হুমায়ূন রশিদ চৌধূরী–সিলেট এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার আসামিদের ডিএনএ রিপোর্ট অবশেষে পুলিশের হাতে এসেছে। জানা গেছে, ধর্ষণ ঘটনার সঙ্গে প্রায় সব আসামিরই সংশ্লিষ্টতা মিলেছে। ডিএনএ রিপোর্ট প্রাপ্তির বিষয়টি গতকাল সোমবার নিশ্চিত করেছেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) বি এম আশরাফ উল্যাহ তাহের। তবে ধর্ষণ ঘটনার সঙ্গে কোন কোন আসামির সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে, সেটি বলেননি। তিনি বলেছেন, আদালতে রিপোর্ট জমা দেওয়ার পরই সেটি প্রকাশিত হবে। তিনি জানান, ডিএনএ রিপোর্ট পাওয়ায় এখন খুব দ্রুত চার্জশিট দেওয়া হবে। এদিকে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, প্রাপ্ত ডিএনএ রিপোর্টের ভিত্তিতে ধর্ষণ ঘটনার সঙ্গে আসামি তারেকুল ইসলাম তারেক, শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনি, অর্জুন লস্কর এবং সাইফুর রহমানের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। সন্দেহভাজন আসামি মিসবাউর রহমান রাজন ও আইনুদ্দিনের ধর্ষণের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে মিশ্র তথ্য পাওয়া গেছে। আর আসামি রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমান মাসুমের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি নিশ্চিত নয়। এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে ধর্ষণ ঘটনার পর প্রায় দুই মাস পেরিয়ে গেলেও ডিএনএ রিপোর্ট না আসায় এতদিন সিলেটে জনমনে তীব্র অসন্তোষ বিরাজ করছিল। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ডিএনএ রিপোর্ট আসায় এবং ধর্ষণের সঙ্গে আসামিদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় তাদের শাস্তির বিষয়ে কিছুটা হলেও আশার আলো দেখা দিয়েছে।
গত ১ অক্টোবর ও ৩ অক্টোবর দুই দিনে এ মামলায় গ্রেফতারকৃত আট জন আসামির ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নমুনা সংগ্রহের পর পাঠানো হয় ঢাকার ল্যাবে। সেখান থেকে নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট প্রথমে আদালতে এসে পৌঁছায়। পরবর্তী সময় এ রিপোর্ট তদন্ত কর্মকর্তার হাতে আসে। গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে সিলেটে এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন এক গৃহবধূ (২৫)। নবদম্পতিকে ছাত্রাবাসে নিয়ে স্বামীকে বেঁধে স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ঘটনার পর ঐ রাতেই নির্যাতিতার স্বামী বাদী হয়ে শাহপরান থানায় মামলা করেন। মামলায় পাঁচ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা তিন-চার জনকে আসামি করা হয়। আসামিরা হলেন—সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার উমেদনগরের রফিকুল ইসলামের ছেলে তারেকুল ইসলাম তারেক (২৮), হবিগঞ্জ সদরের বাগুনীপাড়ার মো. জাহাঙ্গীর মিয়ার ছেলে শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনি (২৫), জকিগঞ্জের আটগ্রামের কানু লস্করের ছেলে অর্জুন লস্কর (২৫), দিরাই উপজেলার বড়নগদীপুর (জগদল) গ্রামের রবিউল ইসলাম (২৫) ও কানাইঘাটের গাছবাড়ী গ্রামের মাহফুজুর রহমান মাসুম (২৫)। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আরো তিন জনকে আসামি করা হয়।
ঘটনার পর আসামিরা পালিয়ে গেলেও তিন দিনের মধ্যে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন স্থান থেকে এজাহারভুক্ত আসামি সাইফুর রহমান, তারেকুল ইসলাম তারেক, মাহবুবুর রহমান রনি, অর্জুন লস্কর, রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমান মাসুম এবং সন্দেহভাজন আসামি মিসবাউর রহমান রাজন ও আইনুদ্দিনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ও ক্যাডার। তাদের প্রত্যেককে পাঁচ দিন করে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। রিমান্ড শেষে সবাই ধর্ষণের দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। অন্যদিকে ঘটনার রাতে এমসি কলেজে ছাত্রাবাসে সাইফুর রহমানের দখলে থাকা হোস্টেল ছাত্রাবাসের কক্ষে অভিযান চালিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে সাইফুরের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা করলেও ঐ মামলার অভিযোগপত্র এখনো দেওয়া হয়নি।
গণধর্ষণের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত শেষে এরই মধ্যে হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও মহি উদ্দিন শামিম গঠিত বেঞ্চে একটি প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া গণধর্ষণের এ ঘটনার পর কলেজ কর্তৃপক্ষ থেকে ২৬ অক্টোবর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরবর্তী সময় তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। অবশ্য তা এখনো প্রকাশ হয়নি। ঘটনার কয়েকদিন পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ঐ গণধর্ষণের ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি এমসি কলেজে আসে। তদন্ত শেষে তারা তাদের প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে বলে সূত্র জানায়। গৃহবধূকে গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িত চার আসামির ছাত্রত্ব এবং সার্টিফিকেট বাতিল করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। তাদের স্থায়ীভাবে এমসি কলেজ থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছে। বহিষ্কৃতরা হলেন— সাইফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, মাহফুজুর রহমান মাসুম ও রবিউল হাসান।
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
৪৪ বার