতিষ্ঠানে নতুন করে তৃতীয় শিক্ষক নিয়োগ করা যাবে না।
তার আগে গত ২ আগস্ট অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়। সেই প্রস্তাবে বলা হয়, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল-কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ডিগ্রি স্তরের প্রতিটি ঐচ্ছিক বিষয়ে দুজন শিক্ষকের নিয়োগসহ এমপিওভুক্তির বিধান রয়েছে। অপরদিকে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রণীত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অধিভুক্তি সংক্রান্ত রেগুলেশন অনুযায়ী ডিগ্রি স্তরে প্রতি ঐচ্ছিক বিষয়ে তিনজন শিক্ষক নিয়োগের বিধান আছে। এ বিধান থাকলেও তৃতীয় শিক্ষককে এমপিওভুক্ত করা হয় না।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আদেশ অনুযায়ী, ২০১৮ সালের ২ জানুয়ারি ডিগ্রি স্তরের ১৫৩ তৃতীয় শিক্ষককে এমপিওভুক্ত করা হয়। একই বছরের ২৮ আগস্ট ২০১০ সাল পর্যন্ত বিধি মোতাবেক নিয়োগপ্রাপ্ত তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির আদেশ জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে অধিকাংশ তৃতীয় শিক্ষক এমপিওভুক্ত হয়েছেন।
অপরদিকে, ২০১০ সালের পর বিভিন্ন ডিগ্রি কলেজে নিয়োগপ্রাপ্ত আনুমানিক ৮৪১ তৃতীয় শিক্ষক রয়েছেন। তারা এখন পর্যন্ত এমপিওভুক্ত হতে পারেননি। এ শিক্ষকরা অর্থ বিভাগ কর্তৃক জনবল কাঠামোভুক্ত নন। এ কারণে তৃতীয় শিক্ষকদের যোগ্যতা ও বিধি মোতাবেক নিয়োগপ্রাপ্ত ও কর্মরত থাকা সাপেক্ষে এমপিওভুক্তিকরণে সম্মতির অনুরোধ জানিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক) ডা. সৈয়দ ইমামুল হোসেন বলেন, তৃতীয় শিক্ষক পদটি রেগুলার এমপিওভুক্ত পদ নয়। তাদের এমপিওভুক্ত করতে হলে আর্থিক বিষয়টির কথা আসে। তাই অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতির জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছিল। অর্থ মন্ত্রণায়ের অনুমোদন পাওয়ার পর তাদের এমপিওভুক্ত করা প্রস্তুতি শুরু করেছি।
জনবল কাঠামোতে তৃতীয় শিক্ষকের পদ না থাকলেও এমপিওভুক্তির উদ্যোগ কেন নেওয়া হয়েছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী ডিগ্রি স্তরের প্রতিটি ঐচ্ছিক বিষয়ে তিনজন শিক্ষক নিয়মের বিধান আছে। এছাড়া গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করতে তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী, ডিগ্রি পর্যায়ে প্রতিটি ঐচ্ছিক বিষয়ে অনুমোদন পেতে হলে তিনজন শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। বিষয়প্রতি তিনজন শিক্ষক নিয়োগ না দিলে প্রতিষ্ঠানের অধিভুক্তি নবায়ন পর্যন্ত করে না। ফলে নিরুপায় হয়ে ডিগ্রি কলেজগুলো বিষয়প্রতি তিনজন শিক্ষক নিয়োগ দেয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় দুই জন শিক্ষককে এমপিওভুক্ত করে। ফলে অপর শিক্ষক নিয়মিত পাঠদান করেও সরকারি সুবিধা পান না। অনেক কলেজে নামমাত্র বেতন দিলেও তারা মানবেতর জীবন যাপন করেন। দীর্ঘদিন ধরেই এ শিক্ষকরা আন্দোলন করছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৯৯৮ সাল থেকে ডিগ্রি পর্যায়ের তৃতীয় শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া শুরু হয়। ২০১১ সাল পর্যন্ত এ শিক্ষকদের নিয়মিত এমপিওভুক্তি দেওয়া হতো। কিন্তু ২০১১ সালের ১১ নভেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় নন-এমপিও শিক্ষকদের নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে।
মাউশির মতামতে, এমপিওভুক্ত ডিগ্রি কলেজের জনবলকাঠামো-২০১০ প্রকাশের পর বিধি মোতাবেক তৃতীয় শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ৮৪১ জন। তাদের এমপিওভুক্ত করা হলে সরকারের বার্ষিক ২৫ কোটি এক লাখ ১৩ হাজার ৪০০ টাকা ব্যয় হবে।
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
১২২ বার